অবতক খবর, সংবাদদাতা ,ব্যারাকপুর :: ব্যারাকপুর টিটাগড়ের বিজেপির দাপুটে নেতা মানিশ শুক্লার শুটআউট মামলার প্রথম দিকে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ব্যাপক হইচই শুরু করলেও এখন তারা এই হত্যা নিয়ে আর তেমন তৎপরতা দেখাচ্ছেন না। কারণ সিআইডি একের পর এক অপরাধীদের যেভাবে গ্রেপ্তার করেছে ও হত্যার সূত্র খুঁজে বার করেছে তাতে সিবিআই তদন্তের দাবি থেকেও বিজেপি এখন প্রায় সরে এসেছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এই হত্যা মামলায় যেভাবে উদ্যোগী হয়ে মনিশ শুক্লার মৃতদেহ নিয়ে কলকাতাজুড়ে সব যাত্রা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন পরের দিকে তিনি আর এই ঘটনাকে তেমন রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তাছাড়া মানিষ শুক্লার অন্ধকার জগতের সাথে যোগাযোগ যে ছিল তা এখন তদন্ত থেকে ধীরে ধীরে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে।
তবে সিআইডির বিশেষ টিম মনীশ শুক্লার শুটআউট মামলার তদন্ত করছে তারা আরও দুই শার্প শুটার কে গ্রেফতার করেছে। যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা দুজনেই বিহার ছাপরার বাসিন্দা। দুজনেই কন্ট্রাক্ট কিলার হিসেবে কাজ করে। তবে এই দু’জনকে বিহার থেকে বা ছাপরা থেকে নয় বরং এদেরকে পাঞ্জাবের লুধিয়ানার এক গোপন ডেরা থেকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে যে এই গ্রেফতার দুজন আসামি পার্টনার জেলে বন্দী এক কুখ্যাত সুপারি কিলার সুবোধ সিং এর জন্য কাজ করেছে। তার নির্দেশেই তারা মানিষ শুক্লা কে খুন করেছে বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার দুজনের নাম রোশন যাদব ও সুধির রায়।
এই দুই শ্যুটার কে লুদিয়ানা থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে ব্যারাকপুর আনা হয় এবং আজ তাদের ব্যারাকপুর আদালতে বিচারকের সামনে তোলা হয়। বিচারক তাদের 14 দিনের পুলিশ কাস্টডি নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইডি বিশেষ টিম এই দুই খুনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের আরো চারজন সঙ্গীর খোঁজ খবর নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জানিয়ে রাখি যে টিটাগর এলাকা বিজেপি দাপুটে নেতা মনীশ শুক্লাকে গত ৪ঠা অক্টোবর তার বাড়ির কিছুটা দূরে পরপর আট-দশটি গুলি করে খুন করা হয়. খুনিরা মনীশকে খুব কাছ থেকে খুন করে বাইকে করে পালিয়ে যায়।
যেখানে মনীশ শুক্লাকে খুন করা হয়েছিল সেখান থেকে কিছুটা দূরে সুবোধ যাদব এর সাহায্যে বিহারের ৬ জন দুষ্কৃতী একটি নির্মানরত ফ্লাটের এক মাস ধরে ছিলেন। এই বিহারের ৬ জন দুষ্কৃতী মনীশ শুক্লাকে খুন করার জন্য সমস্ত ছক নিখুঁতভাবে ওই ফ্ল্যাটে বসেই তৈরি করেন। তাছাড়া তারা মনীষের হাঁটা-চলা থাকা মানুষের সঙ্গে মেলা মেশা ,হাঁটা-চলা থাকা আসা-যাওয়া সবকিছু নিয়ে খুব নিখুঁতভাবে রেকি করেছিলেন। পরে তারা ৪ঠা অক্টোবর রাত সওয়া আটটা নাগাদ মনীশকে খুব কাছ থেকে পর পর গুলি করে পালিয়ে যায়।
CID টিটাগর পৌরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক দুষ্কৃতী, সুবোধ যাদব কে গ্রেপ্তার করার পর জানতে পারে যে, সে পাটনা জেলে ডাকাতি মামলায় বন্দী কুখ্যাত সুপারি কিলার সুবোধ সিংহ এর নির্দেশেই ৬ জন ভাড়াটে খুনিদের থাকার, খাবার ও তাদের যাতায়াতের জন্য বাইকের ব্যবস্থা সবকিছু করে দিয়েছিল।
সুবোধের গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া সূত্র ধরেই খুনের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র ও সেই বাইক সিআইডি উদ্ধার করে। তাছাড়া তার দেওয়া খবর ভিত্তিতেই জেলে বন্দী সুপারী কিলার সুবোধ সিংহ থেকে পাটনা জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। সুবোধ সিং থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৬ জন কন্ট্রাক্ট কিলরের নাম ও ঠিকানা পায় CID । পরের ছয় জন থেকে দু’জনকে সিআইডি লুধিয়ানা থেকে ধরতে সক্ষম হয়েছে বাকি ৪ জনকে খুব শিঘ্রীই ধরে ফেলবে বলে সিআইডি সূত্রের দাবি।