চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
পাম অ্যাভিনিউর ঘরে কোনো অর্থের পাহাড় পাওয়া গেল না
তমাল সাহা
এইবার একদম চলে গেল সে। ফুসফুস বললে, অনেক হয়েছে, এমনিতেও তুই মরে যাবি।
বাতাসে এখন আরো দুর্নীতির ব্যাকটেরিয়া, কামাইবাজির ভাইরাস ঢুকে গেছে। শ্বাস নিতে তোর আরো কষ্ট হবে। এই বেলা তুই তাড়াতাড়ি সরে পড়!
কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ— অনেক হয়েছে!
তোর চেয়ে বড়ো বিপ্লবীরা ময়দানে এসে গেছে, এই বেলা তুই যা!
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম, চটি-পুলিশ, তাপসী মালিক, ১৪ জন পুলিশের গুলিতে নিহত— কম কাণ্ড করিস নি তো তুই?
তদন্তের মুখোমুখি সশরীরে হাজিরও হয়েছিলি।
তাতে তোর কোন শাস্তি হয়েছিল কি?
তোর বিরোধীরাই তো তদন্ত কমিটি গড়েছিল!
দৈত্যের মতো দুটি দীর্ঘ দাঁত দেখানো তোর ছবিটি এখনো আমার মনে পড়ে
আর রক্তের ছিটে লাগিয়ে সেই দুর্ধর্ষ পোস্টারটা: ছিঃ
২৩৫! ২৩৫! ২৩৫!
এমন ঔদ্ধত্য তুই দেখিয়েছিলি কেন?
দাঙ্গা করতে এলে মাথা গুঁড়িয়ে দেবো,
এসব কখনো বলে কি কেউ?
তোর চরিত্র হননেও মেতেছিল কেউ কেউ!
তোর কারণে বাংলাভাষায় একটা শব্দ সৃষ্টি হয়েছিল– বুদ্ধজীবী!
যতদূর জানি তুই চে-কে, মার্কেজকে ভালবাসতিস
রবীন্দ্রনাথ তো বটেই এবং জীবনানন্দকে।
কাকাকে কে না ভালোবাসে? এক পুঁচকে কাকা তোর সুকান্ত, তার জন্য কী গর্ব তোর!
অনুবাদক হয়েছিলি, আবৃত্তি করতে পারতিস
দু কলম তো লিখতেও পারতিস!
জীবনানন্দকে নিয়ে তোর ধারাবাহিক বার করেছিল দেশ।
বিতর্ক ফেলে দিয়েছিল তোর নাটক: সময় অসময় দুঃসময়। স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা কেন লিখেছিলি তুই। অন্য হাতে কী দুঃসাহস প্রত্যাখ্যান করিস পদ্মভূষণ!
দুটি শব্দ নিয়ে তুই যেন কেমন হয়ে গিয়েছিলি।
প্রজন্ম নিয়ে খুব ভাবছিলি
শিল্প নিয়ে তুই কাঁদছিলি
সব সময় সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরতিস কেন তুই?
তুই কি সত্যিই এত নিখুঁত সাদা ছিলি?
সে যাই হোক মৃত্যুর পরে আমি সোজা ঢুকে পড়ি ঘরে। তারপরে?
সবাই যখন মরদেহ নিয়ে ব্যস্ত
আমি বলি, ব্যাটা তো মরে গেছে। মড়া নিয়ে ভেবে আর কি হবে? কোনদিন তো শালা মুখ্যমন্ত্রী ছিল!
তন্ন তন্ন করে খুঁজি ঘর। কোথাও দেখি না সঞ্চিত অর্থের পাহাড়। বইয়ের তাকগুলি দেখি পাইনা খুঁজে কোনো স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির দলিল দস্তাবেজ।
এক চিলতে ঘর থেকে শেষ পর্যন্ত
মানুষের প্রতি বিশ্বাস ভরা একটি ফুসফুস ছাড়া আর কিছুই পায়নি শববাহকেরা!