অবতক খবর,২৮ অক্টোবর,বাঁকুড়া:- বর্গী সরদার ভাস্কর পন্ডিত ভয় বলে উঠেছিলেন “মায়ী-ত-কালি-হ্যায়”, তারপর থেকেই সোনামুখী পৌরসভার দু নম্বর ওয়ার্ডের মায়ের নাম “মায়ী-ত-কালি”, কেন এই নামকরণ শুনুন তার ঐতিহাসিক রোমহর্ষক কাহিনী।
সালটা ছিলো ইংরেজির ১৭৪২ এবং বাংলার ১১৪৯ তখন মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পন্ডিত বর্গীদের একটা দলসহ তৎকালীন মল্লগড় অধুনা বিষ্ণুপুর থেকে আরেক মল্ল সাম্রাজ্য সোনামুখীতে আসে। বর্গীদের দল এখানে লুটপাট চালানো কর্মের জন্য বাধ্য বাদ্যভান্ড সহ ভগবান শিবের নাম উচ্চারণ করতে করতে সোনামুখীর রানীবাজারের মা কালীর মন্দিরের সামনে একদা সমবেত হয়েছিল।এখন নগরায়নের মোড়কে ঘেরা এই সোনামুখী শহর সেই সময় ঘন জঙ্গল আগাছাই পরিপুর্ণ ছিল,এই মা কালী বিরাজ করতেন গাছপালা ঘেরা এই জায়গায়।একটা সময় ছিল দিনেদুপুরেও এই মন্দিরের সামনে আসতে সাহস পেতনা।দিবালোকেও এই অঞ্চলের মানুষজন ভয়ে নিজেদের গৃহবন্দি করে রাখতেন।
একদিন লুটপাট কর্ম সুসম্পন্ন হওয়ার পর প্রণাম করছিল ,বর্গীদের দলটি আনন্দে বাজনা বাজিয়ে নাচাগানা করছিল।ঠিক সেই সময় এক বৃদ্ধ একটি প্রদীপ মায়ের ঘরের সামনে প্রদীপ রেখে,মায়ের বলিদানের যে হাড়িকাঠ ছিল সেখানে প্রণাম করছিলেন,তখন বর্গী দলের সর্দার একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত ওই বৃদ্ধকে বলি দিতে উদ্যত হলেন,কিন্তু মায়ের দৈবশক্তিতে সেই খাঁড়া আর নিচে নামলো না,কেউ যেন একটা পেছন থেকে টান দিয়ে রয়েছে বলে মনে হয়েছিল আর তার সাথে সাথেই ঘটলো আরে ঘটনা,ওই বলি দিতে উদ্যত হতে যাওয়া বর্গী সর্দার হঠাৎই তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললো।
ভাস্কর পন্ডিত বলেন তার অনুচরদের আমি কিছু কেন দেখতে পারছিনা । আমার খারা কে পেছন থেকে টেনে রেখেছে ? অনুচররা বলে উঠলো আপনার খাড়া আমরা কেউ ধরে রাখে নি । তখন আবার ভাস্কর পন্ডিত বলে উঠলো আমার সামনে যে বৃদ্ধ লোকটি প্রণাম করছিল সে কি ওই স্থানে আছে ? অনুচররা বলে হ্যাঁ উনি আছে । ভাস্কর পন্ডিত তখন ভয়ে ভীত হয়ে অনুচরদের বলতে থাকে উনাকে বল আমাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং ওই বৃদ্ধাকে বলি থেকে বিরত থাকলেন।বৃদ্ধ প্রণাম সেরে যখন উঠলেন তখন তিনি পুরো বিষয়টা বুঝতে পারলেন, তখন বর্গী সর্দার দেবীর দৈবশক্তি সম্পর্কে অবগত হলেন তখন মায়ের ঘট থেকে জল নিয়ে বর্গী সর্দারের চোখে দিতে সে তার দৃষ্টি ফিরে পেল।বর্গী সর্দার ওই বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলেন এখানে কোন দেবী বাস করেন,বৃদ্ধা উত্তর দিলেন মা কালী। তখন সাথে সাথে বর্গী সর্দার বলে উঠলেন “মায়ী-ত-কালি-হ্যায়”,তখন সর্দার জোর গলায় বলতে লাগলেন এবং বাজনা বাজাতে বললেন ” মায়ী-ত কালী হ্যায়, মায়ী- ত কালী-হ্যায় বলে”।তখনই বর্গীরা আর ওই স্থানে লুটপাট না করে বৃদ্ধকে বলেন আমার এই খাড়া দুটি আপনি রাখুন আপনাদের পুজোতে ব্যবহার করবেন এবং তারপর ওই মুরগি দলটি কাটোয়া তে চলে যায়। তখন থেকেই এই মা কালীর নাম হয় “মায়ী-ত কালী” বা “মাঁ-ই-ত কালী”। তবে আজও সেই খাড়া রয়েছে “মায়ী-ত কালী” মন্দিরে।
শতাধিক বছর ধরে নিয়ম রীতি মেনে এই কালী পূজিত হয়ে আসছে। এই কালী বিসর্জনে এক বিশেষ রীতি রয়েছে 52 জন বেহারার কাঁধে চড়ে মায়ের বিসর্জন সম্পন্ন হয় এখানে।কালী পূজা উপলক্ষে চলে নরনারায়ন সেবা এবং বস্ত্রদান। কোভিড আবহে জৌলুস কিছুটা ফিকে পড়লেও,মায়ের পুজো একইভাবে অনুষ্ঠিত হবে।সমস্ত রকম কভিক নির্দেশিকা মেনেই এ বছরের পুজোর আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা।