একদম সত্যি কথা: রুমিদির বুকে বৃষ্টির শব্দ
তমাল সাহা
সেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সোজাসুজি ঢুকে পড়লাম রুমিদির বাড়ি। তখনো দমকা হাওয়া চলছে।
তুই কি মানুষ না অন্য কিছু? এতো
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে… ভিজেএকসা, তুই এলি কেন?
পেটে অনেক কথা জমে আছে রুমিদি, তোমাকে না বলে কি পারি? কিছুতেই পেট হালকা হচ্ছে না!
আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন ঝর ঝর ঝর ধারা ঝরিছে/ তোমার কথা আমার মনে পড়েছে
এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনা তো মন, কবে যাবো কবে পাবো তোমার নিমন্ত্রণ?
শোনো শোনো আজ দ্বিতীয় পিরিয়ডে বৃষ্টি শুরু। বাংলার রঙ্গলালবাবু বললেন একটা বৃষ্টির রচনা লেখ কুড়ি মিনিটের মধ্যে। ৩৫ মিনিটের পিরিয়ড।
প্রথমে একটা কোটেশন দিয়ে শুরু করলাম। শেষে দ্বিতীয় কোটেশনটা দিলাম।
রঙ্গলাল বাবু বললেন, এতো সিনেমার গান!
রুমিদি বলে বুঝেছি , আর তোকে বলতে হবে না। বুঝেছি আজ মার খেয়েছিস, না হয়তো কান ধরে ওঠবস করেছিস। আচ্ছা, এইসব সিনেমা কি তুই দেখেছিস? না। তবে খুড়তুতো দিদিকে গাইতে শুনেছি। ধীরে ধীরে পাকা হচ্ছিস বুঝতে পারছি।
রুমিদি বলে সিনেমার গান তো কী! কোটেশন তো যথার্থ হয়েছে। হায়রে, মাস্টারমশাইরা এখনো
সাবালক, এখনো আধুনিক হতে পারলো না! ঠিক আছে দুঃখের কিছু নেই, ভালোই হয়েছে রচনা।
যাক রুমিদি যখন সাপোর্ট করেছে, মনের সব দুঃখ উবে গেল।
রুমিদি বলে, আর কি হয়েছে?
ফোর্থ পিরিওডে কুশারীবাবু বৃষ্টির বিভিন্ন রকম ইংরেজি শেখালেন। রেইন কাকে বলে, ড্রিজলিং কি, কখন ক্যাটস এন্ড ডগস, কখন ডাউনপুওর, কখন হেইলিং…
আচ্ছা, তোর মাস্টারমশাই কি রিমঝিম বৃষ্টি, টাপুর টুপুর বৃষ্টি, ইলশে গুড়ি বৃষ্টি এসবের ইংরেজি শিখিয়েছে?
শিব পার্বতীর বিয়ে বৃষ্টি,
লেবুর পাতা করমচা, আয় বৃষ্টি থেমে যা– এসবের ইংরেজি শিখিয়েছে?
আমি বোকার মত রুমিদির দিকে তাকিয়ে থাকি!
রুমিদি বলে, আরে বোকা! এর নাম বাংলা বর্ণমালা। এসবের ইংরেজি হয় না, ইংরেজিতে এসবের ব্যঞ্জনা সৃজন করা যায় না।
সেবার বৃষ্টিতে আমি আর তুই মিলে কাগজের নৌকো বানিয়ে উঠোন ভর্তি জলে ছেড়ে দিয়েছিলাম, মনে আছে!
আরে বোকা কাগজের নৌকা আর পেপার বোট কি এক হলো!
এই বৃষ্টিতে নিশ্চিন্দিপুরের ওই গাঁয়ের অপু আর দুর্গা বৃষ্টিতে ভিজলো, কচুপাতা মাথায় দিয়ে বাড়িতে ফিরলো এসবের কোন ইংরেজি হয়?
বুকের মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে এর কোন ইংরেজি হয়?
কথা বলতে বলতে রুমিদি আমাকে কাছে ডেকে নিল।
ওই যে গামছা দিলাম, আরে মাথাটা এখনো ভালো করে মুছিস নি!
রুমিদি কাছে নিয়ে নিজের আঁচল দিয়ে আমার মাথাটা ঘষে ঘষে মোছাতে লাগলো।
রুমিদির বুকে তখন আমার মাথাটা ছুঁয়ে আছে। এই ভরা বৃষ্টিতেও রুমিদির বুকটা খুব উষ্ণ বলে মনে হলো। রুমিদির বুকে মাথাটা রেখে মনে হল আমাদের ঘন ঝাঁকড়া নয়নতারা গাছে একটা পাখির বাসা, সেখানেই ঘোর দুপুরে ডাহুক পাখি ডেকেই চলেছে।
বুকের মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, সত্যি এর কোন ইংরেজি হয় না।
এই বৃষ্টির শব্দ শুধু অনুভব করা যায়!
এই রুমিদি থেকে যায় কোথায়?
মনের আয়নায়, মুখটি দেখা যায় চোখের তারায়!