রাজীব মুখার্জী :: অবতক খবর :: হাওড়া :: করোনার আবহের জেরে দেশজোড়া লকডাউন। এরইমধ্যে ভারত চীন সীমান্তে দুইদেশের উষ্ণ সম্পর্কের জের। এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে চরম বিপাকে হাওড়ার ধুলাগড়ি র কাছে মোল্লাপাড়ার রাখি শিল্পীরা। কর্মহীনতায় ভুগছে গোটা গ্রাম। তাই ভাতৃ বন্ধন উৎসবের আগে সেই চেনা ব্যস্ততা হারিয়েছে গ্রামের শিল্পীরা। এই বছরে নেই সেই লাইন দিয়ে রাখি তৈরির ব্যস্ততা। এবারে নেই আগের বছরের মতো অর্ডার। রাখি বন্ধনের আগে যে গ্রাম চরম কর্ম ব্যস্ততায় মগ্ন হয়ে থাকতো। এই বছরে সেই গ্রাম আজ নিস্তব্ধ। এই সময়ে অন্য বছরে গ্রামের একশো জনের বেশি মহিলা ও পুরুষেরা ঘর প্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকার ব্যবসা করতো। এই বছরে সেই ব্যবসা ৫০ হাজারও ছাড়ায়নি। এই বছরে রাখির চাহিদায় ভাঁটা পড়েছে অভূতপূর্ব ভাবে। ফলে শ্রমিকদের মাইনে দিয়ে কানাকড়ি লভ্যাংশ ঘরে তুলতে পারেনি তারা। এইভাবে চলতে থাকলে এই ব্যবসা কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন সেই নিয়ে চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে।
অন্যদিকে এখন থেকে রাখি নিয়ে গিয়ে যারা ছোট ছোট দোকানে সাপ্লাই করেন চীনা মাল ব্যবহার না করে দেশীয় সামগ্রী দিয়ে রাখি তৈরি করতে কারিগরদের যে পরিমান মজুরি দিতে হচ্ছে তাতে সেই রাখি কিনে বিক্রি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তারা। তাই এই দামে রাখি কিনলে টা বাড়িতেই পরে থাকবে, বিক্রি হবে না। তাই সেই ঝুঁকিটা তারা নিতে চাইছেন না। আর এই লকডাউন কতদিন চলবে তা ভেবে এই বছরে ব্যবসা করতে পারছেন না তারা।
ফলে ভাতৃত্বের বন্ধনের এই উৎসবে গোটা দেশ যেখানে মেতে ওঠে সেই বন্ধন এবারে কতটা কার্যকর হবে সেই নিয়ে সন্দিহান তারা।
তাই দুপক্ষের টানাপোড়েন এবং চীনা দ্রব্যের রাখি তৈরি না করতে পেরে বিপাকে পড়েছেন শতাধিক রাখি শিল্পীরা। শিল্পীরা জানাচ্ছেন করোনা আবহে লকডাউনের জন্য রাখি তৈরির কাঁচামাল কেনার সুযোগ তারা পান নি। সেই সঙ্গে ভাঙা ভাঙা লকডাউনের জন্য বিক্রির ব্যবস্থাও নেই এই বছরে।
তাই বিক্রির পরিমান এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ৩০%-৩৫% এ। আগে যে রাখি তৈরি করতে ৫-৬ টাকা লাগতো এখন দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি করতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে রাখি তৈরিতে। সেই সঙ্গে রয়েছে শ্রমিকদের মজুরি। ফলে কম দামে রাখি বিক্রি করতে ও বিক্রি করতে উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা উভয়পক্ষই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
পরিশেষে ভাতৃত্বের বন্ধনের যে আনন্দে গোটা দেশ মেতে ওঠে সেই বন্ধন কতটা মজবুত হবে তা সময় বলবে। রাখি ব্যবসার সাথে যুক্ত কারিগর ও সাপ্লায়ারদের সম্পর্ক যে মজবুত নয় টা বলাই বাহুল্য।
ভারত- চীন উষ্ণ সম্পর্ক অন্যান্য ছোট ছোট ক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি করেছে। সেই সমস্যা এখন এক চরম অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে রাখি ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ।