Editor’s কলমে …. “করোনা-র abcd… Part-3″ লিখছেন : বিনয় ভরদ্বাজ
অবতক খবর, 31শে মার্চ 20 :: করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি অর্থাৎ প্রথম nCOVID19 এর জন্ম ও তার প্রচার প্রসার নিয়ে বিশ্বজুড়ে কিভাবে হল তা আমরা ইতিমধ্যে জানিয়েছি।আমাদের দেশে কোন কোন জায়গা থেকে এই মারণ রোগ ছড়িয়ে গেল সেসব তথ্য কিন্তু আমরা আপনাদের জানিয়েছি। আমরা করোনাভাইরাস ভারতে অনুপ্রবেশ ও মৃত্যু নিয়ে তথ্য বিগত অংশে জেনেছি। তাই এবার আজ তৃতীয় অংশ আমরা জানাবো পশ্চিম বাংলার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ইতিহাস । তবে তার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেটা আমাদের জানতেই হবে। অর্থাৎ আজ 31 শে মার্চ করোণা ভাইরাসের বিশ্বজুড়ে ও আমাদের দেশে তার অবস্থান কি?
আজ করোনার সংক্রমণ কোন জায়গায়
আপনারা জানেন বিশ্বের 200 টি দেশে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা 8, 03,010 ছাপিয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে 39025 জনের বেশি ।করোনাভাইরাস এর সবচেয়ে বেশি যে দেশটি আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত সে দেশের নাম হল ইতালি। ইতালিতে করোনা আক্রান্তের মধ্যে প্রায় 11600 মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে স্পেন 7716 জন মারা গেছেন ।তৃতীয় জায়গায় রয়েছে সং চাইনা। তাদের দেশে মৃতদের সংখ্যা 3 হাজার 305 জন যদিও তাঁর দেশ থেকেই সারা বিশ্বে এই মারণ রোগটি ছড়িয়েছে। চতুর্থ মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে আমেরিকা মারা গেছে সেখানে 3175 জন ।মৃত্যুর দিক থেকে আমেরিকা চতুর্থস্থানে থাকলেও সংক্রমনের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শিখরে রয়েছে। এই দেশে করোনা আকান্তের মোট সংখ্যা 1,64,400 প্রায়। ইতালিতে 101739 জন। স্পেনে 87 হাজার 956 জন, চীনে 81 হাজার 518 জন ,তাছাড়া ফ্রান্সে 44 হাজার 550 জন, ইরানে 41 হাজার 495 জন করনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী এই মহামারী থেকে বাঁচতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ ।ভারতে সংক্রমনের সংখ্যা বর্তমানে 1565 জন মারা গেছেন ইতিমধ্যে 47 জন । তবে সুখবর বিশ্বে 1,00,144 জন মানুষ ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
পশ্চিম বাংলায় প্রথম করোনার আগমন
collected picture from social media…….
এবার আসুন জেনে নেই এই করোনা ভাইরাস এর সঙ্গে আমাদের পশ্চিম বাংলার সম্পর্ক । বাংলায় প্রথম করোনার রোগি সেই বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক আমলার ছেলে 18 বছর বয়সী যুবক লন্ডন থেকে এই রোগের সংক্রমণ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেন। যেদিন তিনি বিদেশ থেকে আমাদের বাংলায় ফিরেছেন সেই তারিখটি ছিল 14 ই মার্চ কিন্তু 17 মার্চ তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করে তার রিপোর্ট পজিটিভ বলে পাওয়া যায়। এই কদিন 14 থেকে 17 পর্যন্ত তিনি তার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে যান ও বিভিন্ন মল ও হোটেলে ঘুরে বেড়ান। এটাই ছিল আমাদের বাংলায় প্রথম করোনার আগমন।
রাজ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের দ্বিতীয় রোগীও কিন্তু বাইরের দেশ থেকে এসেছেন তিনি 22 বছর বয়সী যুবক। পড়াশুনা সূত্রে তিনি বাহিরের দেশে ইউ কেতে ছিলেন । সেখান থেকে তিনি এই দেশে ফেরেন। 20শে মার্চ তার টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা শুরু হয় তারপর তার বাবা-মা ও তার বাড়ীর গৃহ কাজে যুক্ত এক মহিলাকে করেনটাইনে নিয়ে নেওয়া হয় । পরে তাদের ও করোনার টেস্ট রিপোর্ট পজেটিভ পাওয়া যায়।
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় করোনা ভাইরাসের রোগী সেই বিদেশ থেকে এসে আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। উত্তর 24 পরগনা হাবরা বাসিন্দা এই রোগী লন্ডন থেকে দেশে ফিরে ছিলেন।
পশ্চিমবাংলার চতুর্থ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী যদিও বিদেশে যাননি তবে তিনি এক বিদেশ থেকে করোনা আক্রান্ত দিল্লির এক যুবকের সঙ্গে হাওয়াই যাত্রা করার ফলে সংক্রমিত হন বলে জানা গেছে। তিনি দমদমের বাসিন্দা। 57 বছর বয়সী এই রোগী তার পরিবারকে নিয়ে বিলাসপুর থেকে গত 2রা মার্চ কলকাতা ফিরেছিলেন। তারপর থেকে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে একটি বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। 21 তারিখে তার টেস্ট রিপোর্ট কনফার্ম হয়। আর এভাবেই পশ্চিমবঙ্গে করো না আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিদেশ ফেরত যুবক-যুবতীদের বা মানুষের সম্পর্কে এসে বাড়তে শুরু করে দেয়।
22 শে মার্চ তিনজন ,24শে মার্চ 2 জন তাতে একজন বেলেঘাটার বাসিন্দা এজিপ্ট থেকে ও ওপর যান ইউ কে থেকে এসে ভর্তি হন। 26 শে মার্চ কলকাতা নয়াবাদ এর একজন রোগীকে ভর্তি করা হয়। 27শে মার্চ নদীয়া তেহট্টর থেকে একসঙ্গে পাঁচ জন করোনা আক্রান্তদের ভর্তি করা হয়। 28 শে মার্চ 3 জন তাতে দুইজন পূর্ব মেদিনীপুরে বাসিন্দা ও একজন কালিংপং এর বাসিন্দা মহিলা। 29 শে মার্চ আবার তিনজন করোনা সংক্রামিত দের শনাক্ত হয় ও তাদের হাসপাতালে ভর্তি নেয়া হয়,তাতে একজন হুগলির, একজন উত্তর 24 পরগনার ও আরেকজন কলকাতার বাসিন্দা । তিনি দিল্লিতে ইন্ডিয়ান আর্মির ডাক্তার।
31 শে মার্চ খবর লেখা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে করনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা 27 । শেষ রুগী উত্তর 24 পরগনার বেলঘড়িয়ার বাসিন্দা তাকে জেনিথ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কি তিনি শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ভর্তি হলেও তার শরীরে কোন ভাইরাসের সংক্রমণ টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে।
পশ্চিমবাংলায় প্রথম করোনায় মৃত্যু
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করনা আক্রান্তের মৃত্যু 23 শে মার্চ ঘটে। মারা যান দমদমের বাসিন্দা সেই 57 বছর বয়সী প্রৌঢ। তিনি 2রা মার্চ বিলাসপুর থেকে ফ্লাইটে করে পরিবার সমেত কলকাতা ফিরেছিলেন জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ নিয়ে ।কলকাতার বাই পাশে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন । 16 তারিখে তার শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হতে শুরু করে দেয়। 21 তারিখ তার টেস্ট রিপোর্টে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। আর 23 তারিখে তার মৃত্যু ঘটে যায়। এটাই ছিল বাংলার প্রথম করোনার মৃত্যু।
খবর লেখা পর্যন্ত পশ্চিম বাংলায় মোট করোনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে । দ্বিতীয় মৃত্যু 29শে মার্চ কালিম্পংয়ের সেই 45 বছরের মহিলার হয়। তিনি উত্তর বং মেডিকেল কলেজে মারা যান। তার বাড়ির সাতজনকে কোরেন্টাইনে শিলিগুড়ি সেন্টারে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাদের ব্লাড রিপোর্ট এখনো তথ্য পরিষ্কার হয়নি।
তৃতীয় মহিলার মৃত্যু হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে হয় 30 শে মার্চে। তবে মৃত্যুর পরে তার টেস্ট রিপোর্ট আসে যে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সলকিয়ার 48 বছর বয়সী এই মহিলাকে হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে 29শে মার্চ ভর্তি রেখে দেওয়া হয়।সাধারণ রুগীদের সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু হয়। তার অবস্থা বেগতিক হলে, তাকে আইসিইউতে পাঠানো হয় । 30 তারিখের রাতে তার মৃত্যু হয়। সকালের দিকে তার রিপোর্টে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়। প্রশ্ন এখানেই যখন প্রত্যেকে জানেন করোনা রোগীদের নিয়ে বেশি বাড়তি সতর্কতায় দেখাতে হবে তখন করোনার আক্রান্ত রুগী কে নিয়ে এমন ছিনি মিনি চলে কি করে?
করোনা নিয়ে রাজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ দিনদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর গ্রাফ। যতটা মানুষ আমাদের দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তার পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত হয়নি। দেশে পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিট নাথাকার দারুন এখনো হাজার হাজার সন্দেহ ভাঁজন দের পরীক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠছেনা।
এতসব দুরবস্থার মধ্যেও পজিটিভ রিপোর্ট এটাই যে আমাদের রাজ্যে 1565 জন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে 144 জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদেরকে ইতিমধ্যে 14 দিনের হোম করেনটাইনে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চলেছে স্বাস্থ্য দপ্তর বলে জানা গেছে।
বৃদ্ধি পেতে চলেছে বাংলায় করোনা
তবে বাংলায় করোনা রোগীর সংখ্যায় দ্রুত বৃদ্ধি হতে চলেছে, তা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ডাক্তারবাবুরা। তাদের দাবি পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিটের ব্যবস্থা রাজ্যে নেই খুব অবস্থা খারাপ না হলে রোগীকে আর টেস্ট করানো যাচ্ছে না তাই রাজ্যে এই মুহূর্তে হাজার হাজার করোনা সংক্রমনের সন্দেহ ভাজনদের কে রাখা হয়েছে তবে তাদের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে রাজ্য কেন্দ্র সরকারের ভূমিকা কি? কেন এতটাই অসহায় হয়েছেন হয়ে রয়েছেন ডাক্তারবাবুরা ?লকডাউন কতটা লাভ বা ক্ষতি? এই সমস্ত তথ্য জানাব আগামীকাল ।তার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে অবতক খবরে আগামীকাল :- করোনা ভাইরাস-এর খুঁটিনাটি ও abcd….. part-4