অবতক খবর,৫ সেপ্টেম্বর, রুপম রায়,নদীয়া: রবিবার এক অন্যরকম শিক্ষক দিবস পালন করলেন নদীয়ার হাঁসখালি ব্লকের পূর্ব চুনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃন্ময় ঘোষ।

রাজ্যের অন্যত্র যেখানে এই বিশেষ দিনে শিক্ষকরা হচ্ছেন সম্মানিত, সেখানে শিক্ষক মৃন্ময় ঘোষ তার প্রিয় ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে ফুল, মিষ্টি ও কিছু বই উপহার দিয়ে প্রিয় ছাত্রকে করলেন সংবর্ধিত। অর্থাৎ শিক্ষক দিবস কাটালেন তার প্রিয় ছাত্রের সঙ্গে তার বাড়িতে।

আসলে মৃণ্ময়বাবুর ছাত্রটি অন্যদের থেকে একটু অন্যরকম। সে শারীরিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম। পূর্ব চুনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ঈশান ব্যানার্জি। জন্ম থেকেই শারীরিক দিক দিয়ে সে বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ায় তার বাবা আশুতোষ ব্যানার্জি ও মা পার্বতী ব্যানার্জি একমাত্র ছেলের পড়াশুনার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। যদিও মূলত তাদের উদ্যোগেই ঠিকমত কথা বলতে না পারা, হাঁটতে-চলতে না পারা ছোট্ট ঈশান বর্তমানে ওই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। মা এবং বাবা দুজনে মিলেই স্কুল খোলা থাকার সময়ে ছেলেকে কোলে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছর ধরে বন্ধ স্কুল। তাই ছেলেকে বাড়িতেই পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করেন পেশায় গৃহশিক্ষক বাবা আশুতোষবাবু। গৃহশিক্ষকতা করেই কোনরকমে অভাবের মধ্যে সংসার চালান। যদিও গত দু’বছর ধরে গৃহশিক্ষকতার অবস্থা খুবই করুন। তবু ছেলেকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করে তোলার আশা তারা ছাড়েননি। পূর্ব চুনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃন্ময় ঘোষ আগাগোড়াই ঈশানের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন। শিক্ষক দিবসে ঈশানের বাড়িতে রবিবার সকালে পৌঁছে গিয়েছিলেন ফুলের তোড়া,মিষ্টি এবং কিছু বইপত্র নিয়ে। তিনি জানিয়েছেন,’এবারের শিক্ষক দিবস আমার প্রিয় ছাত্রের সঙ্গে কাটিয়ে বেশ ভালো লাগছে।’

ঈশানের মা পার্বতী ব্যানার্জি শিক্ষকের এহেন উদ্দোগে আনন্দে চোখের জল ঠেকাতে পারলেন না। তিনি জানিয়েছেন,’আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই শারীরিক দিক দিয়ে বিশেষভাবে সক্ষম। বড় হয়েও হাঁটাচলা, কথাবার্তার ক্ষমতা ওর নেই। আমরাই ওকে স্কুলে নিয়ে যেতাম এবং পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করছি। ওদের স্কুলের শিক্ষক আজকের দিনে আমাদের বাড়িতে আসায় খুব ভালো লাগছে।’

শিক্ষক দিবসে একজন শিক্ষক তার প্রিয় ছাত্রের বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার জন্য খুশি গ্রামবাসীরাও। শিব শেখর গন নামে স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজসেবী জানিয়েছেন,’ সত্যিই এক অপূর্ব দৃশ্য। এমন শিক্ষকই তো আমরা চাই। প্রিয় ছাত্রের বাড়িতে এসে তার সঙ্গে দিনযাপন, আজকের দিনে দেখে খুব ভালো লাগল।’ অন্যরাও এহেন শিক্ষকের কাজকে অনুসরণ করুক। আমরা মৃন্ময় বাবুর মত আদর্শ শিক্ষককে কুর্নিশ জানাই।