বুলেট! বুলেট! গুলি আর গুলি। জামিয়ায় গুলি, জলঙ্গীতে গুলি, শাহিন বাগে গুলি।গুলি ঘিরে ফেলেছে টুকুনকে….

বুলেট ব্যূহে টুকুন
তমাল সাহা

টুকুন এবার ভীষণরকম টাইট। সে অত্যন্ত মুসড়িইয়া পড়িয়াছে এবং ফ্যাসাদে পড়িয়াছে।
সকাল হইতেই টুকুন আমার নিকট গোমড়া মুখ লইয়া আসিল। আমি তখন এক কাপ চা লইয়া সংবাদপত্র পড়িতেছি। আমি একটু আড়চোখে তাহার মুখটি দেখিয়া লইলাম।

বাবা, কত ইংরেজি, বাংলা রচনা বই খুঁজলাম বুলেট বা গুলি রচনাটি পেলাম না। তোমাকে লিখে দিতে হবে।

আমার মস্তকে বজ্রপাত হইল। আমি তো জীবনে কোনদিনও ভাবি নাই গুলি একটি বিষয়,তাহা লইয়া রচনা লেখা যাইতে পারে।

আমি বলি, গুলি একটি বিজ্ঞান।

টুকুন বলে, গুলি আবার বিজ্ঞান কেন? কোনো বিজ্ঞান বইতে তো গুলির উল্লেখ নেই।

আমি বলি, ধৈর্য ধরো, আমার কথা শোনো।
গুলি একটি ধাতব বস্তু এটা তামা সীসে বা পেতলের হতে পারে।

বাবা, আমাকে গুলি দেখাবে?

উফ্, আগে শোনো।এইসব ধাতুগুলো পদার্থবিদ্যার সঙ্গে জড়িত। ‌ গুলি নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনে চলে।
গুলির সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রের সম্পর্ক। গুলি ছুড়লে আগুন ও শব্দ যুগপৎ নির্গত হয়। গুলি সম্বন্ধে এবং তার বাস্তব প্রয়োগ ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের ভূমিপুত্র রিভলবার মাস্টার বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন, বুড়িবালাম যুদ্ধের নেতা বাঘাযতীন, এমনকি অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কাছে যেতে হবে।
তুমি ডালহৌসি স্কোয়ারে বিনয় বাদল দীনেশের মূর্তি দেখেছো! পূর্ণাবয়ব মূর্তি। তাদের কাছেও যেতে পারো। ‌কারণ, গুলি সম্বন্ধে তাদের বাস্তব জ্ঞান অভিজ্ঞতা রয়েছে।

টুকুন বলে, ধর্ম-মস্তান রামভক্ত গোপাল বা শাহিনবাগ বিরোধী কপিলে গুর্জরের কাছে গেলে হবে না?

আমি বলি হবে না। গুলির চরিত্র আছে। ‌ গুলির মান সম্মান আছে। সবার হাতে গুলি খাওয়া মানায় না। ‌ যে ইচ্ছে সে গুলি স্পর্শ করুক গুলি নিজেও এটা চায়না। গুলি এর বিরোধী। কিন্তু এই রাষ্ট্রে বেআইনিভাবে এইসব ঘটে যায়।
গুলির একটি দুঃখ আছে। মস্তানরা, বন্দুকবাজরা নিজের স্বার্থে গুলি করে। প্রোমোটারদের হাতেও আজকাল পিস্তল থাকে। তারা অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে গুলি করে মেরেছে। তুইতো সংবাদপত্রে দেখেছিস। পুরনো বাড়ির দখল নিয়ে ফ্ল্যাট বাড়ি বানাবে। অপরাজনৈতিক দল, তাদের বাহিনীর হাতেও পিস্তল থাকে।
একে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন না বলে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি বলাই ভালো।গুলি চায়না ঐ সমস্ত পিস্তলবাজদের হাতে গুলি থাকুক। এটা তাদের কাছে অসম্মান।

বাবা, দু একটা দুর্বৃত্তপোষা রাজনৈতিক দলের উদাহরণ দেবে?

তুই তো হিটলারের নাম শুনেছিস! হিটলারের নাৎসি বাহিনী।

টুকুন বলে,না,না। সে তো আমি জানি।বইতে পড়েছি। আমি বলছি, আমি চাইছি আমাদের দেশের উদাহরণ।

আমি বলি,এটি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে টুকুন!
যাক,ছাড়ো ওসব।
গুলিতে নিহত হয়েছে অনেক সংগ্রামী যোদ্ধা। ‌ তারা শহীদ হয়েছেন। গুলির দুঃখ, শহীদের নাম হয়েছে, ঘাতকের নামও লাইমলাইটে এসেছে। কিন্তু গুলিকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। গুলি বলে, আমাদের না খেলে কি আর শহীদরা সম্মান পেত ? ব্ল্যাকরেঞ্জ পয়েন্ট শব্দটা আমরা না থাকলে সৃষ্টিই হতো না। অনেক সময় মরেছে কিনা সন্দেহ দূর করার জন্য অসংখ্য গুলি করা হয়।

অনথাকলে আমাদের হাতে নিহত হওয়ার কারণেই তো তারা শহীদের মর্যাদা পায়। তাহলে বোঝো,আমরা না থাকলে শহীদ দিবস পালন করা তো দূরের কথা শহীদ দিবস শব্দবন্ধটাই উঠে যেত‌।
অথচ গুলির কথা বলে না কেউ।