জেলা মুর্শিদাবাদ,গ্ৰাম হরিহরপাড়া। ব্রাত্য
পুরোহিত সুভাষ রায় চৌধুরী। দোষ তার একটি মুসলিম তরুণী সখিনা বিবিকে দিয়েছেন আশ্রয়। এটা তার জীবনের জয় না চরম পরাজয়, শুনুন….
মুখ ও মুখোশ
তমাল সাহা
টুকুন বলে, বাবা! ব্রাহ্মণ মানে কি?
আমি বলি, ব্রহ্মজ্ঞান আছে যার সেই ব্রাহ্মণ।
টুকুন বলে,তাহলে বাড়ুজ্জে,চাটুজ্জে,মুখুজ্জে এইসব পদবিওয়ালাদের শুধু ব্রাহ্মণ বলা হয় কেন?
আমি বলি,ওসব ফালতু ব্রাহ্মণ।
ব্রহ্মাণ্ড তো পৃথিবী অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ড ও মানুষ সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে তারাই ব্রাহ্মণ।
টুকুন বলে, তাহলে তো সেসব মানুষই ব্রাহ্মণ!
যারা মানুষকে ভালোবাসে, মানুষের পাশে থাকে, মানুষের দুঃখ বোঝে।
আমি বলি, তুই তো ঠিকই বলেছিস।
টুকুন বলে, যাদের পৈতে আছে তারা ওই যে একগাছি সুতো, যাদের কাঁধ বেয়ে ঘাড় ছুঁয়ে তেছড়া ভাবে পেটের উপর ঝুলে পড়েছে তাদের কি বলে?
আমি বলি, ও, ওরা! বামুন। ওরা মানুষ মানে না, জাতপাত মানে।
ওদের বোঝা মুশকিল।
ওরা জাতপাত মানলেও ঐ যে বলে না নিচু জাত!
তাদের বাড়িতেও পুজো করে।
দক্ষিণার পাই পয়সা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়।
আসল নৈবদ্যটুকু গামছায় বেঁধে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
বাবা! পুরোহিত কাকে বলে?
আমি বলি, যারা পুরবাসীর হিত-মঙ্গল কামনা করে তাদের পুরোহিত বলে।
এবার টুকুন বায়না ধরে,
বাবা! আমাকে পুরোহিত দেখাবে?
আমি বলি,দেখাবো। এই সেদিন এক পুরোহিতের নাম শুনলাম। মুর্শিদাবাদের চুয়া গ্রামে থাকেন সুভাষ রায় চৌধুরী।
তিনি এক মুসলিম তরুণীকে আশ্রয় দিয়েছেন।
তাকে ব্রাত্য করে ছেড়েছে তার গ্রাম।
মেয়েটির নাম সখিনা বিবি। সুভাষ বাবুকে বাবা বলে ডাকে।
টুকুন বলে, বাবা বিবেকানন্দ প্রথম কুমারী পুজো চালু করেছিলেন, জানো?
আমি বলি, তাই কি?
টুকুন বলে, জানো তো সে কুমারীটি ছিল মুসলমান ও কাশ্মীরি মাঝির মেয়ে!
আমি বলি, ভালোই তো। কুমারী কুমারীই, তার আবার জাত-ধর্ম কি?
খড়্গপুর। এবার একটি সংগঠন সেখানে দারুণ দুর্গাপুজো করছে।
দুর্গোৎসবের থিম মুখ ও মুখোশ।
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাতৃ মন্ডপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন সুভাষ বাবু— প্রকৃত ব্রাহ্মণ ও পুরোহিত।
দুর্গা বলে,বাপের বাড়ি আমি তো থাকি মাত্র তিনদিন।
জাত-ধর্ম নিয়ে তোদের ঝামেলা প্রতিদিন!
আমার তো কোনো পদবি নেই
নেই কোনো জাত,ধর্ম।
কি করে নির্বোধদের বোঝাই এর মর্ম?
চল সখিনা! তোকে নিয়ে যাই কৈলাসে।
মুখ দিয়ে পাঠিয়েছিলাম, গুরুত্ব বুঝলই না!
উজবুকরা মুখ ঢেকে থাকুক মুখোশে।