বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর :: নৈহাটির গোষ্ঠী কলহ নিয়ে লেখা আপনারা প্রথম কিস্তিতে পড়েছেন। আজ দ্বিতীয় কিস্তি। তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থা ফের নৈহাটীতে খারাপ হচ্ছে তার প্রধান কারণ এই গোষ্ঠী বাজি তা সকলেই বুঝতে পারছেন। মহিলা সভা নেত্রী দীপা মুখার্জিকে রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। একনেতা তার স্ত্রীকে মহিলা সভানেত্রী করতে উদ্যোগী হয়েছেন।তাছাড়া নৈহাটিতে দুই প্রবীণ নেতা লড়াইয়ে প্রভাব নিচুতলার উপরে পড়ছে সে এটাও পরিষ্কার।
নৈহাটীর প্রাক্তন সভাপতি বনাম বর্তমান সভাপতি এই লড়াই যদিও ভেতরে ভেতরে ছিল কিন্তু এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আর এটা নিয়ে কয়েকবার মুখ খুললেন পার্থ দাশগুপ্ত।
তিনি জানিয়েছিলেন যে তাকে দেখে বা তার উপস্থিতিতে অশোকবাবুর অসুবিধা হচ্ছে। কোন অনুষ্ঠানে মঞ্চে তাকে ডাকা হলেই বর্তমান সভাপতি ও পৌর প্রশাসক মঞ্চ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমারও তাদেখে নিজেরও খারাপ লাগছে। তিনি বলেন “আজ তিনি প্রশাসক হয়েছেন চেয়ারম্যান হয়েছেন তাতে অল্প হলেও আমার ভূমিকা কিন্তু আছে।” পার্থ বাবু পৌর প্রশাসক ও নৈহাটি তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অশোক বাবুর পদ নিয়ে একের পর এক তোপ দেগেছেন বারেবারে।
পার্থ দাসগুপ্ত ওরফে টুটুল বাবুর বিস্ফোটক হয়ে ওঠার পেছনে একের পর এক মান-অভিমানের প্রশ্ন উঠে এসেছে তদন্তে। দেখা গেছে যে গত আগস্ট মাসে যখন তৃণমূল পুনরায় পৌরবোর্ড গঠন করে তখন আয়োজিত যুবদের রক্তদান শিবিরে পার্থ দাশগুপ্তর দলকে পুনরায় সংগঠিত করার পেছনে তার অবদান কে স্বীকৃতি দিয়ে মঞ্চে বক্তব্য রেখেছিলেন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ও যুবনেতা সনৎ দে। কিন্তু সেই মঞ্চে বিধায়ক যখন পার্থ দাসগুপ্ত কে মঞ্চে ডেকে নেন তখন মঞ্চ ছেড়ে নিচে নেমে আসেন অশোক বাবু।
এছাড়া এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে নৈহাটী উৎসব এও। যতক্ষণ পার্থ দাশগুপ্ত রিসেপশনে বসে থাকতেন অশোকবাবু ওই বুথের কাছে ঘেঁষতেন না। তাছাড়া গত কয়েকদিন আগে নৈহাটি সমরেশ বসু মঞ্চে যুবশক্তির মিটিংয়ে বিধায়ক যখন পার্থবাবু কে মঞ্চে ডেকে নেন তখন মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যান অশোক চ্যাটার্জী।
এই দুই নেতার প্রকাশ্যে এই ব্যবহারও রেষারেষির ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ঐক্কেরবার্তা নৈহাটিতে একেবারে অসফল তা দেখেই বোঝা যায়। অশোক বাবুর ব্যবহারে ক্ষিপ্ত টুটুল তার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বারে বারে তোপ দেগেছেন একের পর এক।
তবে এনিয়ে অশোক বাবুর কাছে প্রশ্ন করলে তিনিও চুপ থাকেননি যদিও তিনি বলেন আমাদের দলে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই । খবর মিথ্যা, বেসলেস। এরপরেই তিনি বলেন পার্থ দাশগুপ্তর দৌলতে তো আমি আজ চেয়ারম্যান বা প্রশাসক হয়নি তার কোনো গুরুত্ব নেই কোনো অবদান নেই। 99% কর্মী সমর্থকরা তাকে একেবারে পছন্দ করেনা কারণ তিনিই লোকসভা নির্বাচনের পর দল ভাঙার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তা কাউন্সিলররা সকলে জানে। তিনি 2011 থেকে 2019 পর্যন্ত নৈহাটি রাজনীতির কোনো পিকচারে ছিলেননা। তাছাড়াও তিনি একের পর এক দাশগুপ্তকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তার দলের প্রতি আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মুখ নয় মুখোশপড়ে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেন।
