১৬ই জুলাই ২০২২, শনিবার। মানবাধিকার কর্মী তিস্তা শীতলাবাদকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আবার উঠে এসেছে কুতুবউদ্দিন আনসারীর কথা।
মনে পড়ে সেই বীভৎস গুজরাটের নারকীয় গণহত্যা। ২০ বছর আগের কথা,সেই অসহায় চোখ বেয়ে জল, ভীত সন্ত্রস্ত সেই মুখটি গুজরাটের হত্যাকাণ্ডের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল–কুতুবউদ্দিন আনসারী। সে কি আবার রাজনৈতিক চক্করে ফেঁসে গেল!
আমার তো ছুঁচের জীবন
তমাল সাহা
দর্জি তো একজন সাদামাটা মানুষ। তার গলায় একটা মাপের ফিতে ঝোলে। তার সম্বল একটা সেলাই মেশিন,সুতোর রিল, কাঁচি, একটা স্কেল, চক, মাপ তোলার একটা খাতা এবং বসার জন্য একটা টুল। আর অবশ্যই চাই একটা গুমটি।
দর্জিকে কাটুরেও বলা যায়। দর্জি মানুষ না কাটুক, মানুষের সাইজ মতো একদম ঠিক মাপে মাপে জামা প্যান্ট বানিয়ে তাকে সাজিয়ে দেয়। দর্জি এক বিরাট শিল্পী। বড় দর্জিকে ওস্তাগর বলে। সে তো আরো বিশাল কারবারি। তার কারখানা আছে।
দর্জিও পণ্য হয়। দাঙ্গায় দর্জিকে কাজে লাগে! মনে আছে গুজরাটের দাঙ্গার কথা? সে আজ বিশ বছর পার হয়ে যায় ।
কুতুব উদ্দিন আনসারী। যে গুজরাট দাঙ্গাতে প্রতীক হয়ে উঠেছিল– হাত জোড় করে কাতর প্রার্থনা ভীত সন্ত্রস্ত অসহায় মুখ, চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে।
সে বলছে, গুজরাট সে মুম্বাই, মুম্বাই সে কলকাতা ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়েছি। ভয় লাগছে, আবার কোনো রাজনীতির চক্করে পড়ে গেলুম না তো! সিট যে আমার কতবার জবানবন্দী নিয়েছে! এখনো হয়রানি করবে?
হায়, দাঙ্গায়ও রাজনীতি আছে? সে জানায়,দাঙ্গা কি পণ্য হতে পারে? দাঙ্গায় বিধ্বস্ত মানুষ কি পণ্য হতে পারে? আমি কি পণ্য? সবাই আমাকে ব্যবহার করে নিল,আমি তো সেই দর্জিই আছি। খুদার কসম, আমি কি কোন অন্যায় করেছি?
আমার তো সেই ছুঁচের জীবন,আমার তো সেলাই ফোঁড়াইয়ের জীবন।
এখন আমাকে কি ছুঁচে গেঁথে তুলবে এই মানব কল্যাণকর ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র?
আমার যে ধর্ম নেই জাত নেই, আমি তো মানুষ।আমার পাশে তোমরা দাঁড়াবে তো?