অবতক খবর,৩১ মে,মালদা:- এক দিকে যেখানে পুরুলিয়া জেলার প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমি সংস্কার দপ্তরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সেখানেই মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে আবার ভূমি সংস্কার দপ্তরের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে এবং অর্থের বিনিময় পাট্টা জমি হস্তান্তর করার অভিযোগ উঠল। হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার এক গ্রামের এক পাট্টায় পাওয়া বৃদ্ধের কাছ থেকে জোরপূর্বক মারধর করে জমি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল এলাকার তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে আহত বৃদ্ধকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুয়া গ্রামে।
গোটা ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে। যদিও পাল্টা অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মুক্তারের দাবি জমি তার পূর্বপুরুষের। তাদের নামে রেকর্ড রয়েছে। এই ঘটনায় দুই পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এই ঘটনায় তদন্ত নেমেছে পুলিশ। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক ফখরুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।অন্যদিকে ঘটনার অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি মুক্তার তৃণমূলের কেউ না। বরঞ্চ আক্রান্ত ব্যক্তিরা তৃণমূলের সদস্য। পাশাপাশি তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূলের বিধায়ক তজমুল হোসেন।
অপরদিকে তৃণমূল পরিচালিত রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর দাবি মুক্তার এলাকারই তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হাত ধরে বেশ কয়েক বছর আগে তৃণমূলে যোগদান করে, এলাকার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষও জানেন। গোটা ঘটনায় আবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এসে পড়েছে। যদিও রাজ্য-জুড়ে তৃণমূল নেতাদের প্রভাবে ভুরি ভুরি কেলেঙ্কারি চলছে। মানুষ সব দেখছে আগামী নির্বাচনে এর জবাব দেবে। গোটা ঘটনায় ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিকদের মদদ রয়েছে তীব্র খোঁচা জেলা বিজেপি সম্পাদক কিষান কেডিয়ার। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বীরুয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেরা খাতুনের নামে বাম আমলে ১৫ কাঠা জমি পাট্টা পাওয়া গিয়েছিল। সেই জমিতে সাবেরা খাতুন ও তার পরিবার চাষবাস করে সংসার চালাচ্ছিলেন। গত বছর থেকে এই জমি দখল নিয়ে ওই এলাকার জমিদারের বংশধর তথা এলাকার তৃণমূল নেতা মুক্তার ও তার দলবল সাবেরা খাতুন ও তার পরিবারের উপর হামলা চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। এমনকি জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অস্ত্রশস্ত্র লাঠি-সোটা নিয়ে একাধিকবার আক্রমণ চালায় বলে অভিযোগ। গত শনিবার দুপুর বেলায় দলবল নিয়ে মুক্তার সবেরার পাট্টা জমি দখল করে নেয় এবং সেখানে টিনের ঘর তুলতে শুরু করে। সাবেরা ও তার স্বামী ফায়েদ বাধা দিতে গেলে মুক্তারের দলবল তাদের ব্যাপক মারধর করে।
এমনকি অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। মারের চোটে গুরুতর আহত হয়ে পড়ে সাবেরার বৃদ্ধ স্বামী। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বলে পরিবার সূত্রে খবর। গোটা ঘটনায় হরিশ্চন্দ্রপুর ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দিকেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে। আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ মোটা টাকার বিনিময়ে ভূমি সংস্কার আধিকারিক ওই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার মদদ করেছে। বেআইনি ভাবে রাতের অন্ধকারে পাট্টা জমি ওই তৃণমূল নেতার নামে রেকর্ড করিয়ে দিয়েছে।গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে।
পাট্টা প্রাপক সাবেরা খাতুন জানান জমিটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করে আসছি। আমাদের নামে পাট্টা ও আছে। ওই জমিটি জোর করে আমাদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে এলাকার তৃণমূল নেতা মুক্তার। বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়েছে জমিটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। গত শনিবার লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ করে আমার স্বামীকে বেধড়ক মারধর করে। আমার স্বামী এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।
অন্যদিকে আক্রান্ত ফায়েদের মেয়ে ফাহিমা সুলতানা জানান আমরা ভূমিহীন পরিবার। ওই জমিটি ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই। ওই জমিতে চাষবাস করে আমাদের সংসার চলে। এলাকার ভূমি সংস্কার আধিকারিকের পয়সা খাইয়ে ওই তৃণমূল নেতা মুক্তার আমাদের জমি দখল করেছে। জমিটি পাটটায় আমার মাকে দেওয়া হয়েছিল। তার সমস্ত কাগজ পত্র আমাদের আছে। জমি দখল করতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে। শনিবার দিন সেখানে জোর করে ঘর তুলতে গিয়ে ছিল ,আমরা বাধা দেওয়াতে আমার বাবাকে ব্যাপক মারধর করে।
এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূলের বিধায়ক তজমুল হোসেন। তিনি দাবি করেছেন জমিটি পাট্টার। দীর্ঘদিন ধরে ওই পরিবারটি জমিটি ভোগ দখল করছে। তিনি জানান অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি মুক্তার তৃণমূলের কেউ না। বরঞ্চ আক্রান্ত ব্যক্তিরা তৃণমূলের সদস্য। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভূমি সংস্কার দপ্তরের কেউ জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
যদিও রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পুষ্পা রবি দাসের স্বামী সদানন্দ রবি দাস জানান অভিযুক্ত মুক্তার এলাকারই তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হাত ধরে বেশ কয়েক বছর আগে তৃণমূলে যোগদান করে। এখনো তৃণমূলী আছে। তবে জমি দখলের ঘটনা তার জানা নেই। এমনকি তিনি দাবি করেন মুক্তার তৃণমূলে যোগদান করেছেন এটা এলাকার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষও জানেন।গোটা ঘটনায় আবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এসে পড়েছে।
যদিও অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতা মুক্তার জানিয়েছেন তাদের পরিবারের অনেক জমির পাট্টা হয়েছে। কিন্তু ওই জমিটি পাট্টার নয়। জমিটি তাদের নামে রেকর্ড রয়েছে। এই জমি সম্পর্কের বিধায়ক তাজমুল হোসেনের কোন ধারণা নেই। তাই তিনি ভুলভাল বকছেন। তাই তিনি ওই জমির দখল নিতে গিয়েছিলেন। হয়তো তার পরিবার বেআইনি ভাবে তাদের জমি ভোগ দখল করছে।এই নিয়ে থানা তো আমরা অভিযোগ করেছি।
এদিকে গোটা ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ করেছে এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব। জেলা বিজেপি সাধারণ সম্পাদক কিষান কেডিয়া জানান আমরা জানি পাট্টা জমি হস্তান্তর করা যায় না। কিন্তু কি ভাবে কার মদদে পাট্টার জমি এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার নামে হয়ে গেল সেই বিষয়টা প্রশাসন খতিয়ে দেখুন। রাজ্য-জুড়ে তৃণমূল নেতাদের প্রভাবে ভুরি ভুরি কেলেঙ্কারি চলছে। মানুষ সব দেখছে আগামী নির্বাচনে এর জবাব দেবে। গোটা ঘটনায় ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিকদের মদদ রয়েছে। এখন তৃণমূল তৃণমূলদের জমি দখল করে। এটাই তৃণমূলের কালচার।
এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানান ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।