অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন

সিপাহী বিদ্রোহের নায়ক মঙ্গল পান্ডের আজ জন্মদিন। তিনি বারাকপুর সেনা ছাউনিতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন

মঙ্গল পান্ডেজি
তমাল সাহা

মঙ্গলের সঙ্গে তো আর আমি মিশিনি! তবে এটা জানি মঙ্গল জন্মেছিল শ্রাবণ মাসে। বৃষ্টি হয়েছিল কিনা জানিনা। সে জন্মেছিল নাগওয়া গাঁয়ে। সেটা বালিয়া জেলা, উত্তর প্রদেশ। সে তো অনেক দূর! এখান থেকে অনেক দূরে। তো! আমার তো দরকার নেই, কোথায় জন্ম হয়েছিল সেসব জানার! আর এতো সকলেই জানে, জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।

মঙ্গল শেষ পর্যন্ত এসেছিল এই ভাগীরথী নদী তীরে, এই বাংলার সমতল ভূমে। সে চলে এলো আমাদের এই বারাকপুর মহকুমায়। আর কোনো কাজ পেল না, আশ্চর্য! ঢুকে গেল সাধারণ সেনার কাজে বারাকপুর সেনা ছাউনিতে। ৩৪ নং বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি। ৫ নম্বর কোম্পানির সৈনিক। তার তো সম্বল শুধু দুটো– একটা গাদা বন্দুক আর একটা তরবারি।

সাধারণ সৈনিক কিন্তু বুক ভর্তি অসাধারণ সাহস। সাহস বলে সাহস! চেতাবনী। সিপাহী বটে! ব্রিটিশ তোমার খুব হিম্মত! দেশ হামারা অউর তুম দিখাতে হো মাতব্বরি? আপনি আদমি হ্যায় হিন্দু মুসলিম। ফারাক করনে কে লিয়ে ক্যায়া কৌশল করেঙ্গে?
মনে আছে এনফিল্ড রাইফেলের কথা! শুয়োর আর গরুর চর্বি মেশানো লুব্রিক্যান্টের কথা!
লড়াই হোঙ্গে মিলকার একহি সাথ। ফিরিঙ্গি হটাও, দেশ বঁচাও।

দিনটা ছিল ২৯ মার্চ ১৮৫৭। বিকেল তখন। মঙ্গল সরাসরি আঘাত করলো জেনারেল বৌগকে। ঘোড়া চেপে এসেছিল বৌগ। গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। বৌগ বেঁচে গেল। ঘোড়া থেকে মাটিতে পড়ে গেল। সেই গুলিতে জখম হলো ঘোড়াটা। বৌগ এবার মাটি থেকে উঠে এলো। পিস্তল বার করে গুলি করতে করতে মঙ্গলকে আক্রমণ করতে এলো। তার আগেই মঙ্গল হাতে তুলে নিল তরবারি। ব্যাস! কেল্লাফতে। মঙ্গলের তরবারিতে নিহত হলো বৌগ।

তারপর তো সেই গল্প ছড়িয়ে পড়ল তামাম ভারতবর্ষ জুড়ে। নানা সাহেব তাঁতিয়া তোপি, ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ, অনেক সাতকাহন। হো! হো! শুরু হয়ে গেল সিপাহী বিদ্রোহ।

হ্যাঁ, মঙ্গল মানে মঙ্গল পান্ডে– পান্ডেজি। সিপাহী বিদ্রোহ শুরুর নায়ক। আমাদের বারাকপুর ব্যারাকের, সেনা ছাউনির সিপাহী। বুকে হাত দিয়ে দেখো তো অহংকার মিশিয়ে একটু গর্ব হচ্ছে কী!

আজ ১৯ জুলাই, ১৮২৭ সালের এইদিন মাটিতে পা রেখেছিল মঙ্গল। পা ফেলে হাঁটছিল। সে কী দাপট!

আর বারাকপুর সেনা ছাউনির মাঠেই তার ফাঁসি হয়েছিল ৮ এপ্রিল,১৮৫৭।
আর শোনো বিশাল জনবিদ্রোহের আশঙ্কা করে ভয়ে আতঙ্কে তার ফাঁসির দিন ১৮ এপ্রিল থেকে দশ দিন আগে ৮ এপ্রিল এগিয়ে আনা হয়েছিল।