আমাদের স্বাধীনতা অ্যাক্রোব্যাট জানে। যেখানে সেখানে উড়তে জানে। কিভাবে ওড়ে, দেখুন
স্বাধীনতা উড়ে যায়
তমাল সাহা
স্বাধীনতাকে সেদিন দেখলাম
শুয়ে আছে ত্রিধারা আলোর নিচে,
মাথার কাছে ছোট এনামেল বাটি।
আড়াই লাখ মানুষ থাকে ফুটপাথে
আলোয় ভেসে যায় সুতানুটি।
স্বাধীনতাকে সেদিন হাঁটতে দেখলাম
কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে,গুয়াহাটির পথে
একটি মেয়েকে তুলে নিল চারচাকার গাড়ি,
অন্যটিকে নিয়ে খেললো গভীর রাতে।
স্বাধীনতা সেদিন প্লাটফর্ম দিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে উঠে পড়লো ট্রেনে।
ছোট মেয়েটার পাশ থেকে
মাকে টেনে নিয়ে ছুট দিল
ঝোপের ঐ কোণে।
স্বাধীনতাকে সেদিন দেখলাম
হাতে তুলে নিল রাষ্ট্রীয় মেশিনগান
বস্তারের জঙ্গলে গুলি খেল স্বাধীনতা
আছড়ে পড়ল মাটিতে সটান।
নোনাবস্তিতে সেদিন
বুলডোজার নিয়ে খেলছিল স্বাধীনতা
খেলনা বাড়ির মতো ভেঙে চুরমার–
চাটাইয়ের বেড়া,পলিথিনের ছাদ
উড়ে যাচ্ছিল বাংলা-ভূগোলের পাতা।
দ্রুত পায়ে স্বাধীনতা সেদিন
ঢুকে পড়ল স্কুলবাড়ি
মাস্টারমশাইদের দিল গলা ধাক্কা
মাথা ফাটলো কারো
স্বাধীনতা কিছুক্ষণ মাটিতে গড়ালো
তারপর কটা দিন হাসপাতালে শুয়ে কাটালো।
স্বাধীনতা সেদিন ফলিডল খেয়ে
পড়ে রইল শূন্য মরাইয়ের পাশে,
চাষিবৌয়ের শরীরে উঠল সাদা থান।
একদিন জ্বলে উঠল পূর্ণিমার চাঁদ
স্বাধীনতা ঝুলে রইলো
উঠোনের আমগাছের ডালে
রইল পড়ে মহাজনী কর্জের খাতাখান।
স্বাধীনতা গাঙ্গেয় স্রোত ধরে
যেতে যেতে দেখলো ডানলপ গেটে তালা
চিমনি বেয়ে উঠে পড়লো মাথায়,
দিল মরণঝাঁপ।
স্বাধীনতা গেয়ে উঠলো–
ঊর্দ্ধগগনে বাজে মাদল
ভ্যাম্পর ভ্যাম্পর ভ্যাম্প…
জলে ডুবে যায় নোকরিখোয়া বাপ।
স্বাধীনতা অনেকদিন বসে আছে থানায়।
থানেদার বলে,কী অভিযোগ তোর?
তুই তো লালটুস মেয়ে!
তোর ইজ্জতের শংসাপত্র নিয়ে আয়।
স্বাধীনতা পুরুষ না নারী–
লিঙ্গ নির্ধারণে পুলিশ ছুটে যায়।
স্বাধীনতার সঙ্গে মুখোমুখি কথা হলো
কাঁকড়াঝোড়ের ত্রাণ শিবিরে।
এর আগে একদিন স্বাধীনতা
ন্যাংটো হয়ে দৌড়েছিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়।
মণিপুর সেনাদপ্তর সদর দরোজায়
উদোম শরীর দেখিয়ে
স্বাধীনতা বলে,রেপ করবি আয়!
ভুবনডাঙার মাঠে বিশাল জমায়েত
মন্ত্রী তখন মঞ্চে
অতর্কিতে উঠে দাঁড়ালো স্বাধীনতা
জানালো চাষির কথা সাচ্চা,
পুলিশ ঘাড়ে ধরে পাকড়ালো
স্বাধীনতা তখন জঙ্গি এক বাচ্চা।
স্বাধীনতাকে দেখলাম
লুম্পেন যুবক যেন
কখনো সবুজ কখনো গেরুয়া
কখনো লাল জামা গায়।
মার্চপাস্টে মেতেছে–নিম্নে উতলা ধরণীতল
স্বাধীনতা! এখন পাড়ায় পাড়ায়।
স্বাধীনতা সব জানে–
স্বাধীনতা জিমে যায়।
অ্যাক্রোব্যাটের কসরত দেখিয়ে
ফি বছর উঠে পড়ে
একটি দন্ডের মাথায়–
ভ্যাম্পর ভ্যাম্পর ভ্যাম্প…
স্বাধীনতা উড়ে যায়…