বিনয় ভরদ্বাজ, অবতাক খবর, 26শে সেপ্টেম্বর :: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সব কটি বিধানসভা দখলের লড়াইয়ে নেমে পড়েছে বিজেপি। তবে শিল্পাঞ্চলে যে সাতটি বিধানসভার মধ্যে থেকে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেটি হচ্ছে নৈহাটি বিধানসভা। আর এবার নৈহাটি বিধানসভা দখল করতে মরিয়া বিজেপি। তাই এটিকে মাথায় রেখে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠন করেছে বিজেপি। তাদের 21 জনের জেলা কমিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নৈহাটি দেওয়া হয়েছে তা থেকেই এই তথ্য পরিষ্কারভাবে উঠে আসছে।

উল্লেখ্য ব্যারাকপুর লোকসভা অঞ্চল তৃণমূল সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঠিক ততটাই সমানভাবে বিজেপির কাছেও এই কেন্দ্রটি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তাবড় তাবড় মন্ত্রী বিধায়করা বহু চেষ্টা করেও ব্যারাকপুর লোকসভা সিট জিততে পারেনি। বিজেপি নেতা অর্জুন সিং এর কাছে পরাজিত হতে হয়েছে দীনেশ ত্রিবেদী। ভোটের রেজাল্ট পর থেকে রাতারাতি দলবদল করেন তৃণমূলের কাউন্সিলররা। একে একে করে প্রায় সবকটি পৌরসভা ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। মুহুর্তের মধ্যে ধরাশায়ী হয়ে যায় তৃণমূলের সংগঠন।

যদিও মুখ্যমন্ত্রী ২-৩ মাসের মধ্যেই হারিয়ে যাওয়া পৌরসভা বিজেপির হাত থেকে, সুবোধ অধিকারী কে দায়িত্ব দিয়ে, ফের পুনরুদ্ধার করে নেন। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সব কটি পৌরসভা অর্থাৎ কাঁচরাপাড়া, নৈহাটি, ভাটপাড়া, নোয়াপাড়া, ব্যারাকপুর ও টিটাগর পৌরসভায় পুনরায় বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। একে একে করে বেশিরভাগ কাউন্সিলর নেতারা ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন।

শুধু তাই নয় ভাটপাড়া যে অর্জুনের সবচেয়ে বড় গড, ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল, সেই ভাটপাড়া পৌরসভা অর্জুনপন্থী নেতা কাউন্সিলরদের তৃণমূলে যোগদান করিয়ে দখল করে নেয় তৃণমূল।

তবে সুবোধ অধিকারীর দাপট বাহুবল কে কাজে ব্যবহার করে উদ্ধার করতে পারলেও এর পেছনে আসল খেলোয়ার কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক পার্থও ভৌমিকই তা সকলের কাছে পরিষ্কার। তাই এবার বিজেপি ব্যারাকপুর সাতটি বিধানসভার মধ্যে প্রধান টার্গেট নৈহাটি কে করেছে।

বিজেপি যে 21 জনের ব্যারাকপুর জেলা সাংগঠনিক কমিটি তৈরি করেছে তাতে নৈহাটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তারা। 21 জন জেলা কমিটির মধ্যে ছজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হচ্ছেন নৈহাটির বাসিন্দা ও নেতা। বিজেপি জে 6 জন জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হচ্ছেন তারা হলেন গণেশ দাস, বিমলকৃষ্ণ ভাওয়াল, স্মৃতিরেখা হালদার, বিনোদ গোন্ড, মনোজ সিংহ ও তনময় আইচ।

বিজেপি নেতাদের দাবি পার্থ ভৌমিক এলাকায় তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি নেই। ফাঁকা হয়ে গেছে তৃণমূল। তাই মানুষকে বোকা বানাতে তারা প্রতিদিন দেখাচ্ছে যে নৈহাটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে হাজার হাজার মানুষ, বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগদান করছেন তবে এটি নাটক মাত্র।

বিজেপি নেতা ও জেলা কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট গনেশ দাস জানান রোজ-রোজ হাজার-হাজার বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগদান করছেন, তার মানে বিধায়ক নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে তৃণমূলের নিজের কোনো লোক নেই। যা আছে সব টাই বিজেপির লোক। গনেশ দাস আরো বলেন বিধায়ক,নৈহাটি মানুষকে বোকা ভাবছেন উনি মনে করছেন যে রোজ রোজ তৃণমূলে যোগদান দেখালে মনে হয় মানুষ তৃণমূলে চলে যাবে কিন্তু তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। তিনি বেশিদিন মানুষকে ভাওতা দিয়ে বোকা বানিয়ে রাখতে পারবেন না।

জেলা সম্পাদক মনোজ সিংহ জানান যে নৈহাটি তৃণমূল মানুষকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে বিজেপি থেকে দূরে রাখতে চাইছে। যারা তৃণমূলে যোগদান করছেন না তাদের ভুয়া মামলা দিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ, বিধায়ক পার্থও ভৌমিক এর, গোলামী করছে কিন্তু জোর করে কতদিন মানুষকে তিনি আটকে রাখতে পারবেন? নির্বাচনের সময় ক্ষমতা আর তৃণমূলের দখলে থাকবে না তখন কি করবেন উনি?

মনোজ সিং জানান এবার নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র আমরা তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেবই নেব । তিনি আরও জানান নৈহাটীর মানুষ পার্থ ভৌমিক এর সঙ্গে আর নেই। এখন পার্থবাবু সঙ্গে তার পুরনো তৃণমূল কর্মীরাও নেই। পার্থ বাবু তাদের ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলেছেন।তাই এবার তৃণমূল কর্মীদের তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন প্রকৃত সম্মান পেতে, প্রকৃত রাজনীতি করতে, আসুন পার্থ ভৌমিক এর সঙ্গ ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করুন।