আমাদের কাঁচরাপাড়ার অনতিদূরের শহর শ্যামনগর। গঙ্গার তীর। জলপ্রবাহ বয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা করতেন প্রদীপ ডাক্তার। প্রদীপ ভট্টাচার্য। মানুষের ডাক্তার, গরিবের ডাক্তার নামে তিনি পরিচিত ছিলেন।
হায়!গরিব, হায়! চিকিৎসা। সেই গরিবের ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন সোমবার ১০ আগস্ট’২০।
তাঁর শবযাত্রার মিছিল প্রমাণ করে দিয়েছে জনপ্রিয়তা কতদূর যেতে পারে! করোনা উপেক্ষা করে অসংখ্য মানুষ যোগ দিয়েছে সেই অন্তিমযাত্রায়…
এখনো এই দুঃসময়ে মানুষ আছে হে, মানুষ আছে!

প্রদীপ জ্বলে
তমাল সাহা

তুমি কি প্রদীপ দেখেছো?
নিশ্চিত দেখেছ দীপাবলি।
জ্বলমান প্রদীপ দেখেছো
নেভাও দেখেছো।
তেল নিঃশেষ, পলতের
মাথায় জমেছে কালি।

এটাই তো প্রদীপের ধর্ম।
আলো জ্বেলে দেবে
যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ,
তারপর ধীরে ধীরে ম্রিয়মাণ।

বাড়ির পাশে শ্যামনগর
বয়ে যায় গঙ্গার প্রবাহ…
সেখানে তৈরি করেছে সে
পরিষেবার আবহ।
তার তো ছোট্ট চেম্বার—
অসংখ্য গরিবগুর্বোর ভিড়।
তার কথা কি রাখবে মনে
বহমান গঙ্গার তীর!

সেখানেও প্রদীপ ছিল একটি
করোনায় নিভে গেল দীপটি।
প্রদীপ ছিল নাকি মানুষের ডাক্তার
উপার্জন ছিল কি তার পেশা?
রোগি নিরাময় করাই ছিল
তার প্রিয় নেশা।

রিকসাওয়ালা বলে,
“সত্তর টাকা নিন, ডাক্তার বাবু!
লকডাউন এখন খুবই কম রোজগার।
আর দুদিন পরে রিক্সা চালানোই হবে বেকার।”
“আরে, যা তো যা!
বাজার করে বাড়ি চলে যা সোজা”।

“আরে প্রদীপ! চেম্বারটা
একটু ঝাঁ চকচকে করো”
“কি যে বলেন?
গরীব মানুষরা আসবে নাকি!
দেখেই হবে ভয়ে জড়োসড়ো”।

প্রদীপকে বাঁচানো দরকার–
সে তো মানুষের ডাক্তার।
তার জন্য পথে নেমেছিল মানুষ,
উঠেছিল পাঁচ লক্ষ টাকা।
প্রদীপ চলে গেল
এখন শ্যামনগর শূন্য ফাঁকা।

প্রতিবছর আসে দীপাবলি
প্রদীপ তো জ্বলে।
এর জন্যই তো সূর্যকে
পৃথিবীর প্রদক্ষিণ চলে।