অবতক খবর , রাজীব মুখার্জী, হাওড়া :: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নবান্ন থেকে জারি হওয়া সার্কুলার অনুযায়ী হাওড়া টি এল জয়সওয়াল হাসপাতাল কে কোভিড হাসপাতালে বদলে ফেলা হয়েছিল। কোরোনা আক্রান্ত রোগীদের এখানে পর্যাপ্ত পরিষেবার ব্যবস্থা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু এবারে সেই হাসপাতালের অভ্যন্তরের চরম অব্যবস্থার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠছে।
মৌমিতা ঘোষ নামে করোনা আক্রান্ত রোগী ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেছেন, ওই হাসপাতালে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। সকাল থেকে ডাক্তার নার্স কারোর দেখা নেই। তিনি আরো অভিযোগ করেন তার সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। নিশ্বাস নিতে গেলে বুকে ব্যথা করছে। অথচ সেই কষ্ট হওয়ার কথা তিনি বারবার জানাচ্ছেন। কিন্তু কেউ আসছে না। শুধু হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে তিনি ঠিক আছেন।
তার আরো অভিযোগ হাসপাতালে দেওয়া খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ। পচে যাওয়া ডিম খেতে দেওয়া হচ্ছে। খাবার ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না। গত চার দিন অপেক্ষার পরে আজ তিনি এই ভিডিও বার্তায় হাসপাতালের ভেতরের চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি টি এল হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার জন্য ভর্তি বেশ কয়েকজন রোগী ইতিমধ্যেই হাসপাতালের ভিতরে অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভিডিও বার্তায় সোচ্চার হন।
তারা স্পষ্ট অভিযোগ করেন তারা কোভিড পরীক্ষার জন্য ভর্তি হলেও কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাদের আরো অভিযোগ বাথরুমে জল আসছে না। সারাদিনে ১ বার ডাক্তার আসেন দূর থেকে দেখে চলে যান।নার্সদের ব্যবহারে মনে হয় যেন তারা তাদের দয়া করছেন। একটা ঘরের মধ্যে অনেক রোগীকে রাখা হয়েছে। সেখানে বেড টু বেডের মাঝে দূরত্ব খুবই কম। তারপরেও নতুন রোগীকে ওই ঘরেই আবার আনা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।
একটা রুমে ২০-২৫ জন করে রোগী রয়েছে। তাদের আশঙ্কা কেউ কোভিড পজিটিভ না থাকলেও এখানে থেকে সেও আক্রান্ত হয়ে যাবে। তারা এই বিষয়ে সুপারকে জানান এবং রোগীদের দাবি তিনি সম্পূর্ণ ভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যান ও তাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরকেই করে নিতে বলেন। একজন বয়স্কা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকেও ওই ঘরেই রাখার অভিযোগ উঠেছে। ওখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের দাবি এভাবে চলতে থাকলে তারা এই অব্যবস্থার দরুন মারা যাবেন।
যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাসপাতালের সুপার দাবি করেন তার হাসপাতালে কোনো অব্যবস্থা নেই। চিকিৎসা সঠিক ভাবেই হচ্ছে। খাবারের মান যথেষ্ট ভালো। তার আরো দাবি এখানে ভর্তি হওয়া রোগী উদেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বদমায়েশি করে এইসব প্রচার করছেন। সরকারি কোভিড গাইডলাইন মেনেই চিকিৎসা চলছে।
হাপাতালের অব্যবস্থার খবর পেয়ে ওই হাসপাতালে যান রাজ্যের ক্রীড়াপ্রতিমন্ত্রী ও হাওড়া সদর তৃণমূলের সভাপতি লক্ষ্মীরতন শুক্লা। তিনি রোগীদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ও প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের সব সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করবেন বলেই জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগে জয়সওয়াল হাসপাতালের থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত সত্যবালা আই ডি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। সেখানে একজন রোগী কোভিড আক্রান্ত জেনেও তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই সে শ্বাসকষ্টে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।