আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: অবতক খবর :: ১১ই,ডিসেম্বর :: নয়াদিল্লি :: টানা ৭ ঘণ্টা বিতর্ক শেষে গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর পার্লামেন্টের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১, বিপক্ষে ৮০। বিল পাসের জন্য দেওয়া ভাষণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা যাঁরা ধর্ম, প্রাণ ও সম্মান রক্ষার তাগিদে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
নাগরিকত্ব তাঁদেরই দেওয়া হবে যাঁরা এই তিন দেশ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে চলে এসেছেন। আগের আইন অনুযায়ী ১২ বছর ভারতে থাকলে কেউ নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হতেন।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছে। তবে উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অধিকাংশকেই এই বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় বিভিন্ন রাজ্যের যে যে অংশ রয়েছে এবং ‘ইনার লাইন পারমিট’ (আইএলপি) যে রাজ্যগুলোয় চালু রয়েছে, সেখানে এই আইন বলবৎ হবে না। আইএলপির আওতায় মণিপুর ছিল না। তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অমিত শাহ জানান।নাগরিকত্ব দানের জন্য এই তিন দেশকে বেছে নেওয়ার কারণ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিন দেশেরই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সরকার এই তিন দেশের লাখো শরণার্থীকে নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই এই সংশোধন সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে না। তাই এই উদ্যোগ অসাংবিধানিক নয়।
অমিত শাহ জানান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে দিনের পর দিন সংখ্যালঘুদের হার কমছে। বাংলাদেশের হিসাব জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল ২২ শতাংশ। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে। তাঁর প্রশ্ন, এই মানুষজন কোথায় গেল? তাঁর উত্তর, হয় তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন করা হয়েছে, নয়তো খুন করা হয়েছে। কিংবা অত্যাচারিত হয়ে তাঁরা ভারতে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এই অত্যাচারিতদের আমরা রক্ষা করতে চাই। সম্মান দিতে চাই।’
অমিত শাহ আরও বলেন, পক্ষান্তরে ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। ১৯৫১ সালে ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের হার ছিল ৮৪ শতাংশ। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৯ শতাংশ। পাশাপাশি, ওই সময়ে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমানে ১৪ শতাংশের বেশি। তিনি বলেন, এর অর্থ, ভারতে ধর্মের কারণে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত নন।
বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন বাংলাদেশের হিন্দুরা সুরক্ষিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর হত্যার পর সংখ্যালঘুদের প্রতি অত্যাচার বেড়ে যায়। বিএনপির নাম করে তাদের আমলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কী রকম অত্যাচার, কী ধরনের গণধর্ষণ হয়েছে, সেটাও উল্লেখ করেন তিনি। কোথায় কত মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে তা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর ফলে হাজার হাজার সংখ্যালঘু ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। অমিত শাহ অবশ্য শেখ হাসিনার শাসনকালের প্রশংসা করেন। বলেন, এই আমলে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।
অমিত শাহ বলেন, এই আইনের ফলে ভারতের মুসলমানদের বিন্দুমাত্র আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। কারণ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে পার্থক্য কী, তা স্পষ্ট করেছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, যাঁরা ধর্ম রক্ষার তাগিদে প্রাণ হাতে করে এ দেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরাই শরণার্থী। আর যাঁরা লুকিয়ে–চুরিয়ে এ দেশে চলে আসছেন, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী। শরণার্থীদের ভারত আশ্রয় দেবে, অনুপ্রবেশকারীদের নয়।