এখন রাত ১০টা ১৫। শেষ রাতলেখা।
এই মৃত্যু এখনো আমি মানতে পারি না। এরিয়ান ক্লাব সংলগ্ন ময়দান অঞ্চলটি তাঁর বধ্যভূমি ছিল। তাঁর মৃত্যুর অনেক দিন পর ওই অঞ্চলটি আমরা তিন কৌতৃহলী বন্ধু( নাম উল্লেখ করছি না) ঘুরে আসি। নির্দিষ্ট স্থানটি তো আমরা জানি না। কিন্তু ঐ ময়দানের মাটি আমরা সেদিন মাথায় স্পর্শ করে এসেছিলাম।
তাঁর হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছর, এই আগস্ট,২০২১।
৫ আগস্ট ভোর। কবি সাংবাদিক প্রাবন্ধিক রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও সক্রিয় যোদ্ধা সরোজ দত্তকে ময়দানে খতম করে তাঁর লাশ গায়েব করে দেয় রাষ্ট্রীয় ঘাতক বাহিনী।
মর্ণিংওয়াকে বেরিয়ে মহানায়ক উত্তমকুমার এই দৃশ্য দেখে আঁতকে ওঠেন এবং পুলিশি ইন্টারোগেশনের আতঙ্কে বোম্বে চলে যান।
মাঠ ও লাশের কবিতা
তমাল সাহা
কেল্লার মাঠ
মাঠটা ভোরের পর আরো বড় হয়ে গেল
মানে আমিন দলবলসহ মাঠের চৌহদ্দি দেখে তো তাজ্জব!
তারা আর মাঠের জমি জরিপ করতে পারলো না।
পরে জানা গেল, একটা লাশের কারণে মাঠটা পেল্লায় বড় হয়ে গিয়েছে,ছাড়িয়ে গিয়েছে দিগন্তরেখা।
মাঠটা থেকে ভাগীরথী নদী খুব একটা দূরে ছিল না।
বালার্ক তখনও অন্ধকারের ডিম ভেঙে ওঠেনি।
পাঁচটা গুড়ুম গুড়ুম শব্দ শুনে আঁতকে উঠলো সে।
ঘুম ভেঙে গেল তার, দপ করে উঠে পড়লো আকাশের গায়ে।
এদিক ওদিক উঁকি মারার পর নজর পড়লো তার মাঠের দিকে।
পাঁচটা শব্দ কেন?
পরে বলছি শোনো।
লাশটি পড়ে গেল মাটিতে
অনেক রাষ্ট্রীয় মস্তান ছিল দাঁড়িয়ে
আর তিনটি কালো গাড়ি ছিল দূরে।
কি হলো তারপর?
এবার কাঁধ থেকে কেটে ফেলা হলো মাথা।
মুণ্ড ও ধড় আলাদা হয়ে গেল।
কবন্ধ মূর্তি তুমি নিশ্চিত দেখেছো ইতিহাসের কণিষ্ক অধ্যায়ে।
গড়ের মাঠের চেয়েও বড় এই লাশ!
কী করবে রাষ্ট্র এখন?
এই ছোট্ট মাঠে হিমালয়ের চেয়েও বড় ভারী লাশ ধরে নাকি!
তারপর মাথা ও দেহ কোথায় গায়েব করে দিয়েছিল, তা সে দেখেনি—
এসবই আমাকে বলেছিল প্রত্যক্ষদর্শী ওই সুর্যশিশু।
পাঁচটি অগ্নিস্রাবী গুলি কেন?
পাঁচে পঞ্চবাণ–
কবির নাম ছিল পাঁচ অক্ষরের,
সরোজ দত্ত,
দেশের জন্য বলি প্রদত্ত।
দেহটি আর পাওয়া যায়নি খুঁজে
কিন্তু লেখা হয়ে গেলো ইতিহাস।
সেই থেকে শব্দবন্ধটি হয়ে উঠলো জোরালো—
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস!