আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: অবতক খবর :: ২১শে,নভেম্বর:: নয়াদিল্লি :: সবকিছু ঠিক থাকলে এবং শেষ মুহূর্তে কোনো বিপত্তি না ঘটলে মহারাষ্ট্রে তিন দলের জোট সরকার গঠন হতে চলেছে। আগামীকাল শুক্রবারই সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী শনিবার তিন দলের নেতারা সরকার গঠনের সম্মতি জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দেবেন।
শিবসেনার সঙ্গে সরকারের শরিক হওয়া নিয়ে তীব্র দোলাচলে থাকা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠকে বসেন। সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে সেই বৈঠকে সবদিক খতিয়ে দেখা হয়। বিজেপিকে রুখতে সরকার গঠন, নাকি নীতি আঁকড়ে শিবসেনাকে সঙ্গ না দেওয়া—কোনটি উচিত হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। দলীয় সূত্র অনুযায়ী, ঠিক হয়েছে সরকার গড়তে কংগ্রেস সহায়ক হবে। তবে কংগ্রেস সরকারের শরিক হবে নাকি বাইরে থেকে সমর্থন দেবে তা চূড়ান্ত হয়নি।
শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত আজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, শনিবার রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করে তিন দলের নেতারা সরকার গঠনের আরজি জানাবেন। তিন দল সেই সংক্রান্ত চিঠি রাজ্যপালকে দেবে। সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার বা সোমবার শপথ গ্রহণ।
সোনিয়ার বাসভবন থেকে বৈঠক শেষে বেরিয়ে কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল জানান, শুক্রবার মুম্বাইয়ে তিন দলের মধ্যে আর একটা বৈঠক হওয়ার কথা আছে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। তিনি বলেন, কিছু কিছু বিষয় নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। এনসিপি নেতা নবাব মালিক বলেছেন, এই তিন দলকে বাদ দিয়ে মহারাষ্ট্রে কোনো সরকার গঠন হতে পারে না। আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
সরকার গড়তে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ শিবসেনার। কারণ তারা জানে, অনির্দিষ্টকাল ধরে টালবাহানা চললে দল ধরে রাখা কঠিন। একই অবস্থা কিছুটা কংগ্রেসেরও। দলের সব বিধায়কই সরকার গঠনে উৎসাহী। এনসিপির মধ্যেও দোলাচল রয়েছে। বিজেপি সেই দোলাচলে কিছুটা উসকানিও দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শরদ পাওয়ারের আচমকা বৈঠক কংগ্রেসকে চিন্তায় ফেলে। এনসিপির সমর্থন থাকলে বিজেপির সরকার গঠন সম্ভব। কারণ, শিবসেনার (৫৬) চেয়ে এনসিপির আসন (৫৪) মাত্র দুটি কম। এমন কথাও রটে যায় যে, এনসিপির সমর্থন পেলে বিজেপি শরদ পাওয়ারকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি করতে পারে। পাওয়ার-মোদি বৈঠক তাই কংগ্রেসকে সচকিত করে তোলে।
বিজেপিকে রোখার সুযোগ হারানোর আশঙ্কা দলের একাংশকে চিন্তায় রেখেছে। এই মহল আজ সকালের বৈঠকে সোনিয়াকে বলেন, দেশের স্বার্থে বিজেপিকে রোখা দলের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত। তা ছাড়া, মহারাষ্ট্রে বিজেপির বিকল্প হিসেবে সরকার গড়া গেলে দেশের অন্যত্র তার প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ঝাড়খন্ড ও দিল্লিতে। দুই রাজ্যে ভোট আসন্ন। এই সরকার গড়ার অর্থ হবে এনডিএকে দুর্বল করে তোলা। তাঁরা বলেন, ইতিমধ্যেই ঝাড়খন্ডে বিজেপির শরিকেরা অন্য সুর ধরেছে।
কংগ্রেসের একাংশ অবশ্য এখনো মনে করছে নীতি বিসর্জন দিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার হাত ধরা উচিত হবে না। কেরালার নেতারা এই বিষয়ে যথেষ্ট সংশয়ী। মহারাষ্ট্রের কিছু মুসলমান নেতাও সোনিয়াকে চিঠি লিখে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মুসলমানদের মধ্যে সমর্থনের ভিত আলগা করে দেবে।
সরকার গঠন নিয়ে তিনটি বিষয় এখনো অনিশ্চিত। মিলিজুলি সরকারের মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাঁচ বছরই শিবসেনার হাতে থাকবে নাকি এনসিপির সঙ্গে ভাগাভাগি হবে। শিবসেনা মুখ্যমন্ত্রিত্ব পেলে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ অন্য দুই দল পাবে কি না। তৃতীয়ত, বিধানসভার স্পিকার পদ কোন দল পাবে। যা ইঙ্গিত তাতে মনে করা হচ্ছে, খুব সম্ভবত শুক্রবারের মধ্যেই এই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা হয়ে যাবে।