ভারত মহাসাগরের পারে এ কোন দেশ!
গাঙ্গেয় উপত্যকায় এ কোন রাজ্য?
হে মা! তুমি জন্মানোর পরই সন্তান অন্যের হাতে তুলে দাও।
তুমি এ কোন মা?
কাঁচরাপাড়া ২৩ নং ওয়ার্ড ভুতবাগান লাস্ট কোয়ার্টার। সেখানে কোনোমতে ঘর দখলদারি করে বসে আছে পার্বতী বাঁফোড়।
তার ঘরে এখনও তিনটি সন্তান রয়েছে।
কি করে সে পেটের দানাপানি জোগাড় করবে?
কি খাবে তারা?
পার্বতী বাঁশফোড় জানেনা।
পার্বতী তো অন্নপূর্ণা!
কিন্তু তার ঘরে কোন অন্ন নেই।
এবার জন্মানোর পরেই নবজাতককে সে কি করেছে কেউ জানে না।
পেট কেটে তার বাচ্চা হয়েছে জেএনএম হাসপাতালে। জহরলাল নেহেরু হাসপাতাল।
জহরলাল নেহেরুর জন্মদিন শিশু দিবস হিসেবে পালন করে এই দেশ।
কিন্তু শিশু জন্মানোর পরেই এবারের সন্তানটিকে সে কোথায় কার হাতে তুলে দিয়েছে কেউ জানে না।
তার বসতি অঞ্চলে এই নিয়ে শোরগোল।
কারণ এর আগের সন্তানকেও সে অন্য কার হাতে কোথায় কিভাবে তুলে দিয়েছে কেউ জানে না।
এবার দ্বিতীয় পর্ব।
এবারেও সে ঘরে ফিরেছে হাসপাতাল থেকে। কিন্তু তার কোলে সন্তান নেই। জিজ্ঞাসাবাদে সে কখনো বলে বাচ্চাটি কাঁচঘরে রাখা আছে। কখনো বলে মারা গিয়েছে। কিন্তু পড়শিরা তা বিশ্বাস করতে চায় না। কারণ এর আগেও সে অবিশ্বাসের কাজ করেছে।
তার গর্ভজাত সন্তানকে সে তুলে দিয়েছে কার হাতে কে জানে?
অনেক জবাবদিহির পর সে বলে সে তার সন্তানকে তুলে দিয়েছে কলকাতায় কারো কাছে।
কিন্তু কার কাছে কেউ জানে না।
পড়শিরা তাকে তার বসত থেকে উচ্ছেদ করতে চায়। কারণ এই ধারাবাহিকতা যদি অন্য প্রতিবেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে,এটা যদি সংক্রামক হয়ে পড়ে,সবাই যদি তার বাচ্চা অন্যের হাতে তুলে দেয়,এই ভয়ে তারা তাকে ভূতবাগানের লাস্ট কোয়ার্টার থেকে তুলে দিতে চায়।
পার্বতী বাঁফোড়ের আর কে আছে?
তার স্বামী কিষাণ বাঁশফোড়।তারও রুজির ঠিক নেই।
সে সুইপারের কাজ করে,যখন যা কাজ পায়। আর পেট ভরে চোলাই মদ খায়।
এই দেশে আর কিছু না পাওয়া যাক চোলাই মদ ভরপেট পাওয়া যায়।
তাই সে খায়।
আর বছর বছর সন্তানের বাপ হয়ে যায়।
পার্বতীও তাকে পেটে ধরে রাখে। এতে পেটের দানাপানির সুখ না থাকুক শরীরের অন্য সুখ তো হয়। খিদের সুখ তো এই সুখেই মেটে।
সে তো প্রায় বছরবিয়োনী হয়ে গেছে।
তার রক্তশূন্য দেহ। ডাক্তারবাবুরা বলে এবার বাচ্চা গতরে না নিলেই হতো না?
এর কে জবাব দেবে?
কি জবাব দেবে?
জবাবদিহিতে পার্বতী বলে,
আমি বাচ্চা তুলে দিয়েছি,আমি এই বালবাচ্চাদের খাওয়াবো কি করে?
তাদের ভরণপোষণ করব কি করে?
ভরণ পোষণ! এই দেশে ভরণপোষণের দায় নেবে কে? তোমার ভোটের দায় নেবো আমি। কিন্তু তুমি তো আমার ভাতের দায় নেবে না। ফলত,সন্তান হাতছাড়া হয়ে যায়।
কত কত পার্বতীর সন্তান এভাবে হাতছাড়া হয়ে যায়। তারা কোথায় যায়, কিভাবে আছে কে জানে।
ভোট বাবুরা জানেনা, রাষ্ট্র চালায় যারা তারা জানেনা। আমরা মানুষের জন্য কাঁদি চোখের জল ফেলি।
আমরাও জানিনা। যখন শোরগোল ওঠে আমরা একটু নড়েচড়ে উঠি। পার্বতীদের জন্য কাঁদি।
বাংলাদেশের হয়তো বা আর একটি নদী হতে পারে আমাদের এই কান্নার জলে। কিন্তু আমাদের এই কান্না পার্বতীর জন্য কোনোমতেই আগুন হয়ে ওঠে না।
কি করবে ভারতবর্ষের পার্বতীরা?
কি করবে গাঙ্গেয় উপত্যকার পার্বতীরা?
বঙ্গোপসাগরের লোনা বাতাস ছুটতে থাকে,
পার্বতীরা যাবে কোথায়?
আর তাদের সৃজন শক্তির অবাধ ক্ষমতায় তারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে আর সেই সন্তান পৃথিবীতে এসে একের পর এক হারিয়ে যায়।