একটি পুরনো স্মৃতিঃ
চলে গেলেন জীবন পাত্রের সুধা ঢেলে প্রান্থ এক দর্শক, গবেষক সুধীর চক্রবর্তী। ১৫ ডিসেম্বর,২০২০
তাঁকে সামনে রেখে আমার এই লেখা

সুধীরের প্রস্থান
তমাল সাহা

শীতের প্রহরে জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে
কুয়াশার ভেতর দু একটি নক্ষত্র
ঝরে পড়ে মাটির দিকে।
কাকে খুঁজে তার পায়ের কাছে
পড়ে থাকতে চায় সেই পতনশীল নক্ষত্রটি?

মাটির মানুষের সঙ্গে
চলমান জীবনের সান্নিধ্যে
পৌঁছোতে চায়
সেই সৌর জাগতিক ঋক্ষমন্ডলের
কিছু কিছু অংশীদার।

মাটিকে ভালোবাসে যে
সে তো মানুষকে ভালোবাসবেই
চাষিপাড়া কলুপাড়া কুমোরপাড়া কামারপাড়া ধাইমাসি বাটনাবাটা মাসি
শিলপাটা কুটালার গান—
এসবের ঘনিষ্ঠ আয়োজনে মনন গড়ে উঠলে
মানুষটি পদাতিক থেকে পরিব্রাজকের পূর্ণতা পায়।

চোখ তো সকলেরই থাকে দৃষ্টি থাকে কজনের?
পথিক প্রজ্ঞা পর্যবেক্ষণ সম্পৃক্ত হলে
কোনো মানুষ খুলে দেয়
জীবন ঐশ্বর্যের জানালা কপাট।
পরিব্রজনের নেশায় মেতে উঠলে
মানুষ মাধুকরী ছাড়া আর কি চাইতে পারে?

এই যে বিচিত্র মানবজীবন
ফকিরনামা বাউল জীবনের মহিমা
দেহতত্ত্বের মধুরিমা সে তুলে ধরে আর
আমাদের জীবন শিক্ষক হয়ে যায়।

নির্জনতার মধ্যে কি খুঁজে পায়
ঋষিকল্প দ্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ
নির্জনতায় নৈঃশব্দের মধ্যে
যে শব্দ লুকিয়ে থাকে
সে আমাদের তার অন্বেষণে নিয়ে যায়।

পতিত মানবজমিনকে সেও আবাদ
করতে চায় কলমের ধারাভাষ্যে
সে তো আমাদের জন্যেই।
লোকজীবনের আধারে
সেও গেয়ে ওঠে গান
লোকসংস্কৃতিকে সে দেখে অনন্য দৃষ্টিতে
মানুষ চেনায় সে।
ভবের হাটে দুনিয়াদার এই
মানুষকে নিয়ে খেলা ক’রে
আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয় ধ্রুবপদ।

পুনশ্চঃ

জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা!
সৌভাগ্য আমার কোনোদিন
দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে কৃষ্ণনগরে
কাঁচরাপাড়ার লিচুবাগানে অনুষ্ঠিত এক শারদ সম্মান উৎসবের তাঁকে সম্বর্ধনার দেবার আয়োজনের কারণে।
তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলুম আমরা– আমি, অনুষ্ঠানের আয়োজক।
কথা দিয়েছিলেন শরীরে জুত থাকলে তিনি অবশ্যই যাবেন
কিন্তু তিনি আসেন নি,আসতে পারেন নি।
পরবর্তীতে আমার হাতে লেখা মানপত্র, একটি স্মারক এবং শাল আমরা পৌঁছে দিয়েছিলাম তাঁর বাড়ি।
এও এক ঘটনা হয়ে রইলো আমার জীবনে।

১৫.১২.২০২০ রাত ৯-৪০।