অবতক খবর,১৭ সেপ্টেম্বর,বাঁকুড়া:- দিল্লীতে তখন মোঘল আগ্রাসন, আর এই মোঘলদের পৃষ্টপোষকতা নিয়ে মল্লগড় অর্থাৎ লালামাটির বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মল্ল রাজারা। শুধু শাষনভারেই নিবদ্ধ থাকাই নয় অনেক সাস্কৃতিক দিকের সাথে সাথে দেবদেবীর পূজোকে নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিল মল্লশক্তি।তারই এক স্মৃতি জড়িয়ে আদ্যা শক্তি মা মহামায়া পুজোয়, রোমহর্ষক সেই ইতিহাস শুনুন।
আজ থেকে আনুমানিক ৬০০-৭০০ বছর পূর্বের ঘটনা। কথিত আছে বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া ব্লকের সাহারজোড়া গ্রাম। এক প্রত্যন্ত চাষী একদা নিজের জমিতে লাঙল দিয়ে চাষাবাদ করছিলেন ঠিক তখনই লাঙল চাপে মাটির তলা থেকে একটি শিলা পাথর বেরিয়ে আসে। লাঙলের আঘাতে শিলা পাথরের গা দিয়ে বেরিয়ে আসছিল রক্ত, গোটা জমি রক্তে ভেসে গেলে সেই কৃষক রক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি গ্রামবাসীরা ছুটে যান ঐ স্থানে এরপর খবর পাঠানো হয় তৎকালীন বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজার কাছে। তৎকালীন মল্ল রাজা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন এবং সেই দিনে দুপুরবেলায় রাজাকে স্বপ্নাদেশে মা মহামায়া তার প্রস্তরখন্ডকে পুজো দিতে বলেন। তৎকালীন রাজা ও গ্রামবাসীদের দ্বারা শুরু হয় সাহারজোড়া গ্রামে আদ্যা শক্তি মা মহামায়ার পুজো।বেশ কয়েক বছর পূর্বে তৎকালীন মল্ল রাজা ওই স্থানে মূর্তি পুজো করতে গেলে পূজার তিন দিনের জন্য নিজে থেকেই মন্দিরের গেট বন্ধ হয়ে যায়, পুনরায় মা স্বপ্নাদেশ দেন ওই গ্রামে কোন দেবীর মূর্তি পূজা করা চলবে না মায়ের প্রস্তরখন্ড এবং অন্যান্য দেবীদের ঘটেই পুজো সারতে হবে। মায়ের নির্দেশে আজও সাহারজোড়া গ্রামে কোন দেবীর মূর্তি পূজা হয়না। এর বেশ কয়েক শতক পেরিয়ে যাবার পরে তৎকালীন মল্ল রাজারা সাহারজোড়া এলাকার জমিদারি তালুক বিক্রি করে দেন আসানসোলের বেলভুই জমিদারদের কাছে কিন্তু মহামায়া মন্দিরটি পূজার্চনা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামবাসীকে। সেই পুরনো রীতি নীতি মেনে আজও গ্রামে ওই শিলাখণ্ডকে মা মহামায়া রূপে পুজো করে আসছে গ্রামবাসীরা।
ইতিহাস যায় হোক না আশ্বিনের শারদপ্রাতে নীল আকাশে পেঁজা তুলো আর কাশকে সাক্ষীরেখে আদ্যা শক্তি মহামায় আবার পূজিত হবার জন্য মর্ত্য লোকে আসতে চলেছেন। আবার ঠাকুর দালানে ১০৮ ভোগের থালা পড়বে, আবার ঠাকুর মশাইের মুখ মন্ত্র পড়ে লাল হবে, আবার আপামোর বাঙালী শারদীয়ার নেশায় মাতবে। তবে হ্যাঁ এবারের পূজোটাও শাস্ত্র বিধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোক।