অবতক খবর , রাজীব মুখার্জী, হাওড়া :      করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টানা লকডাউন উঠে গেলেও ফের রাজ্যে চালু হয়েছে ইতিমধ্যে সাপ্তাহিক লকডাউন। রাজ্য সরকারের নির্দেশে ইতিমধ্যেই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক পড়ে রাস্তায় বেরোনো। সামাজিক দূরত্ব সহ যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের৷

রাজ্যের মধ্যে বিশেষ করে গণপরিবহন ব্যবস্থায় হলুদ ট্যাক্সি অন্যতম মাধ্যম। শুধু শহরের নিত্যযাত্রী বহনই নয়, ভিন রাজ্যের যাত্রীরাও ব্যবহার করে এই ট্যাক্সি৷ হাওড়া ও শিয়ালদা স্টেশন ছাড়াও বিমান ধরার ক্ষেত্রেও আজও যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ট্যাক্সি ৷ স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রুটে নামার আগে সকালে এবং গাড়ি গ্যারেজ করার আগে রাতে ট্যাক্সি স্যানিটাইজ় করতে হবে ৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রশাসনের তরফে জারি করা হয় নির্দেশিকা। এইসঙ্গে যাত্রী সুরক্ষায় প্রত্যেক ট্রিপের পর ট্যাক্সি স্যানিটাইজ় করা বাধ্যতামূলক ৷ তাই গোটা বিষয়টি যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ ৷ ট্যাক্সি চালকদের অভিযোগ, স্যানিটাইজ করার চেষ্টায় প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ তাই এই মন্দার বাজারে তাঁদের গ্যাঁটের টাকা খরচ করেই গাড়ি স্যানিটাইজ় করতে হচ্ছে ৷ একদিকে লকডাউন আর কোভিডের জন্য দিনের শেষে আয় এসে ঠেকেছে তলানিতে। অন্যদিকে এই ভাবে গাড়ি স্যানিটাইজ করার বাড়তি টাকাও নিতে পারছেন না যাত্রীদের কাছ থেকে। আর এই বিষয়ে প্রশাসনের তরফে সেইভাবে নজরদারিও চালানো হচ্ছে না।

হাওড়া স্টেশনে নিয়মিত “ডিউটি” করেন ট্যাক্সিচালক ছেদলাল যাদব ৷ তিনি পরিষ্কার জানালেন, “প্রশাসন কী করবে ! আমরাই স্যানিটাইজ় করি৷ দিনভর যা আয় করি ওই স্যানিটাইজ় করেই সব টাকা চলে যায় ৷” আর এক ট্যাক্সিচালক লালজিৎ সাউয়ের কথায়, “স্যানিটাইজ় যেটুকু পারি আমরাই করি ৷ প্রশাসন কিছু করেনি ৷ ঝুঁকি আছে জানি৷ কিন্তু মজবুর পেট। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে কোভিড সংক্রমণের আবহে কতটা সুরক্ষিত হলুদ ট্যাক্সি সওয়ার হওয়া।

স্যানিটাইজ়ের খরচ যে তাঁরা সামলাতে পারছেন না, তা জানাল সকলেই ৷ ওঁদের কথায়, একে কোরোনা আতঙ্কে যাত্রী কম, ফলে আয়ও কম ৷ তাতে ডিজ়েলের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই ৷ এই সময় বাড়তি খরচ কীভাবে সামলাব ৷ তবু, যেটুকু পারি করি ৷ এই বিষয়ে ট্যাক্সি সংগঠনও যে কোনও উদ্যোগ নেয়নি, তাও বলছেন ট্যাক্সিচালকরা ৷ প্রশাসন হাত বাড়ালে উপকৃত হবেন, মনে করছেন তাঁরা। স্যানিটাইজেশন হোক প্রশাসনের উদ্যোগে। চালকদের এই দাবি সমর্থন করছেন যাত্রীরাও। যাত্রীদের কথায়, প্রশাসন দ্বায়িত্ব নিলে ট্যাক্সিচালক ও সাধারণ যাত্রী উভয়েই সুরক্ষিত থাকবে৷

জনৈক যাত্রী দিলদার আলি খান ব্যবসার কাজে মাঝেমাঝেই কলকাতায় আসেন৷ তাঁর কথায়, ” প্রশাসন ট্যাক্সি স্যানিটাইজ করলে চালক-যাত্রী দুজনেরই লাভ৷ এখন যদি স্যানিটাইজেশনের জন্য ভাড়া বাড়ে তাহলে আমাদের উপর বাড়তি বোঝা চাপবে৷”
আরেক যাত্রী অর্জুন সাউ বলেন, “কার জ্বর আছে, কার সর্দি কেউ জানি না! ট্যাক্সিচালকরা যদি না করতে পারে তাহলে তো প্রশাসনের স্যানিটাইজ করা উচিত৷”

ট্যাক্সি স্যানিটাইজেশনে আলাদা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, মেনে নিল প্রশাসনও ৷ এই বিষয়ে হাওড়ার রিজিওয়াল ট্রাফিক অফিসার (RTO) সৌমিত্র বিশ্বাস বলেন, “ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলিকে স্যানিটাইজেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ প্রশাসন নজরদারি চালাবে। তবে ট্যাক্সির ক্ষেত্রে এখনই আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা করতে পারিনি। আপাতত বাসের ক্ষেত্রে নজরদারি চালানো হচ্ছে। ট্যাক্সির ব্যাপারটা মাথায় রয়েছে। এটা নিয়েও কাজ হবে।”

কিন্তু সেই কাজ কবে হবে তা নিয়ে সন্দিহান চালক, মালিক যাত্রীরাও। সারাদিনে একবার স্যানিটাইজেশন করে যেভাবে যাত্রী পরিবহন চলছে তাতে চালক এবং যাত্রীদের যাত্রা কতটা সুরক্ষিত হবে সেই নিয়েও স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রশ্ন। তবে মন্দার বাজার কাটিয়ে কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে সেদিকেই তাকিয়ে এই হলুদ ট্যাক্সির চালক ও মালিকেরা।