মালগাড়ি, রেললাইন,মজুর ও রুটি কিভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলৈ তা শিখে যায় এই অক্ষরজীবী জীবনের শেষবেলায়।
মালগাড়ি, রেললাইন, মজুর,রুটি
তমাল সাহা
রোটি কাপড়া ঔর মকান
মকান তো তখনও অনেক দূরে।
রোটি ও কাপড়া পড়ে রইল
লাইনের উপরে,
মকান চলে গেল হাতের বাইরে।
দুনিয়ার মজদুররা তো মালগাড়ি বানায়।
মালগাড়ির চাকা থাকে
পেটভর্তি মাল থাকে
দ্রুততা থাকে গাড়ির চাকায়।
হে স্বদেশভূমি!
এমন রুটির দৃশ্য কখনও দেখেছো তুমি?
রুটি রক্ত মাখামাখি
পোড়া রুটি পড়ে আছে শক্ত হয়ে।
দূরে ছিটকে পড়ে আছে আচারের শিশি।
মহারাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রদেশআর কতদূর?
পা তো আছে,দূর এমন কি আর বেশি!
রেললাইনে কত কি ঘটে গোপনে প্রকাশ্যে।
রেললাইন সব জানে,
তার পথ তো দেশ জোড়া।
সে সাক্ষী থাকে সব ঘটনার
সেই শুধু জানে, কোথা থেকে কোথা যায়
দুনিয়ার কামগারেরা।
রেললাইনের স্লিপার বিছানা হয়—
SLIPPER — SLEEPER হয় কখন
রেললাইন হয় মাথার বালিশ!
অস্তবেলায় নতুন করে শিখি—
পরিযায়ী মজুরও হয়,
এতদিন ছিল শুধু পরিযায়ী পাখি।
কখন রেললাইনে পাতে এমন শয্যা?
দূর দূরান্তের মজুর যখন খালিপেটে হাঁটে
ফিরে পেতে চায় নিজের গৃহের ছাউনি।
আমরা তাদের কতটুকু চিনি বা জানি।
দেশে থেকেও ওরা পেটে
ভাত না পাক, পানি না পাক
পেয়ে যায় পরিযায়ী শিরোপা।
এই শ্রমিকরাই একদিন পদাতিক হবে
পা নিশ্চিত হবে রণপা।
শুধু রেললাইন জানে ট্রেন ও মালগাড়ি
হতে জানে বিশাল ঘাতক।
রাষ্ট্র সুখে থাকে
লকডাইনে দেশ, মজুরেরা মহাপাতক।
ওরা কি ফা হিয়েন,হিউয়েন সাঙ?
ওরা কি তাদের মতো পরিব্রাজক!
পায়ে হেঁটে ওরা ভারত দর্শন নয়,
এই বেহায়া পেটের জন্য শুধু ভাত খোঁজে।
আমরা তো নীরব দর্শক।
ছত্রিশ কিলোমিটার লাইন ধরে
হেঁটেছিল শ্রমজীবী মজুর।
অবসন্ন দেহ, ক্লান্তিময় মুখ
চোখে নেমে এসেছিল ঝিমুনি।
অলক্ষ্যে মৃত্যুদূত মালগাড়ি ছুটে আসছিল
হিম্মত দেখিয়ে তাদের পিষে দিতে
চক্রযানের বুক একটুও কাঁপেনি।
ছড়ানো ছিটানো শক্ত রুটিতে
এখনও লেগে আছে সোয়াদের চাটনি।
ষোলটি ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে আছে
এ কোন কুরুক্ষেত্র?
এর প্রতিশোধে কবে তৈরি হবে
স্কন্ধাবার– রণক্ষেত্র?