স্কুলে প্রায় ১৭ হাজার কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব তৈরি হয়েছে।
প্রতি স্কুলে একজন করে এই শিক্ষক দেওয়ার উদ্দেশ্যেই প্রস্তাব। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই নিয়োগ শেষ করতে পারলে তৃণমূল সরকার যে অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে যাবে, তা বলাই যায়। উত্তর প্রাথমিকে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তাই প্রচুর কম্পিউটার শিক্ষকও প্রয়োজন হবে। সেকথা মাথায় রেখেই সরকার এগচ্ছে বলে খবর।
জানা যাচ্ছে, এখন যে পাঁচ-ছ’হাজার আইসিটি শিক্ষক রয়েছেন, তাঁদের সবাইকে এর অধীনে আনা সম্ভব নয়। কারণ, অনেকের গ্র্যাজুয়েশন নেই। আবার অনেকের মাত্র ছ’মাসের প্রশিক্ষণ রয়েছে। কিন্তু যাঁদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রয়েছে, তাঁদেরকে এর অধীনে আনার চেষ্টা করা হবে। তবে, এই শিক্ষকদের অবদানও মাথায় রাখতে হচ্ছে। একটা সময় এই আইসিটি শিক্ষকরাই স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষার ভার সামলেছেন।
অনেক আর্থিক বঞ্চনা মেনে নিয়েও কম্পিউটারের ‘অ আ ক খ’ শিখিয়েছেন পড়ুয়াদের। কিন্তু, যোগ্যতা না থাকলে তাঁদের নিয়ে সরকার অপারগ। মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়া গেলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। কিন্তু তার আগেই এই আইসিটি শিক্ষকদের এর অধীনে আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নতুন কম্পিউটার শিক্ষকদের এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে না। কিন্তু কীভাবে তাঁদের নিয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এই চাকরি স্থায়ী (চুক্তিভিত্তিক নয়) হলেও তাঁদের কনসলিডেটেড পে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের স্কিল ডেভেলপমেন্ট-এর প্রকল্প থেকেও টাকা মিলতে পারে বলে আশা করছেন আধিকারিকদের একাংশ।
বর্তমান আইসিটি শিক্ষকদের বঞ্চনার ইতিহাস বহুদিনের। সরকার অধীনস্থ সংস্থা ওয়েবেল থার্ড পার্টি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই শিক্ষকদের নিয়োগ করেছিল। কিন্তু সরকারি অর্থ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে শিক্ষকদের হাতে পৌঁছনোয় সেটা অনেকটাই কমে যাচ্ছে। রেহানা পারভিন, মোসাব্বর গাজিরা বলেন, আমরা ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর মতো যাবতীয় সরকারি প্রকল্পের কাজও করে থাকি। কিন্তু বেতন পাই সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা।
রেহানা বলেন, সরকার যা বরাদ্দ করে তাতে আমাদের বেতন প্রায় ২২ হাজার টাকার মতো হওয়া উচিত। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাদ দিয়েই এই বেতন দেওয়া যায়। কিন্তু তার একটা ভগ্নাংশ আমরা পাচ্ছি। আমাদের ৫২ দিনে বেতন হয়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল কম্পিউটার টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক ভূপেশ কেশ বলেন, আমরা গোটা রাজ্যে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার জন শিক্ষক রয়েছি। বর্ধিত বেতনের দাবি নিয়ে একাধিকবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, আমাদের বিষয়টি তিনি দেখবেন। কিন্তু থার্ড পার্টির বিষয় থাকায় সরকার সরাসরি কিছু করতে পারছে না।
ডিসেম্বর পর্যন্ত থার্ড পার্টির সঙ্গে এই চুক্তি রয়েছে বলে জানি। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২ এপ্রিল মিন্টো পার্কের কাছে বিপুল জমায়েত করেছিলেন এই শিক্ষকরা। ছত্রভঙ্গ করতে পুলিসকে লাঠি চালাতে হয়। অন্তত ১০ জনের বিরুদ্ধে এখনও মামলা চলছে। তার জেরে ১৪ আগস্ট একটি অর্ডার জারি করে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। ওই দপ্তরের ল, প্ল্যানিং এবং বাজেট বিভাগের কমিশনার তরুণকুমার মুখোপাধ্যায় সেই অর্ডারে ওয়েবেলকে নির্দেশ দেন, এই শিক্ষকদের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা করতে হবে।
৩ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্টও দিতে হবে। ১ আগস্ট থেকেই তা কার্যকর করতে বলেন। কিন্তু তা হয়নি। তৃণমূল শিক্ষাসেলের আহ্বায়ক জয়দেব গিরি বলেন, আইসিটি শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষা করেই নিয়োগ করুক সরকার। তৃণমূলের কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর মনোজ চক্রবর্তী বলেন, থার্ড পার্টির কনট্র্যাক্ট আমি বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম সরকারকে