উডল্যান্ড হসপিটালঃহালিশহরের রবি দাস ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন
রবি দাসরাই পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখে
তমাল সাহা
এখনো দক্ষিণা বাতাস বয়ে যায়। উত্তর দিকে ঢুকে পড়ে। ভাগীরথী জল স্রোতের তীরে চটকলগুলি অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু চটকল জখম অবস্থায় চলছে। শ্রমিক এলাকায় চোলাই মদ খেয়ে বাতাস নেশাগ্রস্ত হয়ে টালমাটাল হাঁটতে হাঁটতে ফুটপাতের বটগাছ তলায় পড়ে যায়।
অন্ধকারের ভিতরও আলো থাকে। নাহলে ছোট ছোট তারাগুলি কি করে জ্বলে নেভে? হাবেলি শহর স্থাপত্যের নগরী থেকে হালের হালিশহর হয়ে গেলেও টিম টিম বাতি জ্বলে চৌমাথা পাড়ায় কোনো অগোছালো সংসারে।
জানো তো, আমার সারা শরীর পার্টি দিয়ে ঢাকা। ছোটবেলা থেকে আমার পার্টির নেশা। কে কি বলে আমি জানিনা। আমি বলি লাল ঝাণ্ডার পার্টি। আমার মা বাবা আমাদের বাড়ির সবাই লাল পার্টির লোক। লাল পার্টি ছাড়া মানুষ বাঁচবে না। বিপ্লব! বিপ্লব, সে অনেক বড় ব্যাপার। আমি এসব সেভাবে বুঝিনা। আমি শুধু বুঝি সাচ্চা ভালো যা করার তা শুধু করতে পারে লাল ঝাণ্ডার পার্টি। লোকে বলে, আমি প্রতিবন্ধী! পার্টিম্যান কোনদিনও প্রতিবন্ধী হয় না। পার্টি মানে পাওয়ার। পার্টিতেই আমার জোর। পার্টিতেই আমার তেজ, আমার জেদ।
মিটিং শোনা, মিছিলে অংশ নেওয়া, রক্তদান শিবিরে যাওয়া আমার নেশা। আমার শরীর জুড়ে পার্টির গন্ধ। আমার পোশাক লাল গেঞ্জি, লাল টুপি, আমার হ্যান্ড রিক্সায় কমিউনিস্ট পার্টির পতাকা থাকবেই। ৮০-১০০ কিলোমিটার হ্যান্ড রিক্সা চালানো কোন ব্যাপারই না। আমি জানি, হাত শব্দ থেকেই এসেছে হাতিয়ার।
বারাসাতের কাছারি ময়দান, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড আমি চলে যাই। কলকাতা যেতে আমার দুদিন লাগে। রাস্তায় খাওয়া-দাওয়া আমার কোন অসুবিধা হয় না। যেতে যেতে পার্টি অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। আমার খাইখরচা জুটে যায়। রাত হয়ে গেলে কোনো পার্টির অফিসে রাত কাটিয়ে দিই।
আমাকে তো কমরেডরাই বাঁচিয়ে রেখেছে! আশ্চর্য! সব কমরেডরাই আমাকে চেনে। যেখানেই যাই অজানা পরিস্থিতিতে সেখানেও চেনা কমরেড খুঁজে পাই। ফলে আমার কোন অসুবিধা হয়না। জীবনটা কী যে ভালো লাগে! একেই কি বলে জীবনে আনন্দ, আমি জানি না।
আমি দিল্লিতে সারা ভারত জুড়ে মানুষ গিয়েছে সেখানে গিয়ে কৃষক মিছিলে অংশ নিয়েছি। পার্টি কমরেডরা আমাকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছে।
হালিশহর থেকে হাওড়া, হাওড়া থেকে হালিশহর আমি এই হ্যান্ড রিকশা চালিয়ে এসেছি।
এতক্ষণ পর সে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে, আমি যদি কোনদিন ভোটে দাঁড়ায়্ই তবে হ্যান্ড রিক্সা চিহ্নে দাঁড়াবো।
কতবার হামলা গাজোয়ারির শিকার হয়েছি! আমার রিক্সার চাকার পাম্প খুলে দিয়েছে। আরে, পার্টির পাম্পই তো আমার পাম্প!
এমন একটা মানুষ হয় নাকি? চোরেরা অনেক কিছুই বলবে। প্রজন্মের জন্য উনি ভেবেছিলেন। কর্মপদ্ধতিতে কিছু ভুল হলেও হতে পারে। তাতে কি? তার সাদা জামায় কাদা নেই। সিন্দুর নন্দীগ্রাম মানে এখন কি জানেন? শূন্যতা। মানুষ তো আসলে নেমকহারাম। সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম এখন তাদের মাথা থেকে উড়ে গিয়েছে। তার জন্য তাদের মন আর কাঁদে না!
আসলে এসব কথা কোনো কথাই নয়। পার্টিকে কিভাবে ভালবাসতে হয় তা শেখাচ্ছেন হালিশহরের রবিদাস। রবিদাসের বাবা হালিশহর স্টেশনে রিক্সা চালান। রবিদাস বলে, বাবা রিকশা চালিয়ে উপার্জন করে। আর আমি হ্যান্ড রিকশা চালিয়ে ঘুরে ঘুরে লটারির টিকিট বিক্রি করি।
রবিদাসের বাড়িতে বড় একটা ভগৎ সিংয়ের ছবি আছে। আলমারিতে রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছবি।
রবিদাস বলে, আমি জানি লটারিতে ভাগ্য ফেরে না। লট মানে কপাল, ওরি মানে দুঃখ। তাহলে দাঁড়ালো লটারি মানে কপালে দুঃখ!