খবর প্রকাশের পর দুই প্রথম পর্যায়ের নেতারা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করলেও তারা এক অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে ছাড়েননি। সব মিলিয়ে তাদের কথা অবতক খবরে প্রকাশ হতেই দলে সংগঠিত করতে দিনরাত এক করে চলা বিধায়ক এসব দেখে বসে থাকেননি। তিনি দুই নেতা ছাড়া যাদের নিয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে বৈঠক করেন। যদিও প্রত্যেকেই তাকে ভরশা দিয়ে জানান যে তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই তারা সকলেই তাঁর নেতৃত্বে কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত।
বিধায়ক পার্থবাবুর তাদের কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস হয়ে উঠেনি কারণ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন শুধু মুখে দ্বন্দ নেই বললে চলবে না। এই বার্তা সত্যিকারে যেন নৈহাটীর প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছায় যে দল একাট্টা রোয়েছে। শুধু বার্তা পৌঁছালেই হবেনা প্রাকটিকাল ভাবে মানুষের বুঝিয়ে দিতে হবে যে তাদের মধ্যে কোন কলহ নেই। তিনি দফায় দফায় কখনো পৌরসভা কোন পার্টি অফিস বা কখনো তার বাড়িতে বৈঠক করে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন।
গত দুদিন ধরে চলতে থাকে ম্যারাথন দৌড়ঝাঁপ, কাটাছেঁড়া, বিশ্লেষণ। তাছাড়া দলীয় ফাটল ভরাট করতে মাঠে নামানো হয় ব্যারাকপুরের অবজারভার ও জেলা সাধারণ সম্পাদক অধিকারীকে। অধিকারী নিজে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন ও তাদের পরিষ্কার জানান যে দলের ভেতরে থেকে দলের ক্ষতি হলে তিনি কাউকে রেয়ার করবেন না । তিনি মঙ্গলদীপে আলাদা আলাদা সকলের সাথে বৈঠক করেন।
অবশেষে বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ও সুবোধ অধিকারী যৌথ প্রয়াসে সকলকে একমঞ্চে আনা সম্ভব হয়। তারা প্রত্যেকেই সমস্ত বিরোধ ভুলে গলা জড়িয়ে ধরে নিয়ে একসঙ্গে চলার শপথ নেন। খুব দ্রুত খবরে উঠে আসা সমস্ত প্রশ্ন কে গুরুত্ব দিয়ে, ভাঙ্গা সম্পর্ককে দ্রুত রিপেয়ার করে তোলা হয়। সকলে মিলে অবতক কে গালমন্দ করেন এবং বলেন যে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চাইছে কিন্তু আমরা কিছুতেই এই সুযোগ অবতক বা বিরোধীদের দেব না।
যদিও নৈহাটীর তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই কয়েকজন অবতক খবর কে ফোন করে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেন। ধীর গলায় হুমকিও দেন। কেউ কেউ বলেন টাকার জন্য অবতক তাদের কলম বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়াও অবতক খবরের সম্পাদক কে আদালতের টেনে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন।যদিও এমন হুমকি ও আইনি নোটিশ অবতক সম্পাদক কে অর্জুন সিংহ ও সিপিএম নেতারা বহু বার দিয়েছেন।
তবে অবতক খবর কোনো হুমকির কাছে মাথা নত করেনি ও করবে না। সত্য ঘটনা তুলে ধরতে কিছুতেই পিছু পা হবে না। তবে তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক সুবোধ অধিকারী অবতক খবরকে এই খবর জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন তৃণমূলের দলের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই কোনো গোষ্ঠী কলহ নেই কিন্তু আপনারা যে খবর প্রকাশ করেছেন তাতে অল্পস্বল্প যে মনোমালিন্য কারও কারও মধ্যে মান অভিমান হয়েছিল তা দূর করার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের এই প্রতিবেদন, তাই আরেকবার অবতক খবরকে ধন্যবাদ।