অবতক খবর,১৩ এপ্রিল: সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে নন্দীগ্রামের প্রার্থী সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে এক উল্লেখযোগ্য নাম। যুব নেত্রী হিসেবে এই বয়সেই তিনি সমগ্র ভারতবর্ষে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তিনি আজ সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে প্রার্থী সুকান্ত রক্ষিতের সমর্থনে কাঁচরাপাড়া বাগমোড়ে বক্তব্য রাখেন। সভাটি ছিল জনবহুল। অদূর অতীতে কাঁচরাপাড়া অঞ্চলে সিপিএম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এমন বড় জনসভা আয়োজন করতে পারেনি বলেই সাধারণ মানুষের মত।
এই অঞ্চলেই তৃণমূল কর্মী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন সিপিএম লোকাল ও জেলা নেতৃত্ব। আঞ্চলিক পার্টি অফিসও বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন নেতারা।
এদিন হৃদয়দ্রাবী,অন্যদিকে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তৃতা রাখেন মীনাক্ষী মুখার্জী। তিনি সরাসরি স্থানীয় সমস্যা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। কাঁচরাপাড়া কোচ ফ্যাক্টরি যা দুবার করে উদ্বোধন হয়েছে।রেলমন্ত্রী হিসেবে বর্তমান তৃণমূল সুপ্রিমো এবং বর্তমান রাজ্য শাসকদলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জী উদ্বোধন করেছেন। আর একবার উদ্বোধন করেছেন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। দশ বছর অতিক্রান্ত, এই কোচ ফ্যাক্টরির কেন রুপায়ণ হলো না,কেন এটিকে কোন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না এ বিষয়ে জনগণ অর্থাৎ কাঁচরাপাড়ার মানুষকে প্রশ্ন তুলতে বলেন তিনি।
তিনি বলেন,এই ফ্যাক্টরির জন্য বর্তমান বছরে মাত্র ১ হাজার টাকা অনুমোদন হয়েছে। বেকার সমস্যা সমাধানে এই রাজ্য নেতৃত্ব, যারা কথা দিয়েছিলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা কি করেছেন এই প্রশ্ন তিনি তোলেন।
কাঁচরাপাড়া বাস টার্মিনাস বিয়ষেও তিনি প্রশ্ন তোলেন। বাস টার্মিনাস হলে একটা শহরের পরিকাঠামো তৈরি হতো। অডিটোরিয়াম হলে সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারত,এ থেকে কাঁচরাপাড়াবাসীকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন এবং এই প্রশ্নের জবাব তিনি জনগণকে উত্থাপন করতে বলেন।
তিনি বলেন, মান মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য অনেক কাজ করেছেন বলে দিদি বলছেন। তিনি মহিলাদের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ১৮ বছরের নীচে ধর্ষিতা হলে ৩০ হাজার টাকা তার উর্ধ্বে হলে কম। এটাই কি নারীর মর্যাদা? নারী কি পণ্য? এই প্রশ্ন তিনি তোলেন। তিনি বলেন, দিদিমা ঠাকুরমারা বলে থাকেন, যা দেবে অঙ্গে তাই যাবে সঙ্গে। এই শাসক দল শেষ মুহূর্তে যা পারছে তাই অঙ্গে ভরে নিচ্ছে। এটা চোরের সরকার। সিন্ডিকেট, বালি খাদান, কয়লা খাদানের টাকা তারা সংগ্রহ করছেন এবং তাই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন শেষ মুহূর্তে। এও তাদের সঙ্গে চলে যাবে। এই সরকার দুয়ারে যাবে না চুলোয় যাবে তা এই সরকারই বলতে পারে।
