অবতক খবর,২৫ মে: কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই ক্ষুব্ধ। যদিও প্রশাসনিকভাবে দোকানপাট খোলার একটা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই জন্য নগর প্রশাসন এবং থানা প্রশাসনকে তারা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ভেতরে রয়েছে একটা সঞ্চিত ক্ষোভ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে যে তারা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন যে,মদ ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন দোকান খোলা রাখবেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন খোলা থাকবে সেই দোকান। তাদের আর্থিক উপার্জন বাড়তে থাকবে। কিন্তু অন্যান্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের তাদের দোকান নির্দিষ্ট নিয়ম মাফিক খুলতে হবে কতদিন অন্তর অন্তর, এই দ্বিচারিতা কেন? তারা প্রশ্ন তুলেছেন, সাধারণ মানুষ যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনেন মদ কি তার মধ্যে পড়ে? মদের দোকানকে এইভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে জনসাধারণের মধ্যে মদের গুরুত্ব কি বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না? এটা কি সভ্যতার সুলক্ষণ?
অন্যদিকে মানুষের যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী,যে খাদ্য সামগ্রী,যে পোশাক পরিচ্ছদ যা দরকার সেই দোকানগুলো নির্দিষ্ট দিন করে খোলা হবে, এটা কোন নিয়ম? কেন এটা হবে? তাদের মধ্যে এই প্রশ্ন।
আরো প্রশ্ন কাঁচরাপাড়া অঞ্চলে স্টেশন রোড থেকে শুরু করে বাগমোড় পর্যন্ত যে বড় বড় শপিং মল রয়েছে সেগুলো নিয়মিত খুলছে। এই শপিংমলগুলো কেন খুলবে? এই সকল শপিংমলে বিভিন্ন দ্রব্যাদি বিক্রি হয় এবং সাধারণ মানুষের শপিংমলগুলোর থেকে ক্রয় করার একটা প্রবণতার ফলে সেখানে তো সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং লংঘন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সেই বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে এই সামান্য দোকানদার যারা প্রতিনিয়ত দোকান খুলে রোজকার মতো সামান্য উপার্জন করেন তাদের প্রতি এত কড়া নজরদারি কেন?
ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ এই যে, এটা রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে তারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। কারণ কাঁচরাপাড়া যে সমস্ত দোকান রয়েছে, এক একটি বড় বড় দোকানে ১০,১২ জন থেকে ৫০,৬০ জন পর্যন্ত কর্মচারী রয়েছেন। এই দোকানের মালিকরা জানান যে তাদের প্রতিদিনের খরচই তো উঠবে না দোকান খুললে। আর এইভাবে যদি নিয়ম করে তাদের দোকান বন্ধ থাকে তাহলে এই কর্মচারীদের বেতন দেবেন কি করে?
তারা নিজেরাই ঠিক করেছেন যে যতই কষ্ট হোক তারা কোন রকম কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকে নজর দেবেন না। তাদের প্রত্যেকেরই যে জীবন ও জীবিকা রয়েছে সেটা তারা উপলব্ধি করেছেন। মালিকপক্ষ নিজেরাই বলেছেন,আমাদের জীবন ও জীবিকা আমাদের কর্মচারীদের ওপর নির্ভরশীল। তারাই তো আসলে আমাদের দোকান পরিচালনা করেন। তাদেরই যদি আমরা বাঁচিয়ে না রাখতে পারি তাহলে আমাদের দোকান চালিয়ে লাভ কি। এইভাবে যদি নির্দিষ্ট দিন করে দোকান চালু রাখা হয় তবে তো আমাদের কর্মচারীদের বেতন আমরা দিতে পারব না। এই ব্যাপারে কি প্রশাসন ওয়াকিবহাল? তারা এই দিকে নজর দিচ্ছেন না।
তারা মদের দোকানের নিরাপত্তা দিচ্ছেন, তাদের দোকানে লাইন ঠিক করছেন, সেইসব দোকানে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের গুরুত্ব কই? তারা আরো জানান যে, এটা অবৈজ্ঞানিক। সপ্তাহে তিনদিন যদি দোকান খোলা থাকে তবে তো ভিড় আরো বাড়বে। কারণ গ্রাহকরা জানেন যে এই দোকান তিন দিন খোলা থাকবে ফলে তিনদিন ব্যাপক ভিড় হবে। যদি প্রতিদিন খোলা থাকতো তাহলে তারা সুযোগ পেত যে, ঠিক আছে আজ না হয় দুদিন পরে গেলেও জিনিসটি পাওয়া যাবে। সুতরাং ভিড় কম হত। অর্থাৎ তারা বলতে চাইছেন যে, করোনার জন্য যে প্রধান ফ্যাক্টর সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, সেটির যথার্থ মান্যতা দেওয়া যেত।
প্রশাসন এই দিকটির উপর কেন নজরদারি করলেন না, এই দিকটি নিয়ে কেন ভাবলেন না? এটি তারা বুঝতে পারছেন না।
আর তারা বলছেন যে আমাদের এমনই একটি অবস্থা যে আমরা প্রশাসনের উপরেও বেশি জোর দিতে পারছি না। কারণ প্রশাসনের উপর কথা বলতে আমরা ভয় পাচ্ছি। আমরা আলোচনা করেছি কিন্তুপ্রশাসনিকভাবেই তো এই সমস্ত চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিল। কারণ এই যে দুই প্রশাসন— থানা প্রশাসন এবং নগর প্রশাসন তাদের তো দায়িত্ব কাঁচরাপাড়ার জনজীবনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখা। এই দায়িত্ব তো তাদেরই নেওয়া উচিত ছিল আগ বাড়িয়ে।