হরিশ্চন্দ্রপুর,২৮ মে: হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত এলেঙ্গী গ্রামে ধানের জমির মাটি খুঁড়ে ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টা কাটার আগেই দুই খুনিকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ। পুলিশের নিজস্ব সূত্র ও মৃত ছাত্রীর মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে চাঁচল-২ ব্লকের ধানগাড়া বিষণ পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শাহাবুল হক (প্রেমিক) ও শামীম আক্তার নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।এদিন ভোরে ভোরে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিস তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন
হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানিয়েছেন, প্রণয়ঘটিত ব্যাপারেই মেয়েটিকে পিছু ছাড়ানোর জন্যই শাহাবুল ও তার পিসতুতো দাদা শামীম আখতার দুজনে মিলে শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে মেহেরুন খাতুনকে মাটিতে পুঁতে ফেলে। পুলিশ আরও জানিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিন মাস আগে পরিচয় হয় শাহাবুল ও মেহেরুনের। সেই পরিচয় আস্তে আস্তে প্রণয়ের রূপ নেয়। একে অপরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ শুরু করে শাহাবুল ও মেহেরুন। কিন্তু তাদের প্রণয় পরিণয়ে রূপ নেওয়ায় আগেই অকালে ঝরে যেতে হলো দশম শ্রেণীর ছাত্রী মেহেরুনকে। শাহাবুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে মেহেরুন। তখন, শাহাবুল মেহেরুনকে নিজের গ্রামে ডেকে নেয়। প্রেমিকের ডাকে দিন দশেক আগে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যায় শাহাবুলের বাড়ি। এতে শাহাবুল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তার প্রেমিকা যে সত্যি সত্যি বিয়ের প্রলোভনে তার বাড়ি চলে আসবে এমনটা ভাবতে পারেনি সে। তার বাড়ির লোকজন যাতে বিষয়টি জানতে না পারে সেই জন্য সে তার প্রেমিকাকে লুকিয়ে রাখে তার নিজের পিসতুতো দাদা শামীম আখতারের বাড়িতে। এদিকে, বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পরেও শাহাবুল তাকে বিয়ে না করায় দুশ্চিন্তা গ্রাস করে ওই ছাত্রীকে। শাহাবুল তাকে সাফ জানিয়ে দেয়, এখনই তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। কারণ তার পরিবার বেঁকে বসেছে। ওই ছাত্রী তখন জানায় সেখান থেকে ফিরে গিয়ে নিজের বাড়িতে সে সবকিছু জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করবে। পুলিশের কথা শুনেই শাহাবুল ও শামীম দুজনেই ফেঁসে যাওয়ার ভয় পেয়ে যায়। ফলে তারা মেহেরুনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে। এমাসের ২৩ তারিখে শামীম মেহেরুনকে বলে সে তার বিয়ের ব্যবস্থা করবে। পরিকল্পনা মতো শাহাবুল ও শামীম রাতের অন্ধকারে মেহেরুনকে প্রতিবেশী এলাঙ্গী গ্রামের মাঠের দিকে নিয়ে যায়। সেখানেই প্রথমে মেয়েটির ওড়নার ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করার পরে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ধানের জমিতে পুঁতে দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের শুক্রবার চাঁচল আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মেহেরুন খাতুনের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরের রাঙাইপুর গ্রামে। বুধবার তার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিমি দূরে এলেঙ্গী গ্রামে। মেহেরুনের মা জেলেখা বেওয়া জানান, মেয়ে চিতলীয়া হাইমাদ্রাসায় দশম শ্রেণির ছাত্রী। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় বোনকে একটি এ্যান্ড্রয়েড সেট কিনে দেয় দাদা আহমদ হাসান। ওই ফোনেই একটু পড়াশোনা করছিল সে। কিন্তু এর মাঝেই কখন যে মেহেরুন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তা কেউ আঁচ করতে পারেনি। মেয়ের খুনিরা ধরা পড়ায় তাদের চরম শাস্তি দাবি করেন শোকার্ত মা জেলেখা বেওয়া।মালদা হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে নিজাম আক্তারের রিপোর্ট|