গুরুদাস দাশগুপ্ত কাঁচরাপাড়ায় এসেছিলেন
তিনি তিনবার রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন। দু’বার হয়েছিলেন লোকসভার সাংসদ। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন সংসদীয় গণতন্ত্রের চেহারা। তিনি অনেক নিচু স্তর থেকে অনেক শ্রমে উঠে এসেছিলেন উঁচুস্তরে। এই মানুষটি কাঁচরাপাড়ায় এসেছিলেন সংগঠন মজবুত করতে। কোন সংগঠন? তৎকালীন সরকারের শ্রমনীতি ও বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ শ্রমিক মঞ্চ গড়ে তুলতে, বক্তব্য রেখেছিলেন কাঁচরাপাড়া কারখানার লোকোগেটে। সেটা ছিল ১৯৯০ সাল। তিনি চলে গেলেন ৩১ অক্টোবর’১৯।
লাল সোয়েটার
তমাল সাহা
ক’বার সাংসদ হয়েছিলেন
ক’বার রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন
সেটা বড় কথা নয়।
বড় কথা তিনি ষোল- সতেরো বছর বয়সেই কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার হয়েছিলেন।
কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার হয়েছিলেন,
সেটা বড় কথা নয়।
তিনি একদম নিচুস্তর থেকে
যাকে বলে কাজ,
সেই পার্টির কাজ করতে করতে
উঁচুস্তরে উঠে এসেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছিলেন
খেটে খাওয়া মানুষের পাশে।
আর ঐ যে ইংরেজিতে বলে না, ট্রেড ইউনিয়ন,
তিনি তার সাচ্চা লিডার হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি বুঝেছিলেন শ্রমিকরাই ভ্যানগার্ড।
তিনি মজবুত ছাত্র সংগঠন তৈরি করেছিলেন।
তিনি হিম্মতদার যুব সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি খরশান বক্তব্য তুলে ধরতেন লোকসভায় ও রাজ্যসভায়।
তার নেতৃত্বে ইডেনে দিনের পর দিন
যুব উৎসবের উন্মাদনা
কি করে অস্বীকার করি বাড়িয়েছিল নিশ্চিত
আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা।
তার হাতে একগোছা কাগজ দেখলেই শাসকদল বুঝতো কার পাল্লায় পড়তে হবে।
হর্ষদ মেহতার শেয়ার কেলেঙ্কারি,
টুজি স্পেক্ট্রাম কেলেঙ্কারি,
কর্পোরেট সংস্থার কর ফাঁকি নিয়ে তোলপাড় মানেই তিনি।
মারুতি কারখানায় শ্রমিক আন্দোলনের ভূমিকা ছিল কার?
কর ফাঁকি দিচ্ছে কর্পোরেট— কে দিয়েছিল তার হদিশ?
শিশুকল্যাণের দিকে নজর ছিল তার।
সাড়ে সাত লক্ষ টাকা
দক্ষ বাগ্মিতার সাংসদ পুরস্কার!
তিনি বললেন,এটা আমার মানবতার দায়ভার।
আসলে পেয়েছিল জঙ্গি হানায় নিহত সেইসব পরিবার।
তথ্য প্রমাণ সমৃদ্ধ ক্ষুরধার বক্তব্য তার,
তাকে করেছিল দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান।
তার যাপিত জীবন কত সহজ মহান!
তিনি গায়ে দিতেন একটি লাল সোয়েটার।
সেটিই শেষ পর্যন্ত প্রতীক হয়েছিল তার।
তাকে দেখা যাবে না আর
আমাদের চোখের হ্যাঙারে ঝুলে থাকবে
সেই লাল সোয়েটার!