কবিতা নেই
তমাল সাহা
কবিতা নেই
তাই কবিতা পাঠে আসিনি।
কবিতা লিখতে পারি না এমন নয়
বানানো কবিতা, মাথার উপর দিয়ে চলে যাওয়া কবিতা লিখতে পারি না। তাই কবিতা পাঠে আসিনি।
প্রশ্ন উঠতে পারে তবে কবিতা পাঠের আসরে এলেন কেন?
রে হারামজাদা কবির দল!
আমি না এলে তো তোরা যাচ্ছে তাই লেখাকে কবিতা বলে চালিয়ে দিতি।
মাকে মা বলতে তোর এত অসুবিধে
বাপকে বাবা বলতে তোর এতবার ভাবতে হয় কোন শব্দ বসাবি তা খুঁজতে মাথা চুলকেতে হয়
তাহলে তুই কবিতা লিখবি কি করে?
তোর চেয়ে ভালো কবিতা লেখে এক চাষা
ওইভাবে রোদ ঝড় জল বৃষ্টিতে লাঙল দিয়ে মাটি চষে বীজধান রোপন করে সোনালী শস্য বানায়
এর চেয়ে ভালো কবিতা তুই লিখতে পারবি কোনদিন?
কালি ঝুলি মাখা প্যান্ট পরে
বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ঢোকানো আছে দশটি পকেটে প্লাস ,স্ক্রুড্রাইভার, স্লাই রেঞ্জ
এসব নিয়ে মেশিন চালাচ্ছে যে কামগার নির্মাণ করছে তোর ব্যবহারযোগ্য জিনিস
বানাচ্ছে রেল লাইন, যানবাহনের চাকা, ইঞ্জিন
চুল্লির তাপে গলাচ্ছে লোহা, তৈরি করছে করছে রুটি সেঁকা তাওয়া ভাতের হাঁড়ি, হাতা-খুন্তি,কড়াই–
তোর গেরস্থালি জীবনের কবিতা
আর তুই ফটর ফটর করে কতগুলি হাবিজাবি লেখা পড়ে যাবি, তোর অক্ষর ছুঁতে পারবে এইসব কোনদিন?
আমার হাতে কোন কবিতা নেই
আমি কবিতা পাঠে আসিনি।
ভরা পেটে ভাত নিয়ে যে ভাত এখনো হজম হয়নি,এই দুপুরে
কবি হবার লোভে তুই শালা বইমেলা নামক অদ্ভুত মেলায় কবিতা পাঠ করতে এসেছিস!
সারাদিন শ্রম দিয়ে ঘেমে নেয়ে উঠে শুড়িখানায় গিয়ে এক বোতল বাংলা টেনে এক ভাগওয়ালা শ্রমিক
বইমেলার পাশ দিয়ে যেতে যেতে আমার কবিতা পাঠ শুনে যদি বলে,
ইয়ের কবি আমার বইমেলা মারাচ্ছে
তাহলে কি খুব বেশি অন্যায় অপরাধ হবে?
সম্পাদক জানিয়েছেন অছাপা কবিতা পাঠাবেন।
আমার সব কবিতাই অছাপা, কেউই কোনোদিন ছাপেনি, ছাপবেও না।
তাই আমার কবিতার বই আমি নিজেই ছাপি!