আজ সেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। আকাশে চাঁদ হাসে। মৃদু মন্দ বাতাস উড়ে
যায়।এই গণতান্ত্রিক দেশে মায়ের গর্ভ থেকে লক্ষ্মীরা কিভাবে জন্মায়, কিভাবে বাঁচে, শুনুন…
লক্ষ্মী
তমাল সাহা
পুর্ণিমার চাঁদ আকাশে উঠেছে আজ।
নরম গলানো আলো শরীরে তাহার
কী অপূর্ব সাজ!
বলে, বছর গেলো,
কোজাগরী হয়ে আবার এলাম
তোমরা আছো তো ভালো?
নারকেল গাছের মাথায়
উঠেছে যুবতী চাঁদ।
গাঁয়ের নাম দুর্গাপুর—
সেখান থেকে অটোয় স্টেশন।
তারপর ট্রেন—
হাসপাতালের পথ অনেক দূর।
মায়ের গর্ভযন্ত্রণা ওঠে এই রাতে।
লক্ষ্মীপুজো দেখা হবে না এবার,
লেখা ছিল বুঝি বরাতে।
মা আমার প্রথম পোয়াতি, হবে জননী।
প্রসব কাতর মা, কী হবে কি জানি!
উন্নয়নে নাকি সেরা-নির্মল গ্রাম শিরোপা।
অথচ হাসপাতাল গ্রাম ছাড়া,
দূরত্ব লক্ষ লক্ষ যোজন পা।
মা জননী ভ্যান রিক্সায় হাসপাতালে যায়।
বাড়ি বাড়ি ওঠে সুর —
‘রত্ন সিংহাসনে বসি লক্ষ্মীনারায়ণ
নানা কথা সুখে করে আলাপন’—
লক্ষীর পাঁচালি তীব্র গর্ভযন্ত্রণায়
প্যাঁচালের মতো শোনায়।
ভ্যান চলে সাবধানে, কখন কী হয়?
রাস্তা কি ফুরোয়!
সময় যায়, মাটির রাস্তা যে ধুলোময়।
কোজাগরী চাঁদ তখন মধ্যগগনে।
প্রসব হয়ে গেলো শ্রমজীবীর ভ্যানে।
আরে লক্ষ্মী এসেছে!
কন্যাসন্তান কঁকিয়ে কেঁদে ওঠে সেইক্ষণে।
এইভাবে বছর বছর ঘরে ঘরে
কত লক্ষ্মী ঢুকে পড়ে।
লক্ষ্মীরা যত বড় হয় তত দুর্দশা বাড়ে।
কত ধর্ষিতা লক্ষ্মী পড়ে থাকে
প্রান্তরে ঝোঁপে ঝাড়ে।
কত লক্ষ্মী দেহ বেচে খায়
লাইনে দাঁড়ায় রেড এরিয়ায়।
গণতন্ত্র অত্যন্ত সুসভ্য এখন।
যৌনকর্মী নামে সম্বোধন
সম্মানের বিশাল আয়োজন।
এভাবে মুখোশ পরে গণতন্ত্র
কতদিন বাঁচে?
প্রতীক্ষায় আছে ভারতবর্ষ,
লক্ষ্মীরা কবে উঠবে ফুঁসে
আগুনের আঁচে!