বর্ণমালা দিয়ে টুকরো কথা
তমাল সাহা

এক

বাংলা বর্ণমালায় পঞ্চাশটি বর্ণ নিয়ে
কত লেখা লিখেছে কবিরা
তাতে পৃথিবীর বড় বয়েই গেছে!
পৃথিবী পৃথিবীর মতো ঘুরেই চলেছে,
তাতে পৃথিবীর একটুও কিছু বদলায়নি।

দুই

আরে ওই কবির কবিতায়
ইতিহাস ভূগোল বিজ্ঞানের
প্রায়োগিক নৈপুণ্য দেখেছেন?
দারুণ!
তাতে পৃথিবীর কী বা আসে যায়!
কবিরা কবির মতো লিখে যায়।

তিন

এই কবির পংক্তি লক্ষ্য করেছ?
দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে।
ছন্দ মাত্রা দেখেছো, দেখেছো কারিগরি সুষমা!
তাতে কি?
পৃথিবী কি উল্টে গেছে!

চার

চিত্রকল্প উপমা ব্যবহারে
ঐশ্বর্যময় কবিতা তাহার।
এই কবির খুব নামডাক আছে।
পুরস্কারও পেয়েছে কয়েকবার।
পৃথিবী থেকে কি হাহাকার শেষ হয়ে গেছে?

পাঁচ

কবিদের নিয়ে রাষ্ট্র।
হাজার হাজার কবি লিখছে।
রাষ্ট্র আমলই দিচ্ছে না।
তবে কবিতা লিখে
কি প্রয়োজন মেটাচ্ছো তুমি?

ছয়

কবিরা লিখছে অক্ষরসজ্জায়
নিজেরাই মুগ্ধ হচ্ছে।
কাব্যপংক্তি কত উজ্জ্বল!
কবিরা পৃথিবীর আত্মা খুঁজছে
কিন্তু আত্মা বস্তুটা কি
কবিরা বলছে না।
কবিরা শেকড়বাকড়, গাছপালা, পাখি, বাতাস, জল, নদী, অরণ্য
সবই উঠিয়ে আনছে কবিতায়।
কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।

আট

কয়েকটা পাগল ইচ্ছেমতো
জল জমি জঙ্গল খনি গিরি কন্দর
সব বেচে দিচ্ছে।
কবিরা এসব নিয়ে লিখছে
কবিতায় উপমা সাজাচ্ছে
কিন্তু কিছুই করতে পারছে না।

নয়

কবিরা দেখতে পাচ্ছে
মজুরেরা হাঁটছে ভুখা পেটে।
ট্রেনের চাকায় পিষে মারা যাচ্ছে
ট্রাকে ট্রলারে ধাক্কায় সংঘর্ষে নিহত হচ্ছে।
কবিদের হাঁটতে হচ্ছে না,
কবিরা শুধু লিখছে।

দশ

রাষ্ট্র বলে দিয়েছে
কবিদের সওদা করা যায়।
কবিরা বাজারি মাল, পণ্য।
খেতাব দাও, পুরস্কার দাও
কবিদের কিছুই করার নেই।
কবিরা থাকলে বা না থাকলে
রাষ্ট্রের কিছুই আসে যায় না—
রাষ্ট্র স্পষ্ট বলে দিয়েছে।