অবতক খবর,১০ ডিসেম্বর,পশ্চিম মেদিনীপুর:: টেরাকোটা, স্টাকো, দিয়ে সুনিপুণ সুদক্ষ কারুকার্যক্ষচিত এই অতিপ্রাচীন শ্রী শ্রী জানোকী বল্লভজীউ এর মন্দির আজও প্রাচীন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
এই মন্দিরে ৩০০ বছরেরও বেশি দিন ধরেই পূজিত হয়ে আসছেন শ্রী শ্রী জানকী বল্লভজিউ অর্থাৎ শ্রীরাম চন্দ্রের শিলারুপ।
তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার আজও কয়েক শত বছরের পৌরাণিক ঐতিহ্যকে অতি কষ্টের মধ্য দিয়ে বুকে আগলে ধরে রেখেছেন।সেই পরিবার গলির মধ্যে তিলন্তপাড়ার মাইতি পরিবার একটি।
আনুমানিক ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই স্বর্গীয় গঙ্গারাম মাইতি এই মাইতি পরিবারের আদি পুরুষ হিসেবে পরিচিত। অনুমান করা হচ্ছে সমসাময়িক কাল থেকেই শ্রী শ্রী জানকী বল্লভজিউ পরিবাদের কুলো দেবতা হিসেবেই পুজিত হয়ে আসছেন।
তৎকালীন সময়ের পল্লী বাংলার প্রান্তরে চলাফেরা করা ছিল খুব দুষ্কর। পথঘাট ছিল বেশ দুর্গম,
উল্লেখিত আছে তৎকালীন সময়ে সবং ও পিংলার পাশ দিয়ে একটি বহুল প্রচলিত ও বিখ্যাত রাস্তা ছিল তার নাম “নন্দ কাপাশিয়া জঙ্গল”। কথিত আছে এই পথ দিয়ে ভিন রাজ্য থেকে বহু সাধু সন্ন্যাসীরা গঙ্গাসাগর যাত্রা করতেন. তৎকালীন সময়ের নন্দ নামের এক বণিক গয়া থেকে পুরীধাম পর্যন্ত একটি পথ ও নির্মাণ করেছিলেন, এই পথ দিয়ে পুণ্যার্থীরা পুরীধাম, গঙ্গাসাগর, গয়াধাম যাতায়াতের সুযোগ পেতেন। যাতায়াতের পথেই খড়গপুর পিংলা বলরামপুর, ইত্যাদি স্থানে জমিদার বাড়িগুলিতে বিশ্রামের জন্য আতিথিয়তা গ্রহণ করতেন। কথিত আছে সম্ভবত মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব এই পথ ধরেই পুরীতে যাতায়াতের কালে নারায়ণগড় রাজ বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন।
সপ্তদশ শতকের পূর্বের কোন এক সময়ে সবং থানার তিলন্ত পাড়া গ্রামে এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছিল, সম্ভবত অযোধ্যা থেকে একদল সাধু গঙ্গাসাগর মেলার উদ্দেশ্যে যাতায়াতের সময় আনুমানিক পথভ্রষ্ট হয়ে এই মাইতি পরিবারই এসে আশ্রয় নেন তৎকালীন সময়ে এই মাইতি পরিবার ছিল সম্ভ্রান্ত পরিবার। সেই প্রথভ্রষ্ট সন্ন্যাসী এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই সেবা শুশ্রূষার দায়ভার নিয়ে ফেলেন এই মাইতি পরিবারের এক প্রবীণ বিধবা রমণী। সেবা সুশ্রূষার মাধ্যমেই মৃত্যু পথযাত্রী এই সন্ন্যাসীকে সুস্থ করে তোলেন তাই সন্ন্যাসী তার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে একটি নকল শালোগ্রামশীলা প্রদান করেন, এ দিকে সন্ন্যাসীর স্বপ্না দেশ হয় পুজিতো দেবতা এখানেই ধর্মপ্রান বিধবার সেবাঅর্চনা গ্রহণ করতে চান। অগত্যা সন্ন্যাসী তার আরাধ্য দেবতার শিলাটিকে সেই বিধবাকেই প্রদান করলেন। আর এটাই হলো শ্রী শ্রী জগৎবল্লভ জিউ অর্থাৎ শ্রী রামচন্দ্রের শিলা রূপ।