অবতক খবর,২১শে ফেব্রুয়ারি: এই লোকদেখানো হা-হুতাশ কতদিন চলতে পারে বঙ্গোপসাগরীয় এই উপত্যকায়? হঠাৎ করে একুশে ফেব্রুয়ারি চাগাড় দিয়ে ওঠে তার মাথায়। বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ বাংলা আমার জননী, এতদিন তুই কোথায় থাকিস? বাংলা আমার মা কি ভিখারিনী?
একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভাষা দিবস আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায়। রাজ্য সরকার সে দিবস উদযাপন করেন কোন এক মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। সেকথা পরিষ্কার উল্লেখ দেখি সংবাদপত্রের পাতায়।
পুজোয় ছুটি থাকে, শিবরাত্রিতে লিঙ্গ পুজোয়ও ছুটি থাকে। ২১শে ফেব্রুয়ারি কি ছুটি থাকে? বা ছুটি ঘোষণা করা যায়? সেই দিনটিই তো উচ্চ নিনাদে সমবেতভাবে পালন করা যায়,এটাই তো সুতানুটি শহরের দায়িত্ব ও দায়। স্কুলে স্কুলে মাতৃভাষা দিবস পালন করো, নির্দেশনামা জারি করতে আপত্তি কোথায়?
আমার সময় আমি কোনোদিন দেখিনি পুলে কলেজে পালিত হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি। জানিনা এই দিনটির সঙ্গে আমাদের কেন এত আড়ি? রবীন্দ্রনাথের কত কথা, মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ, একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম বরকতদের বলিদান,সেই দিনটিকে মাথায় রেখে আমাদের পশ্চিমবাংলার স্কুলে স্কুলে কোনদিন পালিত হয় কি একুশে ফেব্রুয়ারির সেইসব কথা,সেইসব ইতিহাস, সেইসব গান?
আমরা বাংলা নিয়ে বড় বড় কথা বলি। রাজ্য সরকারও স্কুলে স্কুলে দেয় না কোন নির্দেশ–এসো আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন করি,পালন করি একুশে ফেব্রুয়ারি! সে তো বিরাট নাম আন্তর্জাতিকে তার খ্যাতি। ১৯শে মে বরাকর উপত্যকায় যেসব বাঙালি দিয়েছে প্রাণ, সেটা তো আমার এই ভারতবর্ষে, তাদেরও কি আমরা স্মরণ করি দিয়ে থাকি সম্মান?
আমরা কি মনে রাখি ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কমলা ভট্টাচার্য্যের নাম, সে তো এক অনন্যা নারী।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি? এই গান বড় হয়ে ওঠে স্কুলের চত্বরে চত্বরে নয়, শিক্ষার প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে নয়, কিছু কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা এই নিয়ে অনুষ্ঠান করে পাড়ায় পাড়ায়।
কাঁচরাপাড়ার স্কুলে স্কুলে দেখেছি নিয়ে খোঁজ,এই উৎসবটি তেমনভাবে হয়না পালিত। তবে আশ্চর্য প্রায় ১০ বছর ধরে একটি স্কুলে এই দিনটি পালিত হয় চরম মর্যাদায়। কাঁচরাপাড়া মিউনিসিপ্যাল পলিটেকনিক হাই স্কুল,সেই স্কুলে বাংলা ভাষার গুরুত্ব, শহীদদের নিয়ে আলোচনা, কবিতাপাঠ,গান, আবৃত্তি চলে সমারোহে। এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। আরো কোন স্কুলে, পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোথায় শিক্ষা প্রাঙ্গণে এই দিনটি পালিত হয় আমি তো জানিনা। একুশে ফেব্রুয়ারি যতই বলি, আমরা তেমন করে মানিনা।
১৯শে মে আবার আসবে একটি দিন,বরাক উপত্যকায় সে বিপুল রক্তস্নান! আর আমরা নিশ্চিত ভুলে যাব সেই দিনটি, থাকব চুপ অম্লান।