বিনয় ভরদ্বাজ, সম্পাদক,অবতক খবর :: সারা বিশ্ব এখন নোবেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে। ইতিমধ্যে বিশ্বে 127 টি দেশের প্রায় দু’লক্ষ উপর মানুষ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের দেশ ভারত বর্ষ করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে নতুন নতুন নির্দেশিকা,জরুরী নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আমরা আত্তাকের পাঠক বন্ধুদের করোনাভাইরাস থেকে সাবধান থাকার জন্য আবেদন জানাচ্ছি সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে করোনাভাইরাস যে স্টেজে রয়েছে সেই স্টেজ থেকে খুব দ্রুত গতিতে অন্য স্টেজে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে পারে তাই করোনাভাইরাস কে আটকাতে নিজেকে প্রথমে সুস্থ রাখতে হবে । নিজের জন্য ব্যবস্থা ভাবতে হবে আর নিজেকে সুস্থ রাখলে অপরকে সুস্থ রাখা যাবে। নিজের পরিবার ও নিজের প্রতিবেশীদের সুস্থ রাখা যাবে। আসুন আগে আমরা শপথ নেই যে নিজেকে সুস্থ রাখবো । তাই আমরা বলছি ” সুস্থ থাকুন সুস্থ রাখুন”।

স্বস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালের ১৮ ই মার্চ পর্যন্ত নোবেল করোনাভাইরাস বা কোভিড -১৯ ভারতে ১৪৭ জনকে আক্রান্ত করেছে। এতে রয়েছেন মোট ১২২ জন ভারতীয় এবং ২৫ জন বিদেশি নাগরিক। নতুন ভাইরাস এখনও পর্যন্ত তিন ‘জনের প্রাণহানি করেছে।

ইতোমধ্যে ভারত বিমানবন্দরগুলিতে স্ক্রিনিং শুরু করেছে এবং 15 এপ্রিল পর্যন্ত ভিসা স্থগিত রাখ হয়েছে । সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরে এ পর্যন্ত মোট 13,54,858 মানুষ কে করেনটাইন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক জনগণকে তাদের জরুরি হেল্পলাইন নম্বর – + 91-11-23978046 – করোনভাইরাস সম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্ন এবং সহায়তার জন্য যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছে । এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক করোনা কে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। আপনি আপনার প্রশ্ন  বা অভিযোগটি “[email protected]” এ ইমেল করতে পারেন।

আমাদের দেশ এখন কোভিড 19 এর স্টেজ 2 এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে – মানে এখনও ভাইরাস রোগীর থেকে তার close contacts এর মধ্যেই ছড়াচ্ছে। এরপরই স্টেজ 3 শুরু হবে যখন ভাইরাস কমিউনিটিতে ছড়াতে শুরু করবে এবং সেটা হবে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে (কারণ, রোগটা মারাত্মক রকম ছোঁয়াচে) ঠিক এমনটাই হয়েছে। ইতালিতে, ইরানে ।দুই হপ্তার মধ্যে কনফার্ম রোগীর সংখ্যা দেড়শো থেকে প্রায় দশ হাজার হয়ে গেছে। এই স্টেজ 2 তেই আটকে না রাখতে পারলে, আগামী এক মাসের মধ্যেই আমাদের দেশেও রোগীর সংখ্যা 147 থেকে লক্ষাধিক হয়ে যাবে । তখন সত্যিই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। করোনা ভাইরাস মানুষ মারে কম, কিন্তু এতো বেশী সংখ্যার রোগী সৃষ্টি করবে যে তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো রাতারাতি তৈরী করা অসম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা এই রোগ কে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমাদের দেশের কোভিডের স্টেজ 2 থেকে 3 তে যাওয়া আটকাতে শুধু সরকার বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী যথেষ্ট নয় – এটা পারি আমরাই, মানে আমি, আপনার মতো সাধারণ মানুষ । আমরা প্রত্যেকে এক একজন সম্ভব্য রোগ ছড়ানো ক্যরিয়ার – একজন কয়েকশো জনের মধ্যে, কয়েকশো কয়েক হাজারের মধ্যে রোগটা ছড়াতে পারে। এই চেইনটা তখনই ভাঙতে পারা যাবে যখন আপনি নিজে রোগমুক্ত থাকতে পারবেন । আপনি রোগমুক্ত থাকলে আপনি বাঁচবেন, আপনার পরিবার বাঁচবে, আপনার দেশ বাঁচবে।  যদি আপনি যদি কেয়ারলেস হয়ে রোগ বাঁধান, আপনি হয়তো বেঁচে যাবেন (তার সম্বাবনাই বেশী, কারণ কোভিডের মর্টালিটি 2 -3% এর বেশী নয় ), কিন্তু মরবে আপনারই মতো অনেক মানুষ (হয়তো আপনারই কোনো বৃদ্ধ আত্মীয় বা অনাত্মীয়) – শুধু আপনার বোকামির জন্যেই। তাই আপনি নিজে সুস্থ থাকুন, তাহলেই দেশ সুস্থ থাকবে।

