অবতক খবর,৭ সেপ্টেম্বর,বাঁকুড়া:- শ্যাম রাজত্বের হিটলারি মনোভাবের জন্য বিষ্ণুপুর পৌরসভার দেড় কোটি টাকা জলে যেতে বসেছে। হিটলারি মনোভাবের জন্য মাসুল কড়ায় গণ্ডায় গুণতে হচ্ছে বিষ্ণুপুর পুরসভাকেই। আদালতের নির্দেশে প্রায় দেড় কোটি টাকায় তৈরি একটি পার্ক রাজ পরিবারের হাতে তুলে দিতে চলেছে বিষ্ণুপুর পুরসভা।

মল্ল রাজাদের রাজধানী ছিল বিষ্ণুপুরে। এই মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর মল্ল রাজাদের আধিপত্য। একচেটিয়া শাসন করেছে মল্ল রাজার বংশ পরম্পরায়। মাধব কৃষ্ণ দেবের রাজত্বকালে ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখল করে। পরাধীনতার গ্লানিতে গোটা ভারতবর্ষের সাথে সাথে মল্ল রাজারাও ভুগতে থাকে। তখন মল্ল রাজ পরিবার দেখেছিল পরাধীনতার কালো অন্ধকার। তবে ভারতবর্ষের বীর বিপ্লবীদের রক্ত, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, তাদের আত্মত্যাগ বর্বর ইংরেজদের হাত থেকে ভারতবর্ষ মুক্তির সূর্য উঠতে দেখেছিল।

বিষ্ণুপুরের পাশেই রয়েছে দ্বারকেশ্বর নদী। আর এই নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে তারপরে। বর্তমান সভ্য সমাজে রাজাদের রাজত্ব নেই রয়েছে রাজ রাজাদের উত্তরসূরী। ভারতবর্ষে চালু হয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। আর এই গণতন্ত্রের যুগে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের ইতিহাস আজও বর্তমান। বিভিন্ন সময়ে মল্ল রাজারা অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।দান করেছেন বিঘার পর বিঘা জমি। কিন্তু সেই মল্ল রাজাদের সম্পত্তি কেউ জোরপূর্বক দখল করবে এটা হয়তো স্বপ্নেও তারা ভাবেনি।
সালটা ছিল ২০১৭, আবারো রাজ পরিবারে নেমে এসেছিল অন্ধকার দিন। বিষ্ণুপুর পৌরসভার দায়িত্বভার তখন প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির হাতে। যিনি এখন পৌরসভার ১০ কোটি টাকা টেন্ডার দুর্নীতি কান্ডে জেল হেফাজতে রয়েছেন।

বিষ্ণুপুরের দু ‘নম্বর ওয়ার্ডে একদিকে যেমন রয়েছে রাজ দরবার, অপর দিকে রয়েছে জোড়বাংলা মন্দির। এর মাঝখানে লাল জিও মন্দিরের চারপাশে রয়েছে মল্ল রাজাদের চার একর জমি। রবি ঠাকুরের কবিতায় উপেনের জমি যেমন রাজা জোরপূর্বক নিয়ে নিয়েছিল, বিষ্ণুপুরে ঘটেছিল ঠিক তার উল্টো পুরান শ্যামা রাজত্বে। মল্ল রাজাদের মালিকাধীন সাড়ে চার একর জমির উপর এক প্রকার গায়ের জোরেই শ্যাম মুখার্জী পৌরসভার অর্থ ব্যায় করে একটি পার্ক তৈরি করেন।  রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা ঐ জমিতে পার্ক তৈরির বিষয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসলেও প্রবল প্রতাপশালী শ্যাম মুখার্জীর দৌর্দণ্ডপ্রতাপের কাছে সেই আপত্তি ধোঁপে টেকেনি।  এই ঘটনার পরই রাজ পরিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট পার্কের ওই জায়গাটিকে পুনরায় রাজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিষ্ণুপুর পুরসভাকে নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ মিলতেই বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রশাসক বোর্ড বৈঠক করে ওই পার্কটিকে রাজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বর্তমান বিষ্ণুপুরের পৌর প্রশাসক অর্চিতা বিদ বলেন, এই ঘটনা অনেক পৌরসভার পক্ষ থেকে দরবারে যে পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল, পার্কটি তৈরি করার সময় জমির মালিকানা যাদের কাছে আছে তাদের কাছে কোন পারমিশন নেওয়া হয়নি। যে কারণেই তারা এই পরিপেক্ষিতে একটি কেস করেছিল। এরপর কোর্ট নোটিশ দেয় পৌরসভাকে পুনরায় জমিটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বা পৌরসভা যাতে জায়গাটি কিনে নেয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে জমিটির মূল্য যা আছে সেই টাকা দিয়ে জমিটি কেনার মত পরিস্থিতি পৌরসভার নেই। তবে বর্তমান প্রশাসক বলেন, আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি জায়গাটি মূল মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দেব। তবে পার্কটি যখন তৈরি হয়েছে তখন সরকারি নিয়ম নীতি মেনে পার্কটি তৈরি করলে সরকারের এত টাকা নষ্ট হতো না এবং একটি সরকারি সম্পত্তি বেঁচে যেত।