উৎপল রায় :: অবতক খবর :: জলপাইগুড়ি :: করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিমার দামের অর্ধেকটাই আগেভাগে দিতে হবে— বায়না করতে আসা এক পুজো উদ্যোক্তাকে এ কথা সাফ জানিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির কুমোরটুলির মনোতোষ পাল। তা শুনে হাতে হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে ওই উদ্যোক্তা বলে যান, ‘‘কাজটা শুরু তো করুন! বাকি টাকা পরে দিয়ে যাচ্ছি।’’
কিন্তু এই আশ্বাসে আর মন সায় দিচ্ছে না মৃৎশিল্পী মনোতোষ-র। বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাসে বাসন্তী-অন্নপূর্ণা প্রতিমা তৈরি করে একটাও বিক্রি করতে পারিনি। অথচ তখন সাত জন শ্রমিক আমার কাছে কাজ করেছেন। অগ্রিমের পরিমাণ শুনে পুরোনো ক্রেতাদের অনেকে রাগারাগিও করছেন। তবু স্থির করেছি, পুরো অগ্রিম না পেলে দুর্গা তৈরিতে হাতই দেব না।’’
অন্যান্য বছরে এ সময় থেকেই দম ফেলার সময় থাকে না জলপাইগুড়ি জেলার কুমোরটুলির শিল্পীদের। রথের দিন থেকে পরপর বায়না আসতেই থাকে। চলে আসেন শ্রমিকেরাও। এ বছর অল্প-স্বল্প বায়না শুরু হলেও প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগাতে ভয় পাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
কেন এই অবস্থা? মৃৎশিল্পী পবিত্র রায় জানান, নোটবন্দি এবং জিএসটি পর্বের থেকে এ বারের পরিস্থিতি আরও কঠিন। লকডাউন, আনলক পর্ব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাসে মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যবসা। শিল্পীদের হাতে টাকা প্রায় নেই। অথচ বায়না করতে এসে অনেকেই মাত্র দু’-পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ফের ট্যাঁকের পয়সা খরচ করে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতে থমকাচ্ছেন শিল্পীরা। রণজিতের কথায়, ‘‘শেষমেশ যদি পুজোটাই না হয়, তা হলে প্রতিমা তৈরি করেও শিল্পীরা দাম পাবেন না। অন্নপূর্ণা-বাসন্তীর মতো দুর্গাপ্রতিমাও পড়ে থাকবে। সেটা কেউ চাইছেন না। তাই বায়না হলেও প্রতিমা তৈরি শুরু করেননি অনেকে।’’ পুজো আদৌ হবে কি না, সেই আশঙ্কায় এখনই বেশি টাকা ঢালতে নারাজ উদ্যোক্তারাও।
জলপাইগুড়ি এলাকার একটি পুজো কমিটির তরফে দীপক বসাক জানাচ্ছেন, লক্ষাধিক টাকা দামের প্রতিমার জন্য আপাতত ১০ হাজার অগ্রিম দিয়ে এসেছেন কুমোরটুলিতে। শিল্পীকে বলেছেন, মাঝেমধ্যে গিয়ে আরও কিছু টাকা দেওয়া হবে।
জলপাইগুড়ির কুমোরটুলির কর্মচারীরা জানান, অন্য বছরের মতো কোমর বেঁধে নামার বদলে এ বার ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে চলছি আমরা। দামের ৩০ শতাংশ অগ্রিম চাই। কারণ কাঁচামালের দাম বেড়েছে, হাতে টাকাও কম। ফের লোকসানের মুখ দেখতে কেউই রাজি নই।’’
আস্তে আস্তে ফিরতে শুরু করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ফের রাজ্যের কন্টেনমেন্ট জ়োনে কড়া লকডাউন শুরু হওয়ায় তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। মৃৎশিল্পী বাবু বলছেন, ‘‘যে শ্রমিকেরা অন্যান্য বছর বাইরে চলে যেতেন, তাঁরা এ বার কুমোরটুলিতে আসতে চাইছেন। তাই শ্রমিকের অভাব হবে না। কিন্তু বেশি প্রতিমা তৈরি না-হলে তো শ্রমিকও বেশি লাগবে না। আবার কড়াকড়ির জেরে ওঁরা আসতে না-পারলেও প্রতিমা তৈরিতে দেরি হবে।’’
যদিও রণজিৎ আশাবাদী, প্রয়োজনে স্লগ ওভারে চালিয়ে খেলে ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারবেন। তাঁর কথায়, ‘‘অগস্টেও যদি জোরকদমে শুরু করা যায়, তবে পুজোর আগে কাজ ঠিকই শেষ করে ফেলবে জলপাইগুড়ির কুমোরটুলি।’’