1) সরকারের (কেন্দ্রীয় ও রাজ্য) সমস্ত উপদেশ ও নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন – কোনোটাই ফালতু বলে উড়িয়ে দেবেন না।

2) স্বাস্থ্যকর্মী বা নিরাপত্তারক্ষীরা যা যা করছেন, মেনে নিন – তাঁদের কাজে বাধা দেবেন না, তর্ক করবেন না তাঁদের সাথে । তাঁরা যা কিছু করছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই করছেন এবং আপনার ভালোর জন্যেই করছেন (কেন করছেন সেটা আপনি বুঝুন বা না বুঝুন)।

3) মনে রাখবেন প্রচুর টাকা বা ক্ষমতা থাকলেই কিন্তু আপনি সেফ নন । ট্রেন বা ফ্লাইটের ফার্স্ট ক্লাসে গেলেই আপনার কোবিডের কোনো ভয় নেই – এরকম ভাবাটা ভুল।মনে রাখবেন, ইউ কে এর স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীও কোভিড আক্রান্ত l কাজেই খুব দরকার না থাকলে, বাইরে যাওয়া বর্জন করুন। ছুটি পরেও কাটাতে পারবেন।

4) একান্ত দরকার না থাকলে সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না , নিজের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান থাকলেও মাসখানেক পিছিয়ে দিন। সামাজিক মেলামেশা কিন্তু কমিউনিটিতে রোগ ছড়ানোর বড় কারণ । একই কারণে, সিনেমা হল, মেলা, উৎসব, শপিং মল যাওয়া যতটা বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যায় নিয়ন্ত্রণ করুন। যদি যেতেই হয়,তাহলে সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে প্রটেকশন নিন (বার বার হাত ধোয়া, কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে কাশা ইত্যাদি )।

5) কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট হলে সাথে সাথে ডাক্তার দেখান, নিজে নিজে চিকিৎসা বা ডায়াগনসিস করার চেষ্টা করবেন না। আদা, রসুন, এলকোহল, গোমূত্র – কোনোটাই কোভিডের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রমাণিত হয় নি, হোয়াটস্যাপ ম্যাসেজ দেখে নিজে নিজে ডাক্তারি কর্নেল না । আপনার হোয়াটস্যাপ যাই বলুক। আপনার কোভিড হয়েছে কিনা একমাত্র ডাক্তারবাবুই সেটা বুঝতে পারবেন – কখন কি টেস্ট করতে হবে, কি ওষুধ খেতে হবে, ডাক্তারবাবু যা বলবেন মেনে চলুন। উনি একটা বিজ্ঞানসম্মত গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা করছেন, মনে রাখবেন । কখন আপনাকে আইসোলেশনে যেতে হবে, কখন হোম quarantine এ থাকতে হবে – উনি যা বলবেন মেনে নিন।

সরকার বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আপনার পাশেই আছে – কিন্তু আপনার সহযোগিতা ছাড়া এ বিপদ ঠেকানো অসম্ভব। আপনি, আমি আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষই কিন্তু পারে কোভিডকে রুখে দিতে।

আসুন দেশ রক্ষায় শপথগ্রহণ করি যে আমরা আগে নিজেকে সুস্থ রাখবো ও সকল কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবো।