অবতক খবর,১৪ জুলাই,মলয় দে নদীয়া:- সারা রাজ্যের পাশাপাশি নদীয়ার শান্তিপুরেও মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ অনুযায়ী পুরসভার তৎপরতায় চলছে সরকারি জায়গা জবরদখল মুক্ত করা এবং ফুটপাতের পাশে বেআইনি নির্মাণ উচ্ছেদের প্রথম ধাপ।

পুরসভার পক্ষ থেকে জানা গেছে প্রাথমিক এই পর্যায়ে আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিগত প্রায় এক মাস ধরে চলছে রাস্তার পাশে মাপজোপ, কখনো মাইকিং কখনো বা পুরসভার পক্ষ থেকে সশরীরে এসে দখলমুক্ত করার অনুরোধ।

তবে সরকারি এই নির্দেশকে মান্যতা না দিয়ে পুরসভার সাথে অসহযোগিতা করলে চলবে বুলডোজার অন্যদিকে সহযোগিতা করলে পাওয়া যেতে পারে ট্রেড লাইসেন্স এর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বাসন। তাই স্বইচ্ছায় অনেকে সরিয়ে নিয়েছেন তাদের দোকানের পসরা অস্থায়ী নির্মাণ।

তবে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে কিছুটা জল মেপে শান্তিপুরে গতকাল প্রথম প্রতিবাদী সভা আয়োজিত হয় কাশ্যপ পড়ায়।

সেখানে বক্তব্য রাখেন সিআই টি ইউ জেলা নেতৃত্ব পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সৌমেন মাহাতো, শান্তিপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সঞ্জিত ঘোষ, সিপিআইএম নেতৃত্ব শান্তনু চক্রবর্তী সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

এদিন পুরসভার এই হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একের পর এক বিষাদগার করতে থাকেন সিপিআইএম নেতৃত্ব।

সৌমেন মাহাতো জানান পুরসভার একাধিক কাউন্সিলর রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব না রেখেই বাড়ি কিংবা দোকান করে সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছে, দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদ করলে আগে তাদের করতে হবে। বিজেপির দুই কাউন্সিলর পুরসভার উচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি মিটিংয়ে সম্মতি শুধু জানিয়েছে তাই নয়, রীতিমতন তারাও পথে নেমেছে হকার ভাইয়েদের পেটে লাথি মারার জন্য।

সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য যাতায়াত কিংবা সৌন্দর্যায়ন নির্মল শান্তিপুর গড়ার ক্ষেত্রে তারা বিরোধী নয় তবে পদ্ধতিগত বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তের কথা মুখে বলা হলেও পুরসভার পক্ষ থেকে ডাকা হয়নি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ বেশ কিছু বাজার কমিটি ,ব্যবসায়ী সংগঠনদের। মতামত নেওয়া হয়নি ছোট ছোট দোকান কিংবা হকার ভাইদের।

তিনি বলেন বাম আমলেও সরকার রাস্তা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন করতে বেশ কিছু উচ্ছেদ করেছিল তবে তা তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সঙ্গে আলোচনা ভিত্তিক পুনর্বাসনের জায়গা করে তবেই নেওয়া হয়েছিলো সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন বরাবরই শান্তিপুর প্রতিবাদের শহর। অতীত কিংবা বর্তমান বহু নজির রয়েছে। সম্প্রতি নদীয়া ভাগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এইরকমই এক হটকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়ে তা রুখে দিয়েছিল। এবারেও তাই হতে চলেছে।

পুরসভার দেওয়া সময় চূড়ান্ত সময় সীমা আগামী ১৫ তারিখ হকার ভাইদের সাথে নিয়ে বুক পেতে বুলডোজার থামিয়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। কটাক্ষ করে বলেন জনগণ এই সরকারের মেয়াদ দিয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পৌরসভার মেয়াদ ২৭।

সিপিআইএম নেতৃত্ব শান্তনু চক্রবর্তী বলেন খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান কর্ম মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সেই কর্মের সংস্থান করতে না পারার ফলেই বেড়েছে বেকারত্ব পেটের জ্বালায় মানুষ বসেছে রাস্তায় এ দায়ভার সরকারের। তিনি সরাসরি অভিযোগ করে বলেন একের পর এক এলাকায় রাস্তার পাশে তৃণমূলের নেতারা টাকার বিনিময়ে বসিয়েছে হকার আর সেই রেট বাড়াতেই সুকৌশলে এই উচ্ছেদের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত।

জোনাল কমিটির সম্পাদক সঞ্জিত ঘোষ বলেন, ফুটপাতে যাদের দোকান তাদের কাগজপত্র থাকবে না এটাই স্বাভাবিক এভাবেও ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে অতীতে পুরসভায় দুর্নীতি হয়েছে। আর সেই ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে পুনর্বাসন অর্থাৎ আরো একটি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে হকারদের ভুল পথে পরিচালনা করছে পুরসভা।

রাস্তার পাশে দিনের পর দিন হয়ে চলেছে অপরিকল্পিত পুরসভা আইন বিরুদ্ধ মার্কেট কিংবা বহুতল সেক্ষেত্রে পুরসভা নিশ্চুপ আসলে সেখান থেকে আসে মোটা অংকের টাকা তাই ছোট ছোট দোকান ভেঙে মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার লক্ষ্য। পুনর্বাসনের গল্প শোনানো হলেও এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে হকারের তালিকা প্রস্তুত কিংবা কর্ম তীর্থ গড়ে তোলার জায়গা ঠিক করতে পারিনি পুরসভা। অথচ মুখে পুনর্বাসনের কথা । তবে হকার ভাইয়েরা বুঝতে পারছে আরো হয়তো কিছুটা সময় লাগবে পুরোটা বুঝতে এরপর মানুষই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। হবে বামপন্থীরা শুধু সাথে নয় থাকবে তাদের আগে রুখে দেবে বুলডোজার।

যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কাউন্সিলর নরেশ লাল সরকার জানান, শুধু শান্তিপুর নয় তাদের কথার দাম দেয়নি এ রাজ্যের মানুষ তাই শূন্য থেকে মহাশূন্যে পৌঁছেছে। ঘোলা জলে মাছ ধরতে আসে মাঝেমধ্যে, অতীতে তাদের জমানায় একের পর এক পার্টি অফিস সহ নেতাকর্মীদের দোকান আজও রয়েছে অনেকে তো আবার দখলদারির নিয়ে গরিব মানুষের কাছে মোটা টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলো সে সময়।

ভোটের কথা না ভেবে এ সরকার সর্বসাধারণের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই হকারদের ভুল বুঝিয়ে উস্কানি দিয়ে আদতেও কোনো লাভ হবে না।