আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবস। গতকাল গিয়েছে বাইশে শ্রাবণ, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস। আজ আদিবাসী দিবসে এক আদিবাসী মেয়ের প্রশ্ন

রবিঠাকুরের ইন্টারভিউ
তমাল সাহা

ই রবি ঠাকুর! মু বাঁকুড়ার মালতি মুর্মু বুইলছি—-
আগেই মু স্বীকার কইরছি মুদের লিখাপড়া শিখ্যার লিগে শান্তিনিকেতনে স্কুল কইরেছিস, মুদের পাশে বইসে মুদের ধইরে ধইরে লিখাপড়া শিখাইছিস, ইসব ঠিকই আছে।
মু খুব ছুট্ট মানুষ, তুকে জানতে চিনতে হবেক তো,
ইত্তো ইত্তো বই পড়তে হবেক।
মু তো ইটো জানি আর সব মাইনষেই ই কথা বলে।
আরো জানি তুর ইসব বই পইড়তে পইড়তে সারা জীবন কেইটে যাবেক।
তবুও তুকে ইকটা প্রশ্ন কইরব
তু রেইগ্যে যাবি না তো!
ছুটো মুখে বড় কথা বলা মুদের শোভা পায়না।

তু দেশের আদিবাসী মাইনষের অনেক কথা, মুদের মেহনতের কথা খুব জানিস, খুব লিখ্যেছিস।
ওরা কাজ করে কবিতাটো মু পইড়েছি।
তু লিখেছিস দুই বিঘা জমিন। তো উপেনকে বিদ্রোহী বানাইলি না ক্যানে, বুঝলম না! উখানে জমিদারের দিকে তু একটু ঝুঁইক্যে গেলি ক্যানে? তু কলমের জোরে পুরা বিশ্বের জমি ধরাই দিলি উপেনের হাতে! ই অসম্ভব কি কইরে হয়? আর ইসব কথা তু নিজের মুখে লয়, উপেনের মুখে বসাই দিলি?
মু জানি শিলাইদহে তুর জমিদারি ছিল। ইখানে একটু জমিদারের পক্ষে হইয়ে গেলি?

আরেকটো প্রশ্ন মনে আইস্যে পড়ে। তু মেয়েদের লিগ্যে অনেক কথা লিখ্যেছিস, নারীশক্তিকে বাহবা দিয়ে লিখ্যেছিস অনেক কবিতা গল্প উপন্যাস কিন্তু ধর্ষণ লিয়ে ধর্ষিতাদের লিগ্যে তিমন কিছু মু ইখনও পড়ি লাই। লুকে বলে তুর বই ঘাইটলে সব পাওয়া যায় কিন্তু ই বিষয়ে তিমন কিছু মু পাই নাই। অবইশ্য চণ্ডালিকাতে অচ্ছ্যুত একটা মাইয়ার কথা আছে, মানসীতে পুরুষ মানুষের মাইয়াদের শরীলে নোংরা ছোঁয়াছুঁয়ি লিয়ে কিছু কথা আছে বট্যে!

তবে ছুটো মুখে আবার একটা বড় কথা বইলবো কি? এ প্রশ্নটা কইরলে তোর ভক্তরা বড় বড় মাথাউলা পণ্ডিতেরা মুকে খুন কইরে দিতে পারে!

এটা মুর কাছে খুব জরুরি প্রশ্ন বটে। বাইশ বচ্ছর বয়সে তু কি কইরে দশ বছরের নাবালিকা মাইয়াকে বিয়া করলি?
তখন অবইশ্য
সমাজে নাবালিকা বিয়ার প্রচলন ছিল ব্যুটে। তবে কি তুদের মতো বড় বড় মাইনষের বিজ্ঞানের জ্ঞানগম্যি ছিল না!
ইখন ইসব করলে তো তু গিপতার হইয়ে যেতি!
তা হইলে অবইশ্য মুদের অনেক ক্ষতি হইতো। তো তোর ইসব বহুমুখী প্রতিভার লিখাজোখা মুরা পাইতাম না। ইটা অস্বীকার করি ক্যামন কইরে?
মুকে ক্ষমা কইরে দিস ব্যুটে!

প্রশ্ন তো মুর অনেক আছে! তোর কত্ত কত্ত প্রেমকে বিষয় কইরে ব্যবসার পণ্য কইরে বই লিখ্যে কত্ত লোক করে-কম্মে খাইছ্যে!
আর মু একটা প্রেম কইরে ঘর ছাড়া!
তোর ইত্ত ইত্ত প্রেমে দোষ লাই? মুর একটা অন্য জাইতের মাইনষের সঙ্গে প্রেম কইরে ইত্তো দুষ হইয়ে গিলো?

শেষ প্রশ্ন তুকে করি।
পদবি তো অনেক আছে দুনিয়াতে। ইত্ত পদবি থাইকতে ঠাকুর পদবিটো তোর পছন্দ হইল বুট্যে, ক্যানে?
তু তো ব্রহ্মবাদী, ব্রাইহ্ম সমাজের লোক!
ঠাকুর শব্দটো তুর কাছে মনে হয় না দুনিয়ার মাইনষ্যের কাছ থেইকে অনেক দূরে তুকে সরাই দ্যায়?
মুর তো ঠাকুর ভগবান উঁচা উঁচা ব্যাপার বুল্যে মনে হয়।

অন্য কথা বলি তুর সম্পর্কে। রাইতে ছিঁড়া মাদুরে শুইয়ে শুইয়ে কি সব প্রশ্ন করছি তুকে!
তুর সম্পর্কে কুনো প্রশ্ন করার স্পর্ধা লাই বটে। তবে তুকে ছাড়া আর কাকে ইসব প্রশ্ন কইরব, বল?
তু মুরে ক্ষমা কইরে দিবি তো?

তবে তুর ই কথাটো মুর খুউব খুউব ভালো লাগে–
মুর নাম ই বুলে খ্যাত হোক
মূল তো তুদেরই লোক।