অবতক খবর,১৫ নভেম্বর,রূপম রায়,নদীয়া: দু’বছর যুদ্ধ চলার পর অবশেষে আদালতের রায় গিয়েছিল বাংলার পক্ষে। জয় হয়েছিল বাংলা ও বাঙালির। যুদ্ধ চলছিল বঙ্গ বনাম কলিঙ্গের। বাংলার নব প্রজন্ম কাগজে-কলমে রসগোল্লার বার্থ সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালে ভারত সরকারের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা ভৌগোলিক নির্দেশ অর্থাৎ জি.আই মান্যতা দিন অর্থাৎ ১৪ নভেম্বরে এখন বাংলার ঐতিহ্য রসগোল্লার জন্মদিন।

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুর ফুলিয়াকে রসগোল্লার উৎপত্তিস্থল হিসেবে মান্যতা দিয়েছে ভারত সরকারের জি.আই। অর্থাৎ কৃত্তিবাসের জন্মস্থান ফুলিয়া গ্রামে রসগোল্লার জন্মভূমি। ফুলিয়ার বয়রা ঘাটের কাছ দিয়ে সিমেন্টের রাস্তা ছিল রানাঘাট যাবার জন্য। ওই বয়রা ঘাটের কাছেই ছিল হারাধন বাবুর মিষ্টির দোকান। যে দোকানে প্রথম রসগোল্লা তৈরি হয়। যা এখন গঙ্গার তলায় চলে গিয়েছে। ‌ আধুনিক সন্দেশ রসগোল্লার বয়স মাত্র দুই আড়াইশো বছর। বাংলা ছানা তৈরি করতে শিখেছে পর্তুগিজদের থেকে। তাদের কাছ থেকে বাংলার ময়রারা ছানা ও পনির তৈরির কৌশল শেখে। রসগোল্লার নাম আদিতে ছিল গোপাল গোল্লা। রসের রসিক বাঙালি চিনির শিরায় ডোবানো বিশুদ্ধ ছানার গোল্লাকে নাম দিয়েছে রসগোল্লা।

প্রথমদিকে ছানা ও ছানার মিষ্টি একরকম পরিত্যাগ ছিল ধর্মীয় কারণে। খাদ্য বিলাসী বাঙালির জীবনে ঝালের চেয়ে মিষ্টি প্রিয়। সে কারণে বাংলায় মিষ্টির এত প্রজাতি তৈরি হয়েছে। আর মিষ্টির মধ্যে যে রসগোল্লা প্রথম, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। শত বিবর্তনের মধ্যেও ময়রার বাড়িতে বা দোকানে গনগনে মাটির উনুনে চিনির সিরায় ফুটতে থাকা প্রায় সাদা রসগোল্লা বাঙালির রসনাই শুধু নয় মনও ভরিয়ে তোলে।

বারোয়ারি বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে রসগোল্লার বর্ণাঢ্য উপস্থিতি প্রমাণ করে, বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতিতে এটি তৈরি করেছে ভিন্ন দ্যোতনা। বিলাসী বাঙালির স্মৃতি রোমন্থনের ক্ষেত্রে রসগোল্লা উপযুক্ত অনুষঙ্গ। অনুষ্ঠানের জন্য রাখা রসগোল্লা চুরি করে খাওয়া আমাদের শৈশবের স্মৃতিতে অমলিন। তবে গরম গরম রসগোল্লার স্বাদ যারা পাননি তাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে।