বিনয় ভরদ্বাজ, অবতাক খবর, 29শে জুলাই :: বিজপুর থেকে সুবোধ অধিকারীকে ভাটপাড়া শিফ্ট করতে ছক তৈরি করেছেন তৃণমূলের ওপরতলার কিছু নেতারা বলে ইতিমধ্যে তৃণমূলে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। সুবোধ অধিকারীকে তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান করা হয়েছে । তাছাড়া তিনি জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। উল্লেখ্য 23শে মে 2019 -এর লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে প্রায় সকল তৃণমূল কাউন্সিলর নেতারা বিজেপিতে যোগদান করেন। কাঁচরাপাড়া ও হালিশহর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুদামা রায় ও অংশুমান রায় সহ কয়েক জন কাউন্সিলর ছাড়া প্রায় 40 জন কাউন্সিলর বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও শুভ্রাংশু রায়ের হাত ধরে পালটি মেরে বিজেপিতে চলে যান। পৌরবোর্ড বিজেপির দখল করে নেয় ।
এমন অবস্থায় 14 ই জুন সুবোধ অধিকারী বিজেপি ত্যাগ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে যোগদান করেন ও তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দেন যে তিনি সমগ্র ব্যারাকপুরে তৃণমুলের হারিয়ে যাওয়া ভীত ও বিজেপিতে যোগদানকারী সকল কাউন্সিলরদের পুনরুদ্ধার করবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও তাকে জইনিং মঞ্চ থেকে আশীর্বাদ দিয়ে জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে বিভূষিত করেন।
সুবোধ অধিকারী যেমন কথা দিয়েছিলেন তেমন কাজ শুরু করে দেন। সুবোধকে দলে দেখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানকারী কাউন্সিলররা দলে দলে ফের সাহস নিয়ে ফিরতে শুরু করে দেন। এক মাস হতে না হতেই কাঁচরাপাড়া হালিশহর নৈহাটি কাউন্সিলররা পুনরায় ফিরে আসেন সুবোধ-এর উপরে ভরসা রেখে।
শুধু বিজপুর নয় নৈহাটি ভাটপাড়া গারুলিয়া জগদ্দল ব্যারাকপুর আমডাঙ্গা শিবদাসপুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী যারা বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন তারা ফিরে আসেন। পুনরুদ্ধার হয় প্রায় সবকটি পৌরসভা। এই ক্ষমতা দেখে মুখ্যমন্ত্রী ও যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তার ওপর আরো দায়িত্ব দেয়ার কথা বলেন।পরে বিভিন্ন মঞ্চ থেকে সুবোধ অধিকারীকে ব্যারাকপুর তৃণমূলের অবজার্ভার হিসেবে সম্মানিত করতে দেখা যায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের।
তবে ইদানিং কয়েক মাস আগেই মুকুল রায় ও তার ছেলে শুভ্রাংশু রাযের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যাওয়াতেই সুবোধ অধিকারীকে বীজপুরের দায়িত্ব থেকে সরানোর ছক শুরু করে দিয়েছেন জেলার কিছু নেতারা।
সূত্রের খবর বিজপুর থেকে সুবোধকে সরাতে ছকের প্রথম পর্যায়ে তাকে ভাটপাড়া অবজারভার করা হয়। এখন প্রশ্ন, যখন সুবোধ সমগ্র ব্যারাকপুরের অবজারভার তখন তাকে আলাদা করে ভাটপাড়ার অবজারভার করার কি মানে হয়? এই প্রশ্নের জবাবে এক জেলা নেতা জানান ব্যারাকপুরের অবজারভার সুবোধ অধিকারীকে কখনো ঘোষিত করা হয়নি, শুধু ভাটপাড়ার অবজারভার করা হয়।
সুবোধ অধিকারীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, লিখিতভাবে তাকে কিছুই দেওয়া হয়নি শুধু তাকে কেন কোন পার্টির অবজারভারকেও এমন লিখিত দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে আমার মনে হয়। তিনি বলেন, এখন নতুন কমিটি তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে। সবকটি অবজারভার পোস্ট তুলে দিয়েছে তৃণমূল। তাই এখন এসব নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ নেই।
এখন প্রশ্ন যখন অবজারভারের পদই তুলে দেওয়া হয়েছে তখন সুবোধ অধিকারী বীজপুরের তৃণমূল চেয়ারম্যান ও জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে ছাড়া আর কোন পদে নেই কিন্তু জেলার কিছু নেতারা ফের সুবোধকে ভাটপাড়ার ইনচার্জ বলে তাকে সেখানে অর্জুন সিং-এর বিরুদ্ধে জড়িয়ে রাখতে চান।
সূত্র জানাচ্ছে যে সুবোধ অধিকারীকে যে কোন শর্তে বীজপুরের দায়িত্ব থেকে সরাতে তাকে ভাটপাড়া ফুলটাইম এনগেজ করে রাখতে চাইছেন জেলার কয়েকজন নেতা। তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যেকোনোভাবে সুবোধ অধিকারীকে ভাটপাড়ার দায়িত্ব দেওয়ার নাম করে ভিড়িয়ে রাখতে মরিয়া তারা।
সুবোধ অধিকারীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একজন অনুশাসিত পার্টিকর্মী তিনি। মুখ্যমন্ত্রী তার উপরে বিশ্বাস রেখেছেন। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রীকে ভরসা দিয়েছেন। তাই তাকে পার্টি যে দায়িত্ব দিক না কেন সবই গ্রহণ করবেন ও তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করবেন । তিনি বলেন, বীজপুর থেকে তাকে সরানোর কি কোনো ঘোষণা করা হয়েছে? তাকে পার্টি অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে। তাই দলের সৈনিক হিসেবে তিনি , যে দায়িত্ব পালন করতে দল দিক না কেন, ভবিষ্যতে সব দায়িত্ব পালন করবেন।
সুবোধ অধিকারী যাই বলুন না কেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সুবোধ রাজনীতির তেমন নয় ছয় বোঝেন না। তাই তিনি দূর পর্যন্ত দেখতে পারছেননা। ভাটপাড়া অর্জুন- এর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলার কিছু নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছেন। যতদিন যাবে ভাটপাড়া সংঘর্ষ বাড়বে। আর সুবোধকে বীজপুর ভুলে ভাটপাড়ায় আঁকড়ে পড়ে থাকতে হবে তার নিজস্ব মান সম্মান রক্ষার স্বার্থে। তাকে সুকৌশলে বিজপুর থেকে ভাটপাড়া শিফট করে ফেলার চেষ্টা চলছে।