অবতক খবর, নদীয়া: ছিয়ানব্বই বছরেও তিনি যেন যুবক l তাঁর থেকে মাত্র তের বছর কম বয়সের তার স্ত্রী যেন যুবতী। শরীর কিছুটা অশক্ত হয়ে গেলেও মনের জোর তাদের এখনও অদম্য। দুজনের প্রতি দুজনের মনের টান এতটুকু কমেনি এখনও। আর তা ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারলেন তাঁদের বন্ধুবান্ধব, পরিচিতরা। নিজেদের চোখে তা দেখে কিছুটা যেন অবাকই হয়েছিলেন ওই দম্পতির ছেলে, বৌমা, নাতিপুতি আত্মীয়-পরিজনরা সবাই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুজনের সত্তরতম বিবাহ বার্ষিকী পালন করা হল। নবদম্পতির মতই গলায় মালা, হাতে গোলাপ ফুল, সেই সঙ্গে কেক কেটে বিবাহ বার্ষিকী পালন করলেন দুজনে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিবাহবার্ষিকীর আসর বসেছিল নদীয়ার রানাঘাট পুরসভার চোদ্দ নম্বর ওয়ার্ডের অমূল্য প্রামানিক রোডের দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেই দম্পতি হলেন, দুর্গাদাসবাবু নিজে এবং তার স্ত্রী স্বর্ণলতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই বাড়িতে বিবাহ বার্ষিকীর আসরে হাজির হয়েছিলেন দুর্গাদাসবাবুর চাকরি জীবনের বন্ধুস্থানীয় এবং পরিচিতদের অনেককেই। বন্ধু ও পরিচিতদের কাছে পেয়ে বৃহস্পতিবার আবার যেন খুঁজে পেয়েছিলেন যৌবনের সেই বয়সকে। ষাট থেকে পয়ষট্টি বছর বয়সের মধ্যেই যখন অনেককেই ছাড়তে হচ্ছে পৃথিবীর মায়া, তখন সত্তরতম বিবাহ বার্ষিকী পালন করা সত্যিই এক অনন্য নজির ! দুর্গাদাসবাবু স্ত্রী স্বর্ণলতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে সঙ্গে নিয়ে বন্ধুবান্ধব, ছেলে-মেয়ে, পুত্রবধূ, নাতিপুতি, নাতজামাই, সবাইকে নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশের মধ্যেই বেশ ধুমধাম করেই করে পালন করলেন নিজের সত্তরতম বিবাহ বার্ষিকী। বিবাহ বার্ষিকীর আসরে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল দুর্গাদাসবাবুর চাকরিজীবনের বন্ধু, পরিচিত বেশ কয়েকজনকে। তাদের অনেকেই হাজির হয়েছিলেন এদিন। তাদেরকে সবাইকে নিয়েই গল্প-গুজবে মেতে উঠেছিলেন দুর্গাদাসবাবু।
দুর্গাদাসবাবুর চার ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ও প্রাক্তন কাউন্সিলর, মেজো ছেলে জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এলআইসি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন, সেজ ছেলে চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে খড়্গপুরের ডেপুটি পুলিশ সুপার, ছোট ছেলে মেঘনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন রেলের কর্মী। বিয়ে হয়ে গিয়েছে দুই মেয়ের, হয়ে গিয়েছে নাতিপুতি ও সেজো ছেলে কর্মসূত্রে খড়্গপুরে থাকেন। তবে বাকি তিন ছেলের সঙ্গে একই বাড়িতেই থাকেন দুর্গাদাসবাবু। এখনও তাদের বাড়িতে বজায় রয়েছে যৌথ পরিবারের পরিবেশ। বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো, সরস্বতী পুজোতে ছেলে পুত্রবধূ, মেয়ে- জামাই, আত্মীয়-স্বজনরা সবাই আসেন। এবারও সরস্বতী পুজোতে হয়নি তার ব্যতিক্রম, ছেলে ও মেয়েদের সব মিলিয়ে দশ জন নাতি-নাতনি রয়েছে তার। নাতি-নাতনি কয়েক জনের বিয়েও হয়ে গিয়েছে, হয়েছে নাতির ঘরে পুতিও। যদিও নিজে কোনরকমে হাঁটাচলা করতে পারলেও দুর্গাদাসবাবুর স্ত্রী স্বর্ণলতাদেবী প্রায় শয্যাশায়ী। তাদের দেখভালের জন্য দুজন আয়া রাখা হলেও তিন ছেলে এবং পুত্রবধূরা সব সময় নজর রাখেন শ্বশুর-শ্বাশুড়ির দিকে। এবার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির বিবাহ বার্ষিকীর আয়োজন করেছিলেন ছোট ছেলে মেঘনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুত্রবধূ মুক্তি বন্দোপাধ্যায়েরা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির বিবাহবার্ষিকীতে খুশি তারা জানিয়েছেন, ‘ আমাদের বাবা-মায়ের এই দিনটি যেন বারবার ফিরে ফিরে আসে। ওদের জন্য যেন আমরা নতুন ভাবে বাঁচার উৎসাহ পাই। ‘ এদিনের বিবাহ বার্ষিকীর আসরে হাজির হয়ে দুর্গাদাসবাবুর অনেক বন্ধু যেন একটা অন্যরকম দিন কাটালেন। কেউ এসেছিলেন লাঠি ভর দিয়ে, আবার কেউবা এসেছিলেন কাউকে সঙ্গী করে, তবে বন্ধুর এমন দিনে পাশে থাকতে তারা চেয়েছিলেন সবাই। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো নিজেরা এই দিনটি পাবেন না, কিন্তু তাতে কী? এই দিনের তাৎপর্য যেন তারা মর্মে মর্মে অনুভব করলেন। আর তাই বন্ধুবান্ধব, পরিচিতরা সবাই দুর্গাদাস বাবুদের জন্য ভগবানের কাছে কামনা করলেন, তাদের যেন এই দিনটি আবারও আসে সামনের বছর।