তিনি বলেন, নন্দীগ্রামের হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অধিকারী বাপ-বেটা চটি পরা পুলিশ ঢুকিয়ে গণহত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। তাহলে তিনি নাম উল্লেখ করতে ভয় পাচ্ছেন কেন? আমাদের বাঙালি রীতি অনুযায়ী মা-কাকিমারা দুজনের নাম উল্লেখ করেন না জানেন তো। তারা হলেন শ্বশুর আর ভাসুর। তিনি বলেন,শিশির অধিকারী কোন শ্বশুর আর শুভেন্দু অধিকারী কোন ভাসুর? তিনি নাম উল্লেখ করছেন না কেন? নন্দীগ্রাম এখন পুরো শ্মশান। নন্দীগ্রামে যে শিল্প হবার কথা ছিল,যে শিল্প হাব হওয়ার কথা ছিল,যে জেলিং কারখানা হওয়ার কথা ছিল তার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে নন্দীগ্রামকে।
তিনি বলেন,তারা এই দুই দল অর্থাৎ বিজেপি এবং তৃণমূল দল আসলে ব্যালেন্স করে খেলছে। তালিকা দেখে আমরা দেখছি বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে ১৪৭টি প্রার্থী রয়েছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া ক্যান্ডিডেট। তার মানে তারা ব্যালেন্স খেলছেন। দুটো ছোট ফুল জোড়া দিলে একটা বড় ফুল হয়ে যাবে। সুতরাং বড়ফুল আর দুটো ছোট ফুল এক ফুল। এতে কোন তফাৎ নেই এদের দু’জনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আর বুকে হাত রেখে ওয়াদা করে বলে যাচ্ছি এই সংযুক্ত মোর্চার সরকার যদি আসে তাহলে আইন করে এখান থেকে এনআরসি আমরা রুখে দেবই। কিন্তু আজ এনআরসির বিরুদ্ধে যে দিদি বলছেন, তিনি প্রথম এনআরসির জন্য দাবি করেছিলেন সংসদে। সুতরাং এদের চরিত্র বুঝতে হবে। এই যে নির্বাচনী লড়াই কোন ব্যক্তিগত জয়ের জন্য নয়। এ লড়াই, লড়াই হচ্ছে আপনার ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য। আপনি আপনার ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে চান, না ভাতার সরকার চান,না পাইয়ে দেওয়ার সরকার চান, আপনার মান-মর্যাদা রক্ষা করার জন্য যদি সরকার চান,নিজের অধিকার অর্জনের জন্য যদি সরকার চান, আমরা প্রতি বছর টেট, এসএসসি হবেই হবে এই কথা দিয়ে যাচ্ছি এবং যে ৫ লক্ষ পদ শূন্য রয়েছে সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে তা পূর্ণ হবেই, এটা আমরা পূর্ণ করবোই। এই পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে যে সমস্যা,সেই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা আলাদা মন্ত্রণালয় বা দপ্তর তৈরি করব। সুতরাং এই আইন প্রণয়নের জন্য নিশ্চিতভাবে আপনারা আইনজীবী সুকান্ত রক্ষিতকে বিধানসভায় পাঠাবেন।প্রবাহ সংস্থা সুকান্ত রক্ষিতের নেতৃত্বে ২ হাজার মানুষকে লকডাউনে ত্রাণ দিয়েছে,আমফানে যে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তখন এই তৃণমূল ত্রাণ চুরি করেছে,চাল চুরি করেছে, ত্রিপল চুরি করেছে।সুকান্ত রক্ষিতকে জেতানোর জন্য আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে—দল গঠন করে বুথ আগলে রাখা এবং শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেটাকে সংরক্ষিত করা।
মনে রাখবেন এই নির্বাচন একটা রাজনৈতিক ভারসাম্যের নির্বাচন। আগামীর ভারতবর্ষ কোন দিকে যাবে তার নির্ধারণ করবে এই পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন। সুতরাং আপনার দায় আছে, দায়িত্ব রয়েছে, সেই সব চিন্তা করে আপনি কাকে ভোট দেবেন এটি বড় কথা নয়, কাকে ভোট দেওয়া উচিত এটি মনে করেই ভোট প্রদান করবেন।