আবতক খবর নিউজ ব্যুরো ঃঃ ১৩ই,নভেম্বর ঃঃ কোলকাতা ঃঃ হোমে কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। না পুরুষ, না মহিলা। নেই কোনও সিসিটিভি। জনা বারো মহিলার নিরাপত্তার দায়িত্ব বৃদ্ধাশ্রম তথা হোমের ‘মাসি’র উপর। তিনি আবার সময়মতো ঘুমিয়েও পড়েন। পাশে গেটে তালা খোলা বা ভাঙার শব্দেও ঘুম ভাঙেনি তাঁর।
শহরের বেসরকারি হোমের এহেন আচরণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পঞ্চসায়রে গণধর্ষণের শিকার নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতা যুবতীর দিদির চোখের সামনে এখনও ভাসছে বোনের রক্তাক্ত কাপড়। যেভাবে সারারাত ধরে তাঁর বোনের উপর পরপর যৌন নির্যাতন করা হয়েছে, তাতে হতবাক পরিবার। এই ঘটনার জন্য তাঁরা দায়ী করছেন হোম কর্তৃপক্ষকে। পঞ্চসায়র থানার পুলিশ অফিসারদেরও তাঁরা জানিয়েছেন, হোম কর্তৃপক্ষ আরও সতর্ক হলে তাঁদের ঘরের মেয়ের এই সর্বনাশ হত না।
নির্যাতিতার দিদি জানান, তাঁর মা ও বোন তাঁদের মতোই বেহালার বাসিন্দা। সাড়ে চার বছর বয়সে বোনের মৃগী রোগ ধরা পড়ে। তারপর থেকে বোন ভাল করে পড়াশোনাও করতে পারেননি। এছাড়াও কিছু চাওয়ার পর না পেলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন তাঁর বোন। বাবার মৃত্যুর পর মা পেনশন পান। সেই টাকায় তাঁদের চলে। পা ভাঙার ফলে মাস তিনেক ধরে মা হাসপাতালে ভরতি ছিলেন।
গত ৩০ অক্টোবর তাঁকে এই হোমটিতে ভরতি করা হয়। বোনকে দেখার কেউ নেই বলে তাঁকে কসবার একটি হোমে ভরতি করান দিদি ও জামাইবাবু। কিন্তু কসবার হোমে খরচ বেশি। তাই তিন মাস ওই হোমে থাকার পর গত সপ্তাহের শেষের দিকে বোনকে নিয়ে যান পঞ্চসায়র এলাকার হোমটিতে। ঘটনার আগে দিন চারেক হোমে তাঁকে ভরতি করা হয়।
নির্যাতিতার দিদি জানান, তাঁর বোনকে ভরতি করানোর সময় ওই হোমের মালিকের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়। মালিক বলেন, দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া অঞ্চলে তাঁর ১১টি হোম আছে। গত ২২ বছর ধরে তাঁরা হোম চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনও আবাসিক সমস্যায় পড়েননি বলে দাবি করেন হোমের মালিক। পরিবারকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলেন।
ওই মালিকের উপর ভরসা করেই পরিবারের লোকেরা ওই হোমে ভরতি করেন যুবতীকে। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, টাকা নিলেও কোনও নিরাপত্তা ছিল না হোমটিতে। কোনও পুরুষ বা মহিলা নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়নি।
যে মাসির উপর হোম দেখাশোনা ও এতজন মহিলা আবাসিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব, তিনিও সময়মতো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, কোনও সিসিটিভি ক্যামেরাও ছিল না হোমে। হোমের উলটোদিকের বাড়ির সিসিটিভিও খারাপ।
হোমের মালিক জানান, রাতে হোমে দু’জন আয়া বা মাসি থাকেন। তার মধ্যেই যেভাবে যুবতী তালা ভেঙে হোম থেকে পালালেন, তা তাঁদের ধারণার বাইরে। অথচ গত ৩০ অক্টোবর থেকে ওই যুবতীর মা এখানেই ভরতি আছেন।
এই বিষয়ে ওই ‘মাসি’কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, রাত দু’টো নাগাদ তিনি নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। একই সঙ্গে পাশের ঘরে ঘুমোতে পাঠান ওই যুবতীকেও। রাত সোয়া তিনটে নাগাদ বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠে গেটের দিকে নজর যায় তাঁর। দেখেন, গেটের তালাটি গেটের একপাশে ঝোলানো। গেটটি খোলা।
তিনি যুবতীর ঘরের দরজা খুলে দেখেন, তিনি বিছানায় নেই। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে বিষয়টি মালিককে জানান। তিনি বাইরে খুঁজতে বেরিয়ে যান। আশপাশে খোঁজ করে কোথাও যুবতীর সন্ধান মেলেনি। গত সোমবার রাতে এই ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে হোমের পক্ষ থেকে পঞ্চসায়র থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়।
নির্যাতিতার দিদি বলেন, “হোমের যে গাফিলতি রয়েছে, তা স্পষ্ট। এই বিষয়টি আমরা পুলিশকেও জানিয়েছি। হোমের মালিকও আমাদের বলেছেন, তাঁদের আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। যদিও গাফিলতির বিষয়ে কোনও অভিযোগ আলাদা করে দায়ের করা হয়নি। আমাদের আশা, অভিযুক্তদের তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।”