অবতক খবর,২২ ফেব্রুয়ারি: পৌরসভা নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। ১২ই এপ্রিল কলকাতা-হাওড়া কর্পোরেশন এবং অন্যান্য জেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমায় আটটি পৌরসভার নির্বাচন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কেন? এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
ব্যারাকপুর মহকুমা শ্রমিক অধ্যুষিত অঞ্চল। ব্যারাকপুর মহকুমাকে মিনি ভারতবর্ষ বলা যায়। এখানে সমস্ত প্রদেশের এবং সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষের বসবাস রয়েছে। হুগলি নদীর তীরবর্তী অঞ্চল জুড়ে যে চটকল গড়ে উঠেছে, যদিও সেই চটকল শিল্প আজ ভাঙনের মুখে। সেই ব্যাপক অঞ্চল মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল। ব্যারাকপুর মহকুমার রাজনীতি অন্য অঞ্চলের চেয়ে একটু অন্য খাতে বয়ে চলে। এখানকার নির্বাচনে অর্থাৎ ভোটবাজিতে ধর্মীয় তোষণ উল্লেখযোগ্য।
ব্যারাকপুর মহাকুমার রাজনীতিতে গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চল জুড়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে চোরাস্রোতের মতো গেরুয়া প্রবাহ চলছে। এখানে তৃণমূলের যিনি পোড়খাওয়া নেতা ছিলেন সেই পোড়খাওয়া নেতা অর্জুন সিং সদলে বিজেপিতে যোগদান করার পর এই অঞ্চলটি ‘কোট আনকোট’ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এর আগে এই অঞ্চলে নৈরাজ্য-অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। বোমাবাজি,কয়েকটি খুন তো ঘটে গিয়েছেই, দীর্ঘ মাস এখানে একটা সন্ত্রাসজনক পরিস্থিতি ছিল। শেষ পর্যন্ত নতুন কমিশনারেট মনোজ ভার্মাকে এখানে নিয়োগ করতে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের দেবকে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটি একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। এক কথায় এই অঞ্চলে আপাতত কর্পোরেশন গঠন করে নির্বাচন করার পরিকাঠামোই নেই।
অন্যদিকে তৃণমূল রাজনৈতিক দলটির মধ্যেও এখানে ব্যাপক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। কে কখন তৃণমূলে আছেন, কে কখন বিজেপিতে যাচ্ছেন অথবা উপরে সবুজ ভেতরে গেরুয়া,আবার অনেকে আছেন উপরে গেরুয়া ভিতরে তৃণমূলী, অদ্ভুত সংমিশ্রণ এই ব্যারাকপুর মহকুমা জুড়ে। বীজপুর অঞ্চলে উচ্চ নেতৃত্ব থেকে নেতা ঘোষিত হলেও সাংগঠনিকভাবে সেই নেতারা কার্যকরী ভূমিকায় নেই। কারণ এখানে রয়েছে গোষ্ঠীবাজি। প্রকৃত নেতা কে? কিভাবে শহর চলছে এটা ঈশ্বরই জানেন! আসলে এটা স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। কিন্তু গতি স্বাভাবিক বললেও স্বাভাবিক নয়। কারণ যেহেতু নাম কা ওয়াস্তে নেতা থাকলেও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এত নেতা তৈরি হয়েছে তারা বিভিন্নভাবে কামাইবাজি করে চলেছে। ফলে একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশেষ করে কাঁচরাপাড়া অঞ্চলে।
সুপ্রিমো যতই বলুক হালিশহর-কাঁচরাপাড়ায় পুকুর ভরাট চলছেই,সরকারি জমির দখলদারি চলছেই। এ ব্যাপারে দুই পৌর প্রশাসন ও থানা প্রশাসন নীরব।
যাই হোক, বিজেপি নেতারা স্পষ্টাস্পষ্টি বলছেন, ব্যারাকপুর মহকুমায় তৃণমূলের পৌর নির্বাচন করার ক্ষমতা বা সাহস নেই। এখানে গেরুয়া প্রবাহ অর্থাৎ আমরা বিজেপিরা যেভাবে সংগঠিত হচ্ছি সেহেতু তারা এখানে নির্বাচন ঘোষণা করতে পিছিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। সুতরাং এই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ নেতৃত্ব বিশেষভাবে চিন্তা করেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের উল্লেখযোগ্য পরাজয়, তৃণমূল সুপ্রিমোকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সেইজন্য আপাতত ব্যারাকপুর মহকুমায় নির্বাচন হচ্ছে না।