অবতক খবর,১৯ নভেম্বরঃ তৃণমূল দলের বহু পুরনো কর্মী এবং বর্তমানে হালিশহর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাস। বারবার তিনি শিরোনামে উঠে আসছেন। কিছুদিন আগেই তিনি হেনস্থা হয়েছিলেন নিজের দলের কর্মীর হাতেই। আর সেই নিয়েই তোলপাড় হয়েছিল বীজপুরের রাজনীতি। তাঁর খোঁজখবর নিতে মন্ত্রী,সাংসদ,বিধায়ক,প্রাক্তন বিধায়ক সকলেই তাঁর কাছে এসেছিলেন। তবে এখন তিনি কার্যত কোনঠাসা হয়ে আছেন। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
বীজপুর অঞ্চলের দায়িত্বে এখন যারা রয়েছেন তারা বুঝে উঠতে পারছেন না যে, মৃত্যুঞ্জয় দাস এখন কোন পক্ষে!
এই কথা আমরা বলছি কারণ ১৮ই নভেম্বর হালিশহর ৪ নং ওয়ার্ডের মুখার্জী পাড়া গঙ্গার ঘাটে শিল্যানাস হলো মহিলাদের চেঞ্জিং রুমের।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। নারকেল ফাটিয়ে শিলান্যাস করলেন হালিশহর পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান শুভঙ্কর ঘোষ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং হালিশহর পৌরসভার সিআইসি সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। কিন্তু সেখানে ডাক পেলেন না উক্ত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর! হ্যাঁ,ঠিকই শুনছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাসকেই ডাকা হল না তাঁর ওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে। যেই সময় এই শিলান্যাস হচ্ছিল সেই সময় তিনি বাগমোড়ের একটি পার্টি অফিসে বসেছিলেন।
মৃত্যুঞ্জয় দাসকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,”আমি তো জানিই না। আমাকে তো আমন্ত্রণ করা হয়নি।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন,”কি আর রাজনীতি,কি আর এখানকার নেতা!সবই বেকার। আগের যারা বিধায়ক ছিলেন তারা কোন ওয়ার্ডের কোন অনুষ্ঠানে গেলে তার আগে সেখানকার কাউন্সিলর ও কর্মীদের ফোন করে জানিয়ে দিতেন। যাতে আমরা তাদের সঙ্গে থাকতে পারি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিধায়ক সাহেব একাই চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। কাউন্সিলররা জানতেই পারছেন না যে,তাদের ওয়ার্ডেই অনুষ্ঠান হচ্ছে এবং সেই অনুষ্ঠানে বিধায়ক আসছেন। এই তো অবস্থা। অন্যদিকে দমদম-ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার জেলা সভাপতি এখনো পর্যন্ত ঠিক করতে পারছেন না। এই তো অবস্থা দলের নেতৃত্বদের।”
তবে দল নিয়ে বলতে গেলে তিনি বলেন,”আমি দল বিরোধী কথা বলব না। আমি ব্যক্তির বিরোধিতা করব। কারণ দল আমাকে পরিচিতি দিয়েছে,দল আমাকে এই জায়গায় বসিয়ে সম্মান দিয়েছে।”
কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাস অত্যন্ত ক্ষুব্ধ যে,তাঁর ওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে তাঁকেই ডাকা হল না।
বীজপুরের রাজনীতি এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে এ নিয়ে বিরোধী দল সিপিএমের নেতৃত্বরা বলছেন, “তৃণমূল দলে তো শুধু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তারা আর কি মানুষের সেবা করবে। এই দলের সকলেই নিজের প্রচারে ব্যস্ত। আমরা হয়তো শিরোনামে কম আসি, কিন্তু আমরা সবসময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করি।”
এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বরা বলছেন,”মৃত্যুঞ্জয় দাসের কথা বলছেন! তিনি এখন কোন দলের কোন গোষ্ঠীতে রয়েছেন সেটা নিজেই বুঝতে পারছেন না।আর রইল বিধায়কের কথা! তিনি তো নিজে নিজেই সবকিছু করে চলেছেন। এই দল সম্পর্কে আমরা আর কি বলব। এদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেই তো আমাদের লাভ। তবে যা যা ঘটে চলেছে তাতে আগামীতে এই বীজপুরের রাজনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বোঝা মুশকিল। কারণ ২০২১-এর আগে অনেক পুরনো নেতৃত্বরা সম্মান পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন যে,পুরনোদের সম্মান দেওয়া হবে। কিন্তু বীজপুরে দেখা যাচ্ছে,পুরনোদের সম্মান দেওয়া তো দূর,তাদের কোনঠাসা করে ‘ওয়ান ম্যান ওয়ান লিডার’ নীতি চলছে। একটাই নেতা,বাকি সবাই ন্যাতা।”
অন্যদিকে শুভঙ্কর ঘোষ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন,”এখন কাউকেই ফোন করে কোন অনুষ্ঠানের কথা জাননো হয় না। সকলকেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানানো হয়। ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকেও হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর প্রমাণ রয়েছে। এমনকি তিনি ম্যাসেজটি দেখেছেন।তিনি এলেন না সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে প্রত্যেককেই জানানো হয়। এমনকি কাউন্সিলরদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্ৰুপেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল।”
চিত্রঃ হালিশহর পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান শুভঙ্কর ঘোষ ব্যক্তিগতভাবে কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাস (শিবা দা)কে হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়েছেন,সেই চ্যাটের স্ক্রিনশট।
চিত্রঃ হালিশহর পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান শুভঙ্কর ঘোষ কাউন্সিলর গ্ৰুপে অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন তার স্ক্রিনশট।
এদিকে এই প্রমাণ দেখার পর আমরা কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাসের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি সাফ জানান যে,”আমি হোয়াটসঅ্যাপ দেখি না। আমি জানতাম না।”