বসন্তের বজ্রনির্ঘোষে উত্তাল বঙ্গোপসাগরীয় হাওয়া। ১২- ১৩ আগস্ট,২০২২, একান্ন বছর।
কাশীপুর-বরানগর অঞ্চলে শত শত বিপ্লবী যুবককে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের লাশ ভেসে গিয়েছিল গঙ্গায়। রতনবাবূ ঘাট, শিলাঘাট, প্রামাণিক ঘাটে ভেসে ওঠে শত শত ‘নকশাল’-এর লাশ। বরানগর পোস্টাপিসের কাছে, কাশীনাথ দত্ত রোড, রতনবাবু রোড, চন্দ্রকুমার রায় লেন, রুস্তমজি পার্শি রোড কোথায় না পড়েছিল লাশের পর লাশ! কোনো যুবকের মাথা নেই ধড় আলাদা, চোখ খোবলানো, কারো পা আছে তো মাথা নেই, কারো নাড়িভুঁড়ি বার করা। কুচিঘাট রোভে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ। টাঙানো ছিল তালিকা। খুন করা হচ্ছিল আর নিহতদের নাম উঠে যাচ্ছিল তালিকায়।
নিহতদের নাম এতো তেজি ভয়ঙ্কর! তালিকায় আর ধরে না। শেষ পর্যন্ত তালিকা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ঘাতক বাহিনী। নিহতদের যাতে শনাক্ত না করা যায়, মুখে আলকাতরা মাখিয়ে রিক্সা আর ঠেলা গাড়িতে তোলা হয়। এতো লাশ হে ধরিত্রী তুমি লুকাবে কোথায়?

শোনো, প্রজন্ম শোনো!
সির্দ্ধার্থশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে তখন শাসন জমানা। রঞ্জিত গুপ্তের পরিচালনায় দেবী রায়, রুনু গুহনিয়োগীরা তখন ফায়ারিং স্কোয়াডের মাতব্বর। বেমালুম গায়েব করে দেবার জন্য লাশগুলি ভাসিয়ে দেওয়া হলো গাঙ্গেয় প্রবাহে। উদ্দাম জল স্রোতে লাশগুলি ছুটতে থাকলো মহাসমুদ্রের দিকে!

সে এক ইতিহাস
তমাল সাহা

একটি দিন পালনে
সমবেত বন্ধু-বান্ধবআত্মীয়-স্বজন।
কেক কাটে, মোমবাতি জ্বলে
মায়ের হাতে তৈরি পায়েস মুখে তুলে নেয় জাতক
মাথায় দুব্বো-ধান
কপালে প্রদীপের আলোর উষ্ণ টিপ
আশীর্ব্বাদ শব্দটি পেতে থাকে কান।

মা বলে, মানুষের জন্যই তোকে গর্ভে ধারণ।
লড়াইয়ে থাকবি তুই, এতো বিশেষ আমন্ত্রণ।

জীবন! জীবন! তুই বেঁচে থাক।
মানুষের পাশে থাকিস তুই
যতই বিপদ কাছে এসে দাঁড়াক।

আবার এমন উজ্জ্বল একটি দিনও আসে
যখন তুই বা তোরা নেই
তবুও পালন হয় দিনটি তর্পণে শ্রদ্ধায়।
অন্তিম দিনের কথা স্মরণ করে
মাথা নিচু হয়, অবনত চোখ বাষ্পে ছেয়ে যায়।

তুই ছিলি, তোরা ছিলি
ভাবি আর ভাবি স্মৃতিভারে ক্লান্ত হই
ভেসে ওঠে ছবি চোখের তারায়।
ছিন্নমূণ্ড ধড় পড়ে আছে ময়দানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে
কত লাশ ভেসে যায় যায় জাহ্নবী-গঙ্গায়।

পঞ্চাশ বছর পরেও
তোদের কথা মনে থাকে, মনে পড়ে।
তোরা তো চাস নি তেমন কিছুই
রৌদ্র চেয়েছিলি শুধু ঘরে ঘরে।