রাজনৈতিক কাঁটাতারের একদিকে আমি ওপর দিকে তুমি মাঝখানে আটকে আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি শেখানো বিদ্যা আর বুদ্ধি, আবার তার থেকেও ভয়ঙ্কর আমাদের মধ্যে বর্বরতা হিংসা কখনো ধর্মের নামে বা কখনো জাতির নামে,ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিকে দিকে। “জয় শ্রী রাম” শব্দের শুদ্ধতা মাহাত্ম্যের গভীরতা এদেশের সৃষ্টির রন্ধে রন্ধে, তা কখনোই রাজনৈতিক স্লোগান হতে পারে না, কিন্তু বর্তমান রাজনীতির ফেনিল ধারা মিশেছে সমাজের মজ্জায় মজ্জায় তাই রেহাই পায় না “শ্রী রাম”। আজকাল যদি কেউ “জয় শ্রী রাম ” বলে অনেকে ভেবে বসে থাকেন সে হয়তো বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক। হায় ! আমাদের পূর্বপুরুষ ওনারা হয়তো এতক্ষন এসব দেখে বসে বসে চোখের জল ফেলছেন, ভাবতে বসেছেন তাঁদের ভবিষ্যতরা কেমন মেতেছে ধ্বংসের খেলায় তাই না ? সেসময় কি হিন্দু,বৌদ্ধ বা মুসলিম কিংবা ক্রিস্টান দের নামে ভোটব্যাংক চলতো? সেকুলার, লিবারাল এই শব্দ গুলো কি ঘুরে বেড়াতো সমাজে অলিন্দে?

সরজু নদীর তীর আজ মেতেছে আলোর সাজে, ফুলের বিছনা পাতা,আজ যে বিশেষ দিন রামমন্দিরের ভূমিপুজোর সূচনা, বিগত পাঁচশো বছরের ইতিহাসএর একটা অধ্যায় শেষ হলো আজকে, অনেকে যেমন স্বস্তি পেলেন, ঠিক তেমনই অনেকে আবার দুঃখ পেলেন এ কথা ভেবে যদি কোনো প্রভাব পরে তাঁদের ভোটব্যাংকে? অনেকে আবার তাদেরই অপরিসীম জ্ঞানের ভান্ডার উপরে দিয়েছেন ফেইসবুক, হোয়াটস্যাপ সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রূপের আসরে। আসলে সেকুলার এর মুখোশ যদি সরে যায় তাহলেই তো কেলেঙ্কারি। কিন্তু যাদের সামনে রেখে এতকিছু সেই মুসলিম বা হিন্দু সম্প্রদায় এখানে যে একেবারেই নীরব। আসলে ভারতবর্ষ এমন একটাই দেশ যেখানে সমন্বয়ের বন্ধন চলে এসেছে যুগান্ত ধরে। শুনলে অবাক হবেন রামমন্দিরের ভূমি পুজোর মাটি এসেছে কখনো নেপাল, কখনো রামকৃষ্ণ মিশন বা হরিদ্বার থেকে জল এসেছে গঙ্গা,যমুনা এমনকি আমাদের তারাপীঠের দারোকা, দক্ষিনেশ্বর থেকেও, প্রায় তিন দশক ধরে ইট আনা হয়েছে পৃথিবীর ভিন্ন প্রান্ত থেকে। শুধু তাই নয় শিয়া সম্প্রদায় নাকি একান্ন হাজার টাকা দান করেছেন মন্দিরের সেবায়। বাবরি মসজিদ নিয়ে এতকাল যিনি লড়াই করলেন সেই ইকবাল আনসারীর পরিবার কে আমন্ত্রণ পত্র পাঠালে তিনি সানন্দে তা গ্রহণ করেছেন। রামচন্দ্র সম্পর্কে পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্ট আল্লামা ইকবাল কি তাহলে সাম্প্রদায়িক ছিলেন? রাম নিয়ে গান লিখেছেন মুজারু সুলতানপুরী,শাকিল বদায়ুনী, হজরত জয়পুরি সুর দিয়েছেন নৌসাদ গান গেয়েছেন রফি তালাত মামুদ ওখানেই জিতে যায় রামগান যেতেন রাম। দেশেরএতো খবর রাজনীতির পাশে কিছু খবর আরো অজানাই থেকে যায় যেমন গত ছয় মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে দশটি মন্দির ধ্বংস করেছে সন্ত্রাসকারীর দল, মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে প্রতিমার আটচালা,লহোরে ঐতিহাসিক গুরদুয়ার রূপান্তরিত হয়েছে মসজিদে, এসব জেনে লাভ কি বলুনতো,আলোচনা করলে সেকুলারিজিম এ আঘাত হবে না? দেশটাকে একটু দেখুন দাদা দিদিরা, হিন্দু,মুসলিম এদেশের এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন অযোধ্যা বলে একটা রাজ্য ছিল, যে রাজ্যের রাজা দশরথ ছিলেন প্রকৃত প্রজাপালক,ধর্মনিষ্ট তারই সুপুত্র ছিলেন রাম যিনি একজন আদর্শবান পুরুষ, একজন যোদ্ধা প্রজাদের হিতৈষী রাজা যাঁর গোটা জীবন জুড়ে শুধুই সংগ্রাম, যিনি নিজের কর্তব্য পালনে ব্যস্ত থেকেছিলেন সারাজীবন, হাসিমুখে বনবাসে গেছেন তবুও পিতার মর্যাদা লুন্ঠিত হতে দেননি আবার বীরবিক্রমে নিজের সীতা কে উদ্ধারদের জন্য লঙ্কাকান্ড ঘটিয়েছেন। একজন আদৰ্শ স্বামী আদৰ্শ পুত্র আদর্শ দাদার মতো আগলে রেখেছিলেন ভাইকে। কখনো তিনি স্থিতধী কখনো আবার হুংকারি যোদ্ধা। কয়জনের মধ্যেই এই গুন থাকে বলুনতো? তাই অনেকেরই কাছে রাম হলেন আদৰ্শ, কখনো আবার বিষ্ণুর অবতার রূপে দেবতা।ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের রামের আদর্শ কেই মনে করায়। এদেশের মানুষ আজও যেমন সীতার জন্য রোদন করে আবার মহাজ্ঞানী বীরবিক্রমী যোদ্ধা রাবনের জন্যও শোকাতুর হয়। অসুর সম্প্রদায় মানুষরাও বাস করে এদেশে এটাই আমাদের সভ্যতা, আমাদের চেতনার অংশ।

মুখে ইংরেজি বুলি আউড়ে সেকুলার সেজে নিজের সভ্যতাকে অসম্মান করে কোনো বীরগাথার সৃষ্টি করা যায় না তাহলে শোয়ে শোয়ে রামচন্দ্র জন্ম নিতো আমাদের ঘরে ঘরে। আসলে যিনি রামচন্দ্র তিনি থাকেন দলাদলি বর্বরতা হিংসা রং বেরং এর রাজনীতির থেকে লক্ষ আলোকবর্ষ দুরে। আর ভারতীয় সভ্যতাকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়ে ভোটব্যাংকের হিসাব কষা ? মিথ্যার সে সিংহাসন একদিন লুন্ঠিত হবে মাটিতে, ইতিহাস অন্তত সে কথাই বলে এসেছে এতদিন।
সুমনা আদক —