এখনো নির্বাচনের পরে ভাটপাড়া আর কোথায় কোথায় যেন বোমা পড়ে!

অগ্নিগর্ভ
তমাল সাহা

রৌদ্র প্রবাহিত তাপদগ্ধ দিনে
তুমি হেঁটেছিলে কোনোদিন
জি পি রোড ধরে।

ভাগীরথীর উপকূলে চিমনির প্রহরায়
কত চটকল সটান উঠে দাঁড়ায়।
জলপ্রবাহে ছুটে চলে যাত্রীবাহী লঞ্চ
এপার ওপার–
কত মানুষের পারাপার।
তারা জীবন জাগরণের কথা
বলে তোমার আমার।
পালতোলা নৌকোয় দাঁড়িয়ে
নদীর জলধারায় জাল ছুঁড়ে দেয়
জেলেদের কৌশলী হাত।
ঘামেভেজা লিপি লিখে চলে
দিন থেকে রাত।

চটকলের ভোঁ বাজে
মাথায় পাটের ফেঁসোর ঝুল
নিয়ে চটকল মজদুর
ঘরে ফিরে যায়।
মেহনতের ঘামে
তাদের জাত-ধর্ম মিশে যায়…
পরিচয় তখন শুধু
কামগারি মানুষ হয়ে দাঁড়ায়।

এখন ঘনঘন বিস্ফোরণ ঘটে
চটকল পাড়া—
ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ায়।
ত্রস্ত মানুষ ঘরে
জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে
শ্রমিক বস্তিতে মহল্লায়।

উপাসনা গৃহ দেয়ালে
বিশাল বিস্ফোরণের বারুদগন্ধী দাগ
নিয়ে আল্লার দোয়া মাগে।
তখন তোমার ‘আদাব’
গল্পের কথা মনে পড়ে,
লিখেছিলে কতদিন আগে।

গুলিতে কেঁপে ওঠে
কাঁকিনাড়ার চত্বর—
অবিশ্রান্ত বোমার বিস্ফোরণে
কেঁপে ওঠে পাড়া।
পাঁচ বছরের শিশুর শরীরে
লুকিয়ে পড়ে বোমার স্প্লিন্টার—
করে নড়াচড়া।
কাঁটাডাঙায় গুলি লাগে পথচারীর,
নয়াবাজারে মাংসের দোকানে
ভাঙচুর চলে—
আর্তরব ভারী হয় কোলাহলে।

চোখে গুলিবিদ্ধ হয় কর্মচারী—
দৃষ্টিশূন্য হয়ে গেলে
মনে পড়ে ‘জগদ্দল’ উপন্যাসের
শ্রমিষ্ঠ ইতিহাস—
কাঁকিনাড়া- ভাটপাড়া এখন
মাফিয়া-মস্তানের আবাস।
নয়াবাজারে ছেঁড়াখোঁড়া-দিন আনি দিন খাই মানুষের জখমি পা থেকে ঝরে পড়ে রক্ত—
চেটে খায় রাস্তার এ্যাস্ফল্ট ও উড়ে আসা কাক।
গণতন্ত্র অগ্নিপরীক্ষা দেয়— জ্বলেপুড়ে খাক।
ভয়ে ভিড় কমে যায় রুটের বাসে।
এলাকা পুলিশ ও কম্ব্যাট ফোর্সের দখলে চলে যায়।
রাস্তা ফাঁকা,স্বতঃস্ফূর্ত কার্ফু নেমে আসে।

জুটমিলে ভয় ঢুকে পড়ে
কাঁকিনাড়া জুটমিল,রিলায়েন্স জুটমিল–
তার বিশাল গেট বন্ধ হয়ে যায়।
রাতের প্রহর শুনশান
হিংসা কতদূর যায়…
দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট চলে
শেষ পর্যন্ত আগুন তাকে গিলে খায়।

রক্তাক্ত স্বামী, মাথার খুলি উড়ে গেছে তার
স্ত্রী দুহাতে আগলে রেখেছে তার মাথা,
স্বামীর রক্তে তার শাড়ি ভিজে যায়।
হায়, রাজনীতি আমাদের নিয়ে চলেছ কোথায়?
বোমায় ঝলসানো দেহ নিয়ে
কাড়াকাড়ি পড়ে যায়।
এ দল বলে আমার,ও দল বলে আমার
আহত- নিহত দেহ দলের সম্মান বাড়ায়!

ধিকিধিকি আগুন জ্বলে একমাস।
আজ তিনটি শরীর বুলেটবিদ্ধ—
বেমালুম হয়ে গেল লাশ।
নবান্নে বৈঠক, মন্ত্রী-আমলার সহবাস
যার ছিল তার গেল, হলো সর্বনাশ!

‘শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে’
চলছিল তোমার পরিভ্রমণ।
শ্রমিক বস্তির জীর্ণ ঘরে হাতেখড়ি
দিয়েছিলে তুমি জীবন পরিচর্যায়!
এ কোন ভয়াবহ অন্ধকার
নেমে আসে আজ চটকল পাড়ায়!
দশ নম্বর গলির দুর্গা মাঠে
গন্ধক মোমছাল জালের কাঠি দিয়ে
কারা বিস্ফোরক বানায়!
বারুদ-আগ্নেয়াস্ত্র মজুত হতে থাকে
ভাটপাড়ায়-কাঁকিনাড়ায়।

রাতের আকাশে
নক্ষত্রগুলি মিটিমিটি জ্বলে
আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে
বাতাস ক্রমাগত উড়ে যায়।

জিপি রোডে
মুন্সি প্রেমচন্দের বইহাতে প্রতিকৃতি
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ডেকে যায়
তোমরা আমাকে স্থাপন করেছো কোথায